টানা ২৫ বছর ধরে চ্যানেল আইতে দুই ঈদের অনুষ্ঠানমালায় ঈদের আগের দিন রেজানুর রহমানের ঈদের নাটক প্রচার হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় রেজানুর রহমান এবারও চ্যানেল আইয়ের জন্য নির্মাণ করেছেন ঈদের বিশেষ নাটক ‘একটি পারিবারিক গল্পের খসড়া’। বউ–শাশুড়ির দ্বন্দ্বের পরিণতি একটি সুখী সংসারকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, তার করুণ পরিণতি রয়েছে নাটকটিতে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাটকের তথ্য জানানো হয়েছে।
‘একটি পারিবারিক গল্পের খসড়া’ নাটকের কাহিনি অনেকটা এ রকম: সংসার হলো মায়ার খেলা। শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর গুরুত্বের নির্যাসে সংসারে মা, বাবা, স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার মধ্যে মায়ার সৃষ্টি হয়। এ নাটকে এই মায়ার কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন ‘আয়েশা আদিত্য’ নাটক সরানোর নেপথ্যে কী২৯ মে ২০২৫সংসারে বউ–শাশুড়ির যুদ্ধ নতুন ঘটনা নয়। তাই বলে বিষয়টিকে উপেক্ষা করাও উচিত নয়। তাদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের পরিণতি একটি সুখী সংসার কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়, তা–ই ফুটে উঠেছে নাটকটিতে।
অভিনয় করেছেন দিলারা জামান, মোহাম্মদ বারী, হাফিজুর রহমান সুরুজ, মাহবুবা রেজানুর, রাজিব সালেহীন, মাহফুজা আফনান অপ্সরা, রুনি, দীপান্বিতা প্রমুখ। ঈদের আগের দিন সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে চ্যানেল আইয়ে নাটকটি প্রচারিত হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মেয়েকে ‘খুশি’ করতে এনরিকের ৫ গোলের ‘খেলনা’
ছবিটি বেশ কিছুদিন হলো ফিরে এসেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এখন অবশ্য আরও বেশি চোখে পড়ার কথা।
বার্লিনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে স্যূট পরা লুইস এনরিকে। কোমরে হাত দিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে। মিটিমিটি হাসছেন। একটু দূরেই তাঁর পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে জানার হাতে বার্সেলোনার লাল-নীল-হলুদ পতাকা। মেয়ের কাণ্ড দেখে বাবা যেন খুশিতে আটখানা!
এক দশক আগের সেই স্মৃতি যাঁদের স্মরণে আছে, এই ছবিটি দেখে তাঁদের এটাও মনে পরতে পারে পরে কী ঘটেছিল। বাবাকে সাক্ষী রেখে জার্মানির মাটিতে বার্সেলোনার পতাকা পুঁতেছিল জানা।
আরও পড়ুনইন্টারকে গোলের মালা পরিয়ে ইউরোপসেরার মুকুট পিএসজির৪ ঘণ্টা আগেচার বছর পর ২০১৯ সালে জানা মারা গেল। তার আগে হাড়ের ক্যান্সারের সঙ্গে লড়েছে পাঁচ মাস। এনরিকে তখন স্পেন দলের কোচ। দায়িত্ব ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন মেয়ের কাছে। ফিরেছিলেন পাঁচ মাস পর। পরিবারের সঙ্গে শোক কাটিয়ে ওঠার চেষ্টার সেই সময়ে এনরিকের যোগাযোগ ছিল শুধু স্পেন ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে। ৯ বছর বয়সী মেয়েকে হারাতে কেমন লাগে, সেসব কথা তিনি কাউকে বলবেন না বলে হোয়াটসঅ্যাপেও ছিলেন না।
সেই এনরিকেই মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় শেষ বাঁশি বাজার আগেই অন্য রুপে। আনন্দে ভেসে গেলে যেমন হয় আরকি!
দুই হাত তুলে উদ্যাপন তো ছিলই, ম্যাচ শেষে পিএসজির খেলোয়াড়দের জড়িয়ে ধরে তাঁর কী উল্লাস! চোখে দেখা কারণ হলো, কিছুক্ষণ আগেই মাঠে ইতিহাস গড়েছে এনরিকের পিএসজি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে বিধ্বস্ত করেছে ৫-০ গোলে। এই প্রতিযোগিতার ফাইনালের ইতিহাসে এর আগে কোনো দল এত বড় ব্যবধানে জিততে পারেনি। আর পিএসজিও আরাধ্য চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে হলো ট্রেবলজয়ীও, যেটা এনরিকের জন্য আবার বার্সাতেই চেখে দেখা স্বাদ।
খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে সফল এনরিকের ওভাবে আনন্দে ভেসে যাওয়ার কারণ তাই শুধু মাঠের ফলই নয়। কারণ এসব সাফল্যের কিছুই এনরিকের জীবনে নতুন না। যেটা নতুন, সেটা হলো, মেয়েকে হয়তো খুশি করতে পেরেছেন। সেজন্যই কি এনরিকের মুখে হাসি আর ধরে না!
গত জানুয়ারির কথা। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কাকে এনরিকে বলেছিলেন, ‘বার্লিনে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর আমার সঙ্গে তার একটি অবিশ্বাস্য ছবি মনে আছে। মাঠে বার্সেলোনার পতাকা পোঁতার ছবি। আশা করি পিএসজির সঙ্গেও এটা করতে পারব।’
এটুকু পড়ার পর নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে, পিএসজির পতাকা বাবা-মেয়ে একসঙ্গে পুঁতবে কীভাবে? জানা তো নেই।
এনরিকের বাকি কথাগুলো শুনুন। তাতে বাবার কষ্টটা হয়তো একটু ধরা যায়, ‘আমার মেয়ে সেখানে (ফাইনাল) থাকবে না, শারীরিকভাবে থাকবে না। কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে থাকবে আর এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
কেন গুরুত্বপূর্ণ, সে প্রশ্নের উত্তর অন্তত বাবাদের জানা। মেয়েটা দেখে কষ্ট পাবে, এমন কিছু তাঁর সামনে করা যাবে না; মানে হারা যাবে না, ম্যাচটি ফাইনাল হওয়ায় অন্য অর্থে জিততে হবে। তাই মেয়েকে খুশি করতেই হয়তো এনরিকের এই পাঁচ গোলের ‘খেলনা’!
ইন্টারকে সেটা বানানোর পর এনরিকের গায়ে দেখা গেল একটা কালো টি-শার্ট। সামনে বুকের ওপর ১০ বছর আগের সেই ছবিটির মতো বাবা-মেয়ের পিএসজির পতাকা পোঁতার স্কেচ। অর্থাৎ জানুয়ারিতে বলা সেই কথাগুলো শুধু কথার কথা ছিল না। তাহলে পিএসজির ইউরোপসেরার এ মুকুট মেয়ে হারানো এক বাবার বিশুদ্ধ আবেগের পিছু ছোটার ফলও।
সেই আবেগ সংক্রমিত হয়েছে পিএসজির সমর্থকদের মধ্যেও। ফরাসি ক্লাবটির খেলোয়াড়েরা ততক্ষণে ট্রফি বুঝে নিয়েছেন। গ্যালারিতে ভেসে উঠল এনরিকে ও তাঁর প্রয়াত মেয়েকে নিয়ে বানানো বড় এক তিফো। তাতে ফুটে ওঠা ছবিটি এমন, মাঠে এনরিকে পিএসজির পতাকা পুঁতছেন, ৮ বছর বয়সী জানা পাশেই দাঁড়িয়ে, পরনে পিএসজির ৮ নম্বর জার্সি।
এনরিকেরও চোখে পড়েছে এই তিফো। দেখার পর কেমন লেগেছে সেটাও বলেছেন মিক্সড জোনে ‘খুব ভালো লাগছে। সমর্থকেরা আমার পরিবারের জন্য যে ব্যানার করেছে সেটা খুবই আবেগপূর্ণ ব্যাপার। তবে আমি সব সময় মেয়ের কথাই ভাবি।’
স্প্যানিশ এ কোচের সহজ যুক্তি, ‘মেয়েকে মনে রাখতে আমার চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের দরকার নেই। সে সব সময় আমাদের সঙ্গেই আছে, বিশেষ করে যখন আমরা হেরে যাই।’
হারে কেউ পাশে দাঁড়ালে মনের কষ্ট লাঘব হয়। কিন্তু জয়ে পাশে দাঁড়ালে আনন্দ হয়। এনরিকে অনুচ্চারে ও অদৃশ্যে আনন্দটুকু ভাগ করেছেন জানার সঙ্গে।