পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলা বিএনপির সদ্য নির্বাচিত সভাপতি আব্দুল মান্নানকে আওয়ামী লীগ নেতা ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এমন অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। দলীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ ও শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করার অভিযোগে তুলে তাকে শোকজ করে জেলা বিএনপি। বুধবার দুপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু ও সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ সাক্ষরিত শোকজের চিঠি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, আপনি বোদা উপজেলা বিএনপির নব-গঠিত কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বিগত ফ্যাসিস্ট দোসরদের দ্বারা আপনাকে অভিনন্দিত করার সম্মিলতি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় দলের ভাবমূর্তি ভীষণভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে, যা দলীয় শৃঙ্খলার পরিপন্থি। এহেন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য কেন আপনার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা চিঠি পাওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।

জানা গেছে, গত ১৯ এপ্রিল বোদা উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হন আব্দুল মান্নান। ২১ এপ্রিল রাতে বোদা পৌরসভার বন্ধুদের সংগঠন বোদা ফ্রেন্ডস ক্লাবে সংগঠনটির সদস্য হিসেবে তাকে ফুলেল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সাবুল বিএনপি নেতা মান্নাকে ফুলের তোড়া দিচ্ছেন এমন একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবির সূত্র ধরে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ফরহাদ হোসেন আজাদ বলেন, ‘আমরা তাকে নোটিশ পাঠিয়েছি।’

বোদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বোদা ফ্রেন্ডস ক্লাবে আমাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এ নিয়ে আমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চিঠি পেয়েছি। আমি জবাব দেব।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ আওয় ম ল গ ব এনপ র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য

কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।

মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।

দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।

লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।

দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।

জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।

রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।

দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ