সংগীতপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথ। তাঁর একটি গানে পাওয়া যাচ্ছে, ‘গান আমার যায় ভেসে যায়, দে তারে বিদায়’। গানই যেখানে ভেসে চলেছে, সেখানে ‘সংগীতচিন্তার’ অবস্থা অথবা আমাদের ক্ষুদ্র নিবন্ধের কতটুকু আর অবস্থান। সবই যেন ভেসে যাচ্ছে, অথবা ভেস্তে যাচ্ছে। কিন্তু ‘নেতি’ নয়, আমরা এগিয়ে চলেছি, এ ভাবটা বজায় রাখতে এই নিবন্ধ।

রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে বাংলাদেশের গ্রামে-বন্দরে দেখতেন তাঁর গান কূল পেয়েছে। রবীন্দ্রনাথকে গলায় তুলে নেয়নি শুধু, অন্তরে স্থান দিয়েছে। রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন চলছে শুধু পঁচিশে বৈশাখ বা বাইশে শ্রাবণে নয়, সারা বছরই। মফস্বল শহরগুলোতেও। সংগীতপ্রেমিকদের উদ্বুদ্ধ করেছে বৈকি।

মূল সংগীতের ক্ষেত্রে যদি এমনটি হতো, তাহলে আক্ষেপের কারণ থাকত না। পরিকল্পনার অভাব ও সংস্কৃতি-পরিকল্পকদের কলকে না পাওয়া। পরিকল্পনাই নেই, কাজও শুরু হয়নি। হয়েছে খানিকটা বিচ্ছিন্নভাবে। বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, সংগীত মহাবিদ্যালয়, অন্যান্য বিদ্যায়তন আছে। যা নেই তা হলো অর্থের ছাড়। সবই খুঁড়িয়ে। শিক্ষার্থী এসেছে; কী তাদের কণ্ঠ, কী প্রক্ষেপ, কী বিপুল সম্ভাবনা! নতুন কুঁড়িরা ফুটে উঠেছে, পদ্মকুঁড়ি দল মেলতে পারেনি। নেই ভালো ওস্তাদ, রাগ-রাগিণীরা কেঁদে মরেছে। ৫০ বছরে কজন আর শাস্ত্রীয় সংগীতের শিল্পী বের হয়েছে! সংগীতের পথ তাই অবরুদ্ধ।

২.

কেন? নিয়াজ মুহাম্মদ চৌধুরী? তাঁর ছাত্রছাত্রী? ধরা যাক, শখানেক? সেখান থেকে ১০ জন বেরিয়ে আসতে পারত না? পারত। কিন্তু উচ্চাঙ্গসংগীত—রেডিওতে, টেলিভিশনে, শিল্পকলায়, মাহফিলে—কোথাও স্থান পায়নি পরিকল্পকদের অনীহায়। সংগীত যে আসলে উচ্চাঙ্গসংগীত, সেই বোধটুকুই জাগ্রত হয়নি। যাঁরা ভারতে গান শিখতে গিয়েছিলেন তানপুরা হাতে, তাঁরা ফিরে এসে তানপুরা ফেলে গিটার বা ব্যাঞ্জো ধরেছেন। বেঁচে থাকতে হবে তো! অথচ নিয়াজের কণ্ঠ মেহেদি হাসানের চেয়েও এক ধাপ ভালো, সমগ্র ভারতেও তাঁর মতো কণ্ঠ আমি এখনো খুঁজে পাই না। কত কষ্টে, কত ধৈর্যের সঙ্গে এখনো শিল্পী তাঁর তানপুরায় সুর বাঁধেন, তা আমি স্বচক্ষে দেখে এসেছি। শিল্পীর স্ত্রী, নিজেও একজন বড় ওস্তাদের মেয়ে। সলজ্জ কণ্ঠে বললেন, ‘আমি ওস্তাদের মেয়ে (ওস্তাদ জাকির হোসেন), ওস্তাদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে, দোয়া করবেন যেন ছেলেকে সংগীতের তালিম দিয়ে যেতে পারি।’ একটি সকাল তাঁদের বাড়িতে কাটিয়ে এসেছি। খুব ভালো লাগল। কেন, সেটা বলছি। নিয়াজের ছেলের নাম ফৈয়াজ। কী সুন্দর কণ্ঠ! কী সুন্দর দেখতে! যখন তানপুরা বেঁধে ‘আ’ করল, ছোট ঘরটি যেন গমগম করে উঠল। মনে পড়ল পুরানা পল্টনের ‘হিরামন মঞ্জিলে’ যখন ওস্তাদেরা আসতেন, সেটা গুল মুহাম্মদ খানই হন অথবা বারীণ মুজমদার অথবা নাজাকাত-সালামাত হন, এমনি করে সুরে ভরে যেত ঘরটি। সুরে না ভরলে বৃথা সব আয়োজন।

ফৈয়াজ বলল, ‘আমি গান গাইতে ভালোবাসি। আমি নিয়াজ মুহাম্মদ চৌধুরীকে ছাড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু সমাজ তো তা দেবে না।’

নিয়াজ বললেন, ‘আটটি টিভি চ্যানেল আছে। সবার জানা, ক্লাসিক্যাল গানই আসল বস্তু। টাকা ছাড় দেবে না। ইন্টারভিউ নিতে চায়। তারপর... আমাকে ছুড়ে ফেলে দেবে। এই তো?’

মুস্তাফা জামান আব্বাসী

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রব ন দ

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষিজমি ক্ষতির শঙ্কায় ভেকুসহ মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ

ঢাকার ধামরাইয়ে মাটি খননের কাজে ব্যবহৃত একটি ভেকু ও মোটরসাইকেলে আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে এলাকাবাসী। কৃষি জমি ক্ষতির অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে উপজেলার ভাড়ারিয়া ইউনিয়নের দীঘল গ্রামের দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। 

এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি একটি পুকুর খননের জন্য অনুমোদন দেয় উপজেলা প্রশাসন। মঙ্গলবার মাটি খননের জন্য সেখানে ভেকু ও ড্রাম ট্রাক নিয়ে যান অনুমতি পাওয়া ব্যক্তিরা। কৃষি জমি নষ্ট হবে এমন অভিযোগ তুলে তাদের বাধা দেয় এলাকাবাসী।

আরো পড়ুন:

সুনামগঞ্জে আগুনে পুড়ল ৭ ঘর 

বিবিয়ানা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড

বিকেলের দিকে এ নিয়ে সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। রাতে ফের সেখানে মাটি খনন চেষ্টা করলে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে খননকাজের জন্য আনা ভেকু ও পাশে রাখা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস, উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার সুব্রত সাহা জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার দীঘল গ্রামে ভেকু ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়ার খবর আসে। ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে। এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে বাধা দেন। পরে অল্প কিছু কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ফিরে যান।

ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজমুল হুদা বলেন, “একটি মোটরসাইকেল ও ভেকু আগুনে পুড়ে গেছে। তিনটি ড্রাম ট্রাক ভাঙচুর করা হয়েছে। আমি ঘটনাস্থলে এসে দেখি কয়েক শতাধিক মানুষ। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে দেরি হলে উত্তেজিত জনতা ড্রাম ট্রাকেও আগুন ধরিয়ে দিত। হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, ভেকুটি মাটি কাটার জন্য আনা হয়েছিল। ঘটনাস্থল ইউএনও এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিদর্শন করেছেন।”

ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান সালমান হাবীব বলেন, “এই জমি নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে একটি ভেকু ও মোটরসাইকেল আগুন দেওয়া হয়েছে। মূলত এক পক্ষকে পুকুর করার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কারণ ওই জমিতে কোনো সফল উৎপাদন না হওয়ায় তাদের এই অনুমতি দেওয়া হয়। তাদের শর্ত দেওয়া হয়েছিল ওই জমির মাটি কোথাও বিক্রি করা যাবে না। আজকে ড্রাম ট্রাক এবং ভেকু নিয়ে আসলে উত্তেজিত লোকজন আগুন দেয়। উভয় পক্ষকেই আইনের আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে।” 

ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ