বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দিতে নিষেধ করেছিলেন। সাকিব পরামর্শটি গ্রহণ করেননি বলে এখন বিপদে পড়েছেন। আজ ঢাকায় বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করা তামিম ইকবাল। হাফিজউদ্দিন তামিমকেও রাজনীতির বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন হাফিজ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া সাকিব গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশ ফিরতে পারছেন না।

নির্বাচনের আগে সাকিব তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন জানিয়ে হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘সাকিব আল হাসান আমার বাসায় এসেছিল একদিন। আমার পরিচিত সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা তাকে নিয়ে এসেছিল। আমার সঙ্গে পরিচয় ছিল না। এমনিই খেলা দেখেছি টেলিভিশনে। বলল আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায়। অ্যাডভাইস নিতে চায়। বললাম, আমি তো বিরোধী দল করি। সে তো বিরোধী দলে যোগ দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আসবে না। পরে আসলো।  তাকে অনেক কথাবার্তা বললাম। তাকে একটা উপদেশ দিয়েছি, যেটি সে গ্রহণ না করে বিপদে পড়েছে। তাকে আমি বলেছি ‘‘যা কর না কর, আওয়ামী লীগ কোনো দিন করবা না।’’ সে এটা শুনে একটু বিমর্ষ হলো। তার ধারণা আওয়ামী লীগে গেলে মন্ত্রী হবে, এটা-ওটা হবে। এমপি তো হবেই।’

আশির দশকে রাজনীতিতে নামার আগে হাফিজউদ্দিন ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড়। নিজের খেলোয়াড়ি জীবনের কথা সাকিবকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন জানিয়ে হাফিজ বলেন, ‘তাকে বললাম, দেখ আমিও তোমার মতো খেলোয়াড় ছিলাম। আমারও পরিচিতি ছিল। একসময় পাকিস্তান জাতীয় দলে আমি একাই বাঙালি ছিলাম। অনেক সুযোগ-সুবিধা নিতে পারতাম। কিন্তু খেলোয়াড়ি অবস্থায়, জাতীয় দলে থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে যোগদান করা আমার ঠিক মনঃপূত হচ্ছে না।’

রাজনীতিতে যোগ না দিলে সাকিব এখন বেশ ভালো থাকতেন বলে মনে করেন হাফিজ, ‘(বলেছিলাম) তুমি এখন রাজনীতিতে যেয়ো না। আর গেলে এই দলটির (আওয়ামী লীগ) বেশি দিন আর আয়ু নাই। সে চুপচাপ করে পরে চলে গেল। যদি সে আমার কথা শুনত, এভাবে রাজনীতিতে না যেত, নির্বাচনে না যেত, আজ অনেক সম্মানের সঙ্গে ঢাকার রাজপথে বিচরণ করতে পারত। এখন তো তার বাড়ি আসাই মুশকিল হবে।’

সাকিবের উদাহরণ টেনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত তামিমকে রাজনীতি বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শও দিয়েছেন বিএনপির এই নেতা, ‘এখানে যারা ক্রিকেটের, ফুটবলের, হকির খেলোয়াড় আছে, বিশেষ করে তামিম ইকবালকে বলব, তার যথেষ্ট নাম আছে। তার ব্যাটিং আমার খুব পছন্দ। এ রকম অ্যাগ্রেসিভ খেলোয়াড় এখন দেখাই যায় না। সুতরাং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাকে হ্যান্ডল করতে পারে নাই। যার জন্য মানসিকভাবে খেলার আগে বিড়ম্বিত ছিল। সময়ের আগেই হয়তো কোনো কোনো ফরম্যাট থেকে অবসর নিয়েছে।’

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আওয়ামী লীগের নেতিবাচক প্রভাবের প্রসঙ্গে হাফিজ বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গনের জন্য আমাদের রাজনীতিবিদরা তেমন কিছু করেন নাই আজ অবদি। অনেক কিছুই করানোর রয়েছে। এর একটা প্রধান কারণ হলো এ দেশের একটি পুরোনো রাজনীতিক দল আওয়ামী লীগ, তারা এ দেশের খেলাধুলার অতীতের সকল ট্রাডিশনকে পাল্টে দিয়েছেন। ক্রীড়াসুলভ মনোবৃত্তি এদের মধ্যে একেবারেই দেখা যায় না। এরা অনেক ক্রীড়াবিদকেও বিপদে ফেলেছে।’

রাজনীতি ও ক্রীড়াঙ্গনের পার্থক্য তুলে ধরে হাফিজ বলেন, ‘ক্রীড়াঙ্গন একটি অন্য ধরনের অঙ্গন। রাজনীতি থেকে অনেক দূরের অঙ্গন। ক্রীড়াঙ্গনে যারা রথী মহারথী, যারা সময় দেন, তাদের হৃদয় অন্যরকম, ব্যঞ্জনা অন্যরকম। মনমানসিকতা অন্যরকম। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ক্রীড়াবিদদের মনমানসিকতার অনেক তফাত রয়েছে। আমি কখনোই চিন্তা করি নাই রাজনীতি করব।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ফ জউদ দ ন র জন ত ত আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।

শ্রমবাজারে দুর্বলতা

পাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।

মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।

ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।

পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নীতিসুদ কী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।

কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।

নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।

সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ