অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ তাঁর বাজেট বক্তৃতায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও সর্বস্ব ত্যাগ স্বীকার করা মা-বোনদের কথা স্মরণ করেছেন, শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন চব্বিশের আন্দোলনের শহীদদের কথাও। একাত্তর ও চব্বিশ—দুই সংগ্রামেরই যে উদ্দেশ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা, বাজেট প্রস্তাবে তার প্রতিফলন তেমন নেই।

২ জুন অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫–২৬ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করলেন, তাতে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও নীতিকাঠামোগত সাহসী পদক্ষেপ আছে, এটা বলা যাবে না। এই বাজেটে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে, এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে গুরুত্ব না দিয়ে রাজস্ব আয়কে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা হলো রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বাজেটটি করা হয়েছে পুরো অর্থবছরের জন্য। কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার আগে যদি নির্বাচন হয়, সে ক্ষেত্রে বাজেটের নীতিপরিকল্পনায় কোনো বদল আসবে কি না, সেই প্রশ্নও আছে।

অর্থ উপদেষ্টা প্রবৃদ্ধির চেয়ে মানবকল্যাণের ওপর জোর দিলেও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যের বরাদ্দে, প্রস্তাবে বা পরিকল্পনায় এর প্রতিফলন নেই। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও বরাদ্দ অপ্রতুল। 

বাজেটে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু তারুণ্যের উৎসবের নামে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার যৌক্তিকতা আছে কি? বিগত সরকারের আমলে রাজনৈতিক কারণে নানা উৎসবের নামে জনগণের করের অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা নিজেরাই উৎসব করতে পারবে। 

অর্থ উপদেষ্টা নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ একটি তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। স্টার্টআপের জন্য আগেও ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরাকে এবারের বাজেটের অন্যতম সাফল্য হিসেবে দাবি করেছেন অর্থ উপদেষ্টা। গত ডিসেম্বর মাসের ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ থেকে মূল্যস্ফীতি এপ্রিলে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশে। সরকার জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। 

এবারের বাজেটের বড় দুর্বলতা হলো দারিদ্র্যবিমোচনে সরকারের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি না থাকা। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে ২২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। ২০২২ সালে যা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। চরম দারিদ্র্যের হারও ৭ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যার মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকেই।

২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট বিনিয়োগবান্ধব হয়নি বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাঁরা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন, শিল্প প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ব্যাংক খাত সংস্কারের জন্য কোনো স্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছিলেন। বাজেটে ভবন, ফ্ল্যাট কেনার জন্য টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা আছে। সিপিডি ও টিআইবি একে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের পরিপন্থী বলে অভিহিত করেছে। 

বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাস্তবায়ন অনেক কঠিন কাজ। আমরা আশা করতে চাই, রাজনৈতিক সরকারের আমলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে অপরিমেয় দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপচয় হতো, অন্তর্বর্তী সরকার সেটা পুরোপুরি বন্ধ করতে না পারলেও অনেকখানি কমিয়ে আনতে পারবে। সে ক্ষেত্রে ‘অর্ধেক গ্লাস খালি, অর্ধেক গ্লাস পূর্ণ বাজেট’ থেকেও জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব বর দ দ র জন য সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড

অস্কারজয়ী হলিউড অভিনেতা-পরিচালক রবার্ট রেডফোর্ড মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রোভো শহরে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।

তার মুখপাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঘুমের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে তিনি মারা গেছেন। অভিনেতার মৃত্যুর খবর জানিয়েছে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও এবিসি নিউজ।

আরো পড়ুন:

আলোচনায় বাগদানের আংটি: টেইলর সুইফট-কেলসে কত টাকার মালিক?

বাগদান সারলেন গায়িকা টেইলর সুইফট

১৯৬৩ সালে ‘বেয়ারফট ইন দ্য পার্ক’ নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন, যা ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রে রূপ নেয়। সত্তর দশকে তিনি হয়ে ওঠেন হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক। ১৯৭৩ ‘দ্য স্টিং’ তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারের সেরা অভিনেতা মনোনয়ন।

১৯৮০ সালে ‘ওর্ডিনারি পিপল’ পরিচালনার জন্য তিনি সেরা পরিচালক হিসেবে অস্কার জেতেন। ছবিটি সে বছর সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কারও পায়। ১৯৯৪ সালে ‘কুইজ শো’ পরিচালনা করে আবারও মনোনয়ন পান।

১৯৮৫ সালে তিনি ‘আউট অব আফ্রিকা’ সিনেমায় অভিনয় করেন। ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ সাতটি বিভাগে অস্কার লাভ করে। তিনি ‘দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য গান’ এরপর অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন।

শুধু অভিনেতা-পরিচালক নন, স্বাধীন সিনেমার পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তিনি খ্যাত। যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসব ‘সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসব’–এর প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। অভিনয় থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে তিনি এটি প্রতিষ্ঠা করেন।

২০০২ সালে তিনি সম্মানসূচক অস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি তিনটি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার, একটি বাফটা পুরস্কার ও একটি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড পুরস্কার লাভ করেন।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কেইনের জোড়া গোলে চেলসিকে হারাল বায়ার্ন, চ্যাম্পিয়ন পিএসজির গোল উৎসব
  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • কারও কোনো অপরাধ নাই
  • বিশ্বকর্মা পূজা: গাঙ্গেয় শিল্পের উৎসব
  • আজ থেকে বুসান উৎসব, নানাভাবে রয়েছে বাংলাদেশ
  • ‎সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব : ডিসি
  • ঘুম থেকে অনন্ত ঘুমে অস্কারজয়ী রবার্ট রেডফোর্ড
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন
  • শেষ হলো সপ্তম যোসেফাইট ম্যাথ ম্যানিয়া ২০২৫