যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালু করতে মার্কিন জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস
Published: 12th, May 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইসরায়েলি-মার্কিন জিম্মি এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার কথা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বধীনতাকামী সংগঠন আন্দোলন হামাস। খবর বিবিসি, আলজাজিরার
এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আলোচনা পুনরায় চালু করতে এবং গাজা উপত্যকায় আমাদের জনগণের কাছে সাহায্য ও ত্রাণ সরবরাহ পৌঁছানোর অংশ হিসেবে মার্কিন ইসরায়েলি সৈনিক এডান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়া হবে।’
গত ৭০ দিন ধরে গাজায় খাদ্য, ওষুধ এবং জ্বালানিসহ সব সাহায্য প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে ইসরাইল।
তবে হামাসের বিবৃতিতে ২১ বছর বয়সী আলেকজান্ডারকে কখন মুক্তি দেওয়া হবে তা উল্লেখ করা হয়নি, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে সোমবার মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ ইসরায়েল সফর করবেন।
জানা গেছে, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠনটি কাতারে মার্কিন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করেছে। কর্মকর্তা বলেন, বেশ কয়েক দিন ধরে আলোচনা চলছে এবং যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা এবং মানবিক সাহায্য প্রবেশকে সহজতর করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে।
তেল আবিবে জন্মগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে বেড়ে ওঠা আলেকজান্ডার গাজার সীমান্তে একটি অভিজাত পদাতিক ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় হামাস তাকে ধরে নিয়ে যায়।
ইসরায়েলের সঙ্গে আর যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। মঙ্গলবার (৬ মে) গোষ্ঠীটির এক সিনিয়র কর্মকর্তা এমনটা জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে গাজার বিরুদ্ধে ইসরাইলের ‘ক্ষুধার যুদ্ধ’ বন্ধ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজায় আরও আগ্রাসী পদক্ষেপের দিকে যাচ্ছে ইসরায়েল। হাজারো সংরক্ষিত সেনা তলব করে শুরু হয়েছে বড় অভিযানের প্রস্তুতি। এ নিয়ে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
জিম্মিদের মুক্তির অজুহাতে গাজার ফিলিস্তিনিদের ওপর নারকীয় তাণ্ডব চালানোর পর এবার ভিন্ন কথা বলছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তি নয়, যুদ্ধের প্রধান উদ্দেশ্য হামাসকে পরাজিত করা।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।