কক্সবাজার শহর থেকে ৯৭ কিলোমিটার দূরে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া। এই গ্রামে চার শতাধিক জেলে পরিবারের বসবাস। গত শনিবার দুপুরে গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পরিবারগুলোতে চলছে খাদ্যসংকট। অনেক পরিবারের খাবার জুটছে এক বেলা। কিছু জেলে নাফ নদীর তীরের বেড়িবাঁধ ও পাশের বালুচরে বসে মাছ ধরার জাল মেরামত করছেন। অনেকের সময় কাটছে অলস।

গত ১৫ এপ্রিল থেকে বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীতে মাছ আহরণের ওপর ৫৮ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা চলছে। নিষেধাজ্ঞার ২৭ দিন হতে চললেও গতকাল সোমবার পর্যন্ত এই গ্রামের কোনো জেলে সরকারি বরাদ্দের চাল পাননি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিজন জেলেকে ৮৬ কেজি করে চাল বিতরণের কথা।

একই অবস্থা দেখা গেছে শাহপরীর দ্বীপ, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাইটংপাড়া, মহেশখালীয়া পাড়া, বাহারছড়া ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নেও। এসব এলাকার অন্তত ১২ হাজার জেলে পাননি সরকারি বরাদ্দের ওই চাল।

শাহপরীর দ্বীপ ও জালিয়াপাড়ার জেলে আবদুল গফুর ও সালামত উল্লাহ বলেন, মিয়ানমারের সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির গুলি ও অপহরণের কারণে পাঁচ-ছয় মাস ধরে তাঁরা সাগর ও নাফ নদীতে মাছ ধরতে পারেননি। মাছ ধরতে গিয়ে ইতিমধ্যে দুই শতাধিক জেলেকে ধরে নিয়ে যায় সশস্ত্র গোষ্ঠী। সর্বশেষ গত ৮ এপ্রিল সেন্ট মার্টিন দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমানা থেকে অস্ত্রের মুখে চারটি ফিশিংবোটসহ ২৩ জন মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি।

টেকনাফ ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.

আবুল কালাম বলেন, বিজিবির তৎপরতায় সম্প্রতি কয়েক দফায় অপহৃত শতাধিক বাংলাদেশি জেলেকে ফেরত আনা গেলেও অনেকের খোঁজ নেই। তাতে অপহৃত জেলে পরিবারে এক দিকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, অন্যদিকে সরকারি বরাদ্দের চাল না পেয়ে হতাশা বিরাজ করছে।

চালের আশায় ৬৩ হাজার জেলে

শাহপরীর দ্বীপের ট্রলারমালিক আবদুল আমিন ও স্থানীয় সাবরাং ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, দীর্ঘ সময় মাছ ধরতে না পেরে এমনিতে জেলেরা ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরও সরকারি বরাদ্দের চাল না পেয়ে উপজেলার অন্তত ১২ হাজার জেলে দিশেহারা। এখন বহু পরিবারে অনাহারে-অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন।

উপজেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, প্রায় দেড় হাজার ট্রলার ও নৌকায় নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১০ হাজার ৬৮৩ জন। মহেশখালীর কুতুবজুম ইউনিয়নের জেলে নুরুল আমিন বলেন, তিনিও এখনো সরকারি বরাদ্দেন চাল পাননি। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে ধরনা দিলে জানানো হয় বরাদ্দের চাল আসেনি। গত বছরে নিষেধাজ্ঞা শুরুর দুই সপ্তাহের মাথায় বরাদ্দের চাল হাতে পেয়েছিলেন তিনি। উপজেলার হোয়ানক, মাতারবাড়ী, বড় মহেশখালী, ছোট মহেশখালী, গোরকঘাটা, শাপলাপুর ইউনিয়নের শত শত জেলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের জালিয়াপাড়া। বেড়িবাঁধে বসে জাল সংস্কার করে বাঁচার চেষ্টা জেলে সৈয়দ আলমের। সম্প্রতি তোলা

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ হপর র দ ব প বর দ দ র চ ল পর ব র উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিজয়ের ব্যাটে খুলনার দাপুটে জয়

জাতীয় ক্রিকেট লিগে টি-টোয়েন্টিতে নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে দাপুটে জয় পেয়েছে খুলনা বিভাগ। আজ শুক্রবার (০৩ অক্টোবর) বিকেলে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বরিশাল বিভাগকে তারা হারিয়েছে ৮ উইকেটের ব্যবধানে। আর সেটা সম্ভব হয়েছে এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটিং দৃঢ়তায়।

বরিশাল আগে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৩৭ রান তোলে। জবাবে বিজয়ের অপরাজিত ৭২ রানের ইনিংসে ভর করে ১৬.৩ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে নোঙর করে খুলনা।

আরো পড়ুন:

নাসিরের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে চট্টগ্রামের জয়রথ থামাল রংপুর

শেষ ওভারের রোমাঞ্চে খুলনার ৩ রানের জয়

রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৫ ওভারেই ৪৩ রান তোলেন বিজয় ও ইমরানুজ্জামান। এই রানে জাহেদুল হক জায়েদের বলে রুয়েল মিয়ার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ইমরানুজ্জামান। তিনি ২১ বলে ৩টি চার ও ২ ছক্কায় ৩০ রানের ইনিংস খেলে যান।

সেখান থেকে বিজয় ও আফিফ হোসেন দলীয় সংগ্রহকে টেনে নেন ১১০ পর্যন্ত। এরপর আফিফ ফিরেন ৩ চারে ২১ রান করে। তার উইকেটটি নেন মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম। সেখান থেকে অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুনকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন বিজয়। শেষ পর্যন্ত ৪৭ বলে ৬টি চার ও ৩ ছক্কায় ৭২ রানের ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন তিনি। আর মিঠুন ১ চারে অপরাজিত থাকেন ৮ রানে।

তার আগে বরিশালের টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান মোটামুটি রান পান। তার মধ্যে ইফতেখার হোসেন ইফতি ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪, ফজলে মাহমুদ ১ চারে ৩২ ও আজমির আহমেদ ২ চার ও ২ ছক্কায় করেন ২৪ রান। এরপর সালমান হোসেন ইমনের ১৫ ও সোহাগ গাজীর অপরাজিত ১৫ রানের ইনিংসে ভর করে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৩৭ রান পর্যন্ত যেতে পারে বরিশাল।

বল হাতে খুলনার জিয়াউর রহমান ২ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। শেখ পারভেজ জীবন ৪ ওভারে ২৫ রানে নেন ২টি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন নাহিদুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ও ইয়াসিন মুনতাসির।

৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন বিজয়।

এই জয়ে ৫ ম্যাচ থেকে ৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে পয়েন্ট টেবিলের তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে খুলনা বিভাগ। অন্যদিকে ৫ ম্যাচের একটিও না জিতে টেবিলের তলানিতে আছে বরিশাল।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ