এগিয়ে চলেছে সংগীত, সমাজ এখনো পেছনে
Published: 10th, May 2025 GMT
সংগীতপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ। তাঁর একটি গানে পাওয়া যাচ্ছে, ‘গান আমার যায় ভেসে যায়, দে তারে বিদায়’। গানই যেখানে ভেসে চলেছে, সেখানে ‘সংগীতচিন্তার’ অবস্থা অথবা আমাদের ক্ষুদ্র নিবন্ধের কতটুকু আর অবস্থান। সবই যেন ভেসে যাচ্ছে, অথবা ভেস্তে যাচ্ছে। কিন্তু ‘নেতি’ নয়, আমরা এগিয়ে চলেছি, এ ভাবটা বজায় রাখতে এই নিবন্ধ।
রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের গ্রামে-বন্দরে দেখতেন তাঁর গান কূল পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে গলায় তুলে নেয়নি শুধু, অন্তরে স্থান দিয়েছে। রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন চলছে শুধু পঁচিশে বৈশাখ বা বাইশে শ্রাবণে নয়, সারা বছরই। মফস্বল শহরগুলোতেও। সংগীতপ্রেমিকদের উদ্বুদ্ধ করেছে বৈকি।
মূল সংগীতের ক্ষেত্রে যদি এমনটি হতো, তাহলে আক্ষেপের কারণ থাকত না। পরিকল্পনার অভাব ও সংস্কৃতি-পরিকল্পকদের কলকে না পাওয়া। পরিকল্পনাই নেই, কাজও শুরু হয়নি। হয়েছে খানিকটা বিচ্ছিন্নভাবে। বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, সংগীত মহাবিদ্যালয়, অন্যান্য বিদ্যায়তন আছে। যা নেই তা হলো অর্থের ছাড়। সবই খুঁড়িয়ে। শিক্ষার্থী এসেছে; কী তাদের কণ্ঠ, কী প্রক্ষেপ, কী বিপুল সম্ভাবনা! নতুন কুঁড়িরা ফুটে উঠেছে, পদ্মকুঁড়ি দল মেলতে পারেনি। নেই ভালো ওস্তাদ, রাগ-রাগিণীরা কেঁদে মরেছে। ৫০ বছরে কজন আর শাস্ত্রীয় সংগীতের শিল্পী বের হয়েছে! সংগীতের পথ তাই অবরুদ্ধ।
২.
কেন? নিয়াজ মুহাম্মদ চৌধুরী? তাঁর ছাত্রছাত্রী? ধরা যাক, শখানেক? সেখান থেকে ১০ জন বেরিয়ে আসতে পারত না? পারত। কিন্তু উচ্চাঙ্গসংগীত—রেডিওতে, টেলিভিশনে, শিল্পকলায়, মাহফিলে—কোথাও স্থান পায়নি পরিকল্পকদের অনীহায়। সংগীত যে আসলে উচ্চাঙ্গসংগীত, সেই বোধটুকুই জাগ্রত হয়নি। যাঁরা ভারতে গান শিখতে গিয়েছিলেন তানপুরা হাতে, তাঁরা ফিরে এসে তানপুরা ফেলে গিটার বা ব্যাঞ্জো ধরেছেন। বেঁচে থাকতে হবে তো! অথচ নিয়াজের কণ্ঠ মেহেদি হাসানের চেয়েও এক ধাপ ভালো, সমগ্র ভারতেও তাঁর মতো কণ্ঠ আমি এখনো খুঁজে পাই না। কত কষ্টে, কত ধৈর্যের সঙ্গে এখনো শিল্পী তাঁর তানপুরায় সুর বাঁধেন, তা আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি। শিল্পীর স্ত্রী, নিজেও একজন বড় ওস্তাদের মেয়ে। সলজ্জ কণ্ঠে বললেন, ‘আমি ওস্তাদের মেয়ে (ওস্তাদ জাকির হোসেন), ওস্তাদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, দোয়া করবেন যেন ছেলেকে সংগীতের তালিম দিয়ে যেতে পারি।’ একটি সকাল তাঁদের বাড়িতে কাটিয়ে এসেছি। খুব ভালো লাগল। কেন, সেটা বলছি। নিয়াজের ছেলের নাম ফৈয়াজ। কী সুন্দর কণ্ঠ! কী সুন্দর দেখতে! যখন তানপুরা বেঁধে ‘আ’ করল, ছোট ঘরটি যেন গমগম করে উঠল। মনে পড়ল পুরানা পল্টনের ‘হিরামন মঞ্জিলে’ যখন ওস্তাদেরা আসতেন, সেটা গুল মুহাম্মদ খানই হন অথবা বারীণ মুজমদার অথবা নাজাকাত-সালামাত হন, এমনি করে সুরে ভরে যেত ঘরটি। সুরে না ভরলে বৃথা সব আয়োজন।
ফৈয়াজ বলল, ‘আমি গান গাইতে ভালোবাসি। আমি নিয়াজ মুহাম্মদ চৌধুরীকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু সমাজ তো তা দেবে না।’
নিয়াজ বললেন, ‘আটটি টিভি চ্যানেল আছে। সবার জানা, ক্লাসিক্যাল গানই আসল বস্তু। টাকা ছাড় দেবে না। ইন্টারভিউ নিতে চায়। তারপর... আমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে। এই তো?’
মুস্তাফা জামান আব্বাসীউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রব ন দ
এছাড়াও পড়ুন:
এবার বিজয়নগর সীমান্তে ‘ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা’, বিজিবি–জনতার তৎপরতায় পিছু হটল বিএসএফ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা কিছু মানুষকে বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানোর চেষ্টা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যদের সতর্ক অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেন বিএসএফের সদস্যরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের নলগড়িয়া ও নোয়াবাদী সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের (সরাইল) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাতভর সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। এমন পরিস্থিতিতে সীমান্তে টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
৪ থেকে ১৫ মে পর্যন্ত বাংলাদেশের পাঁচ জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ৩১৮ জনকে ঠেলে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৪ মে মেহেরপুর সীমান্ত দিয়ে ১০ জনকে, ৭ মে খাগড়াছড়ি ও সাতক্ষীরা দিয়ে যথাক্রমে ৬৬ ও ৭৮, মৌলভীবাজার সীমান্ত দিয়ে (৭, ৮, ১৪ ও ১৫ মে) ১৪৮ এবং ১৪ মে সিলেট সীমান্ত দিয়ে ১৬ জনকে ঠেলে পাঠানো হয়।
আরও পড়ুনঅনতিবিলম্বে সীমান্তে ‘পুশ ইন’ বন্ধ চায় ঢাকা, দিল্লিকে চিঠি ১৩ মে ২০২৫স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার দিকে বিজয়নগর উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে ঠেলে পাঠানোর জন্য কিছু মানুষকে জড়ো করে বিএসএফ। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে বিষয়টি জানতে পেরে সতর্ক অবস্থান নেয় বিজিবি। পাশাপাশি মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের সিঙ্গারবিল, বিষ্ণুপুর, নলঘরিয়া, মেরাসানী, নোয়াবাদী সীমান্তে শত শত লোক নিয়ে জড়ো হন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে লোকজনকে জড়ো হওয়ার আহ্বান জানান। স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি বেড়ে গেলে পিছু হটে বিএসএফ।
বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে উল্লেখ করে সিঙ্গারবিল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘রাত দুইটার দিকে বিজিবির মাধ্যমে খবর পেয়ে এলাকার মানুষকে সীমান্তে যেতে বলি। লোকজন জড়ো হলে বিএসএফ সরে যায়।’
আরেক ইউপি সদস্য মামুন চৌধুরী বলেন, ‘বিএসএফের সদস্যরা সীমান্ত দিয়ে পুশইনের চেষ্টা করলে এলাকায় মাইকিং করা হয়। বিজিবির সহযোগিতায় লোকজন সীমান্তে গিয়ে জড়ো হয়। এরপরই তারা পিছু হটতে বাধ্য হয়। তবে কতজনকে সীমান্তে আনা হয়েছিল, সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।’ তবে এই সংখ্যা কয়েক শ হবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও বিজিবি সদস্যরা।
বিজিবি-২৫ ব্যাটালিয়নের আওতায় ৩১ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা পড়েছে। ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ প্রথম আলোকে আজ শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে কিছু পুশইন করার চেষ্টা করা হবে বলে আমরা জানতে পারি। বৃহস্পতিবার রাত থেকে সীমান্তে ২৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ানের আওতাধীন বিজিবির সদস্যদের টহল জোরদার করা হয় ও সতর্ক অবস্থান নেওয়া হয়। রাত একটা থেকে স্থানীয় জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিজিবির সদস্যদের সঙ্গে জড়ো হন। তবে সীমান্ত দিয়ে কোনো পুশইন করার ঘটনা ঘটেনি। কোনো আপত্তিকর বা বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেনি।’
অনেক গণমাধ্যমে গোলাগুলি হয়েছে বলে সংবাদ প্রচার করা হলেও এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি উল্লেখ করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাব্বার আহাম্মেদ আরও বলেন, ‘যেহেতু কোনো পুশইনের ঘটনা ঘটেনি, তাই কতজনকে পুশইন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তা বলা মুশকিল। তবে পুশইন করার চেষ্টা হয়েছিল।’
বিজয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাধনা ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সীমান্ত দিয়ে পুশইন করার চেষ্টা হয়েছিল। বিজিবির সঙ্গে স্থানীয়রা একত্র হয়ে প্রতিহত করায় বিএসএফের চেষ্টা সফল হয়নি। আমরা সবাই এখনো সতর্ক অবস্থায় আছি।’
আরও পড়ুনময়মনসিংহ সীমান্তে বিজিবির টহল বেড়েছে, এলাকাবাসীও সতর্ক৪ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনকুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে ১৪ জনকে ঠেলে পাঠাল বিএসএফ১৯ ঘণ্টা আগে