অবকাঠামো থাকলেও যেসব সুবিধা চালু হয়নি কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে
Published: 3rd, June 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দের পাড়ায় ২৯ একর জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ঝিনুক আকৃতির আইকনিক রেলস্টেশন। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০১ কিলোমিটারের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের সঙ্গে দেশের একমাত্র আইকনিক রেলস্টেশনও উদ্বোধন করেন। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় ১ বছর ৭ মাস পার হলেও স্টেশনে যাত্রীসেবার অনেক সুবিধাই চালু হয়নি। অবকাঠামো তৈরি হলেও সেসব পড়ে থাকায় চুরি হচ্ছে বিদ্যুতের তার, বাল্বসহ মূল্যবান জিনিস। নির্মিত অবকাঠামো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারে দেরির কারণে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে।
রেলস্টেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি), চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি), বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে এই কাজ করছে। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এর মধ্যে ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ছয়তলা রেলস্টেশন নির্মাণে খরচ হয়েছে ২৩৬ কোটি টাকা। তবে মূল প্রকল্পে থাকলেও স্টেশনের এক ডজনের বেশি যাত্রী পরিষেবা চালু হয়নি। এসব সুবিধা চালু না হওয়ায় একদিকে যাত্রীরা যেমন হতাশ হচ্ছেন, তেমনি সরকার আয়বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ছয়তলা ভবনের নিচতলায় তথ্যকেন্দ্র, মসজিদ, শিশুদের বিনোদনের জায়গা, প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ ও পদচারী-সেতু, দ্বিতীয় তলায় শপিং মল, শিশুযত্ন কেন্দ্র, রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট তারকা মানের হোটেল, চতুর্থ তলায় রেস্তোরাঁ, শিশুযত্ন কেন্দ্র, কনফারেন্স হল ও কর্মকর্তাদের কার্যালয় কিছুই চালু হয়নি। ভবনের সম্মুখভাগে তৈরি হয় ঝিনুক আদলের ফোয়ারা। যাত্রীরা ঝিনুক ফোয়ারা দিয়ে স্টেশনে প্রবেশ করার কথা, কিন্তু প্রবেশপথটি বন্ধ। ফোয়ারাতে পানির বিচ্ছুরণও নেই।
সবকিছু থেকেও নেই, বেহাল দশা
গত ২৮ মে সকালে রেলস্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে পূর্ব পাশের সরু প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বেরিয়ে আসছেন। একই পথে ট্রেনে ওঠার জন্য ছুটছেন আরেক দল যাত্রী। তাতে বাড়ছে ভিড়, হুড়োহুড়ি। মালামাল ও শিশুসন্তানদের নিয়ে বের হতে গিয়ে বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন নারী যাত্রীরা।
রেলস্টেশনের টিকিট কালেক্টর শরীফুল ইসলাম বলেন, দুটি ট্রেনের যাত্রীরা যখন ভবনের বাইরে একটি গেট দিয়ে প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করেন এবং বের হন, তখন চেকিং করতে সমস্যা হয়। চেকিং করতে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়াতে হয়।
স্টেশনের প্রবেশপথের পাশে (ভবনের নিচতলায়) একটিমাত্র টয়লেট রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, যাত্রীদের বিশাল লাইন। প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের বসার এবং নামাজের কোনো ব্যবস্থা নেই। নেই খাবারের ব্যবস্থা।
চালু হয়নি স্টেশনের চলন্ত সিঁড়ি। সম্প্রতি কক্সবাজারের আইকনিক রেলস্টেশনে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সিডনিতে সুরের মূর্ছনায় মাতালেন নকীব-তাহসান
বাংলা সংগীতের দুই প্রজন্মের জনপ্রিয় দুই শিল্পী নকীব খান ও তাহসান খান এক মঞ্চে উঠে মুগ্ধ করলেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য আয়োজন করা এই বিশেষ কনসার্টে উদ্যাপিত হয় সংগীতজগতের দুটি মাইলফলক—নকীব খানের সংগীতজীবনের সুবর্ণজয়ন্তী এবং তাহসান খানের রজতজয়ন্তী। গত শনিবার লিভারপুল ক্যাথলিক ক্লাবের (এলসিসি) থিয়েটারে জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এ অনুষ্ঠান, যার শিরোনাম ছিল ‘জেনারেশনস অব মেলোডিজ’।
সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হওয়া কনসার্টে সিডনিতে বসবাসরত কয়েক শ সংগীতপ্রেমী অংশ নেন। শুরু থেকেই একের পর এক জনপ্রিয় গান পরিবেশন করে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন দুই শিল্পী।
নকীব খান ‘মুখরিত জীবনের চলার বাঁকে’, ‘তোরে পুতুলের মতো করে সাজিয়ে’সহ আরও অনেক গান গেয়ে শ্রোতাদের ফিরিয়ে নেন সোনালি অতীতে। মঞ্চে বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় সংগীত তারকা তাহসান খান পরিবেশন করেন তাঁর আলোচিত গান ‘আলো আলো’, ‘বিন্দু তুমি’, ‘মাঝে মাঝে’সহ আরও কয়েকটি গান। তাহসানের তারুণ্যদীপ্ত পরিবেশনা শ্রোতাদের উচ্ছ্বাসে ভরিয়ে তোলে। পুরো অডিটরিয়ামে তখন তৈরি হয় মেলোডির অনন্য মেলবন্ধন—একদিকে নকীবের নস্টালজিক সুর, অন্যদিকে তাহসানের আধুনিক আবেগময় গান।
অনুষ্ঠান শেষে দর্শকেরা জানালেন তাঁদের মুগ্ধতার কথা। প্রবাসী আবাসন নির্মাতা তালাত মাহমুদ বলেন, ‘নকীব খানের গান শুনে বড় হয়েছি। আজ তাঁকে সরাসরি মঞ্চে দেখে মনে হলো, এ এক অনন্য অভিজ্ঞতা।’ কেক এন বেকের কর্ণধার মাসুম খান বলেন, ‘তাহসানের গান আমার সব সময়ের প্রিয়। আজকের কনসার্ট ছিল স্বপ্নের মতো।’ ‘আমাদের কথা’র সম্পাদক পূরবী পারমিতা বোস বলেন, ‘পরিবারের সবাই মিলে এমন একটি সুন্দর সন্ধ্যা কাটানো সত্যিই অসাধারণ। নকীব খান ও তাহসান—দুজনই তাঁদের সেরাটা দিয়েছেন।’
এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইকনিক ট্রেড অস্ট্রেলিয়া। সহযোগী হিসেবে ছিল ক্রেজি টিকেটস ও ধূমকেতু ব্যান্ড।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে আইকনিক ট্রেড অস্ট্রেলিয়ার কর্ণধার মোশারফ রেহান বলেন, ‘সিডনিবাসীর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তাঁদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা ছাড়া এমন একটি সফল আয়োজন সম্ভব হতো না। নকীব ও তাহসানের মতো শিল্পীদের এক মঞ্চে পাওয়া আমাদের জন্যও ছিল বড় প্রাপ্তি।’
সব মিলিয়ে সিডনিতে অনুষ্ঠিত এই কনসার্ট হয়ে উঠেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে স্মরণীয় এক সংগীতযাত্রা। যেখানে মিশেছে দুই প্রজন্মের সংগীতধারা, নস্টালজিয়া আর আধুনিকতার অনবদ্য সুর।