সুনামগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে জোরেশোরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত জেলায় আবাদ করা বোরো ধানের ২০ শতাংশ কাটা শেষ হয়েছে। এদিকে নগদ টাকার প্রয়োজনে কৃষকরা গোলায় ধান তোলার পরিবর্তে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বিষয়ে জেলা চালকল মালিক (মিলার) ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর। এ সময় তিনি বলেন, সরকার কৃষকের উৎপাদিত ধানের উপযুক্ত দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। এবার ধান কেনার তারিখও এগিয়ে আনা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল একযোগে সব ক্রয়কেন্দ্রে ধান কেনা শুরু হবে।
জেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা জানান, সুনামগঞ্জে হাওর ও হাওর এলাকার বাইরে সবমিলিয়ে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। যা 
থেকে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৮৪ টন ধান উৎপাদন হবে। ফসল গোলায় তোলা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ৯ লাখ ২১ হাজার ৪১৩ টন চাল উৎপাদন হতে পারে।  ২৪ এপ্রিল থেকে ৩৬ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে সরকার, প্রতি মণের দাম পড়বে এক হাজার ৪৪০ টাকা। এ ছাড়াও ৪৯ টাকা কেজি দরে কেনা হবে চাল।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ধানের মণ এক হাজার ৪৪০ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে ধানের দাম এক হাজার টাকারও নিচে। ধান কাটার মৌসুমের শুরুতে কৃষকের হাতে টাকা থাকে না, অথচ এ সময় তাদের টাকার জরুরি প্রয়োজন হয়। অর্থের প্রয়োজনে সাড়ে ৯০০ টাকা মণেও ধান বিক্রি করছেন কৃষক।
সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের রাজাপুরের কৃষক আব্দুস ছত্তার জানান, টাকার প্রয়োজনে ফড়িয়াদের কাছে আগাম ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। ফড়িয়ারা হীরা জাতের ধান প্রতি মণ ৯০০ টাকার বেশি কাউকেই দিচ্ছেন না। যারা ধান দিরাইয়ের আড়তে নিয়ে যাচ্ছে, তারা প্রতি মণ ৯৩০ টাকা করে পাচ্ছেন।
মধ্যনগর ধান আড়তদার সমিতির সভাপতি জহিরুল হক জানান, বৃহস্পতিবার তাদের সব আড়তদার মিলে ১৫-২০ হাজার মণ ধান কিনেছেন। ২৮ বা ৮৮ জাতের ধান এক হাজার ৭০ থেকে এক হাজার ৮০ টাকা ও শুকনো হলে এক হাজার ১০০ টাকা মণ কিনেছেন। সরকার এক হাজার ৪৪০ টাকা মণ ধান কেনা শুরু করলে, ধানের দাম আরও বেড়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। অর্থাৎ কৃষকরা আরও বেশি দামে ধান বিক্রি করতে পারবেন।
জেলা জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সভাপতি আনিসুল হক বলেন, সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজার কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে। সরকারের নির্ধারণ করা ধানের দাম প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। কৃষকরা যেন ধান বিক্রিকালে ফড়িয়া বা মিলারকে বলতে পারে সরকার এক হাজার ৪৪০ টাকা মণ ধানের দাম নির্ধারণ করেছে, সেই অনুপাতে তাদের দাম দিতে হবে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম বিষয়ে মিলার ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.

আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের সভায় জানানো হয়, সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ১৪ হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সমর কুমার পালের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহম্মেদ, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা, তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম, শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মফিজুর রহমান, মিল মালিক সমিতির সভাপতি জিয়াউল হক, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা এস এম সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ স ন মগঞ জ কর মকর ত উপজ ল সরক র ক ষকর

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ