এ মৌসুমে এল ক্লাসিকো মানেই বার্সেলোনার দাপট। গতকাল রাতের আগে দুইবার মুখোমুখি হয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে একপেশে হারিয়েছে কাতালানরা। অক্টোবরে লা লিগায় বার্ন্যাবুতে ৪-০ গোলের জয়ে শুরু, এরপর জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপের ফাইনালে ৫-২ গোলের বড় ব্যবধানে আরও একবার উড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষকে।

পূর্বের সাফল্য থেকেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে গতকাল রাতে কোপা দেল রে’র ফাইনালেও নেমেছিল বার্সা। সেভিয়ার স্তাদিও অলিম্পিকোতে রিয়ালকে ৩-২ গোলে হারিয়ে টুর্নামেন্টের রেকর্ড ৩২তম শিরোপা নিজেদের করে নেয় হ্যান্সি ফ্লিকের দল।  

ম্যাচের শুরুতে পেদ্রির গোলে এগিয়ে গেলেও পরে ২-১ গোলে পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। তবে হাল ছাড়েনি কাতালানরা। নির্ধারিত সময়ের শেষে ফেরান তোরেসের গোলে সমতা ফেরায় তারা। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে জুলস কুন্দের নাটকীয় গোলে মাদ্রিদকে চূড়ান্তভাবে হারায় বার্সা।

মাঝে পিছিয়ে পড়লেও এ ম্যাচে বার্সার আত্মবিশ্বাস কতটা ছিল, সেটা উঠে এসেছে লামিন ইয়ামালের কথাতেই। স্প্যানিশ এ রাইট উইঙ্গার জানিয়েছেন, মাদ্রিদ দুই গোলে এগিয়ে গেলেও জিততে পারত না, এমনটা বিশ্বাস ছিল তার। তিনি বলেন, ‘ম্যাচের আগে হোটেলে রোনাল্ড আরাউহোকে বলেছিলাম, “তারা (রেয়াল মাদ্রিদ) এক গোল দিলেও সমস্যা নেই। তারা যদি দুই গোল করে? তাতেও সমস্যা নেই। এ বছর তারা আমাদের থামাতে পারবে না। আমরা সেটা দেখিয়েছি।’

মাত্র ১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল তার কথা মাঠেও প্রমাণ করেছেন। পেদ্রির গোলের অ্যাসিস্টের পাশাপাশি ফেরান তোরেসের সমতাসূচক গোলেও মূল ভূমিকা ছিল এই তরুণ তারকার। মাঝমাঠ থেকে নিখুঁত পাসে ম্যাচটিকে অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে যাওয়ার পথ তৈরি করেন তিনি।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ