চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা ‘অত্যন্ত কঠিন’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার তিনি এমন মন্তব্য করেন।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের সঙ্গে তাদের নিজস্ব বাণিজ্য আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এমন সময় এই দুই ঘোষণা এল, যখন বিশ্বব্যাপী ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।

ট্রাম্প এমন সময় এই বাণিজ্যিক পদক্ষেপ নিয়েছেন, যখন অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) সদস্যদেশগুলোর মন্ত্রীরা দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার প্যারিসে জড়ো হয়েছেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির কারণে বিশ্ব বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, সে প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের আলোচনা করার কথা।

মিত্র ও প্রতিপক্ষ উভয়ের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে টানাপোড়েন তৈরি করেছে। এ শুল্ক এড়ানোর জন্য নানা পর্যায়ে আলোচনা ও দেনদরবার চলছে।

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প ও সি’র মধ্যে ফোনালাপ হতে পারে বলে জানিয়েছিল হোয়াইট হাউস। তাঁদের আলাপ বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়ক হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছিল।

কিন্তু বুধবার সকালে ট্রাম্প দ্রুত একটি চুক্তির আশা দৃশ্যত ম্লান করে দিয়েছেন বলেই মনে হচ্ছে। নিজের মালিকানাধীন ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে তিনি লিখেছেন, ‘আমি চীনের প্রেসিডেন্ট সি-কে পছন্দ করি, সব সময় করেছি, ভবিষ্যতেও করব। কিন্তু তিনি অত্যন্ত কঠিন মানুষ। তাঁর সঙ্গে চুক্তি করা সত্যিই খুব কঠিন!’

ট্রাম্পের এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের নীতিগত অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে।’

এপ্রিলে ট্রাম্পের শুল্কারোপের মূল নিশানা ছিল চীন। দেশটির পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে চীন।

মে মাসে দুপক্ষই সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমাতে রাজি হয়। এর আগে ৯ জুলাই পর্যন্ত অন্যান্য দেশের ওপর ব্যাপক হারে আরোপ করা শুল্ক স্থগিত করে ওয়াশিংটন।

অ্যালুমিনিয়াম ও ইস্পাতের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার কয়েক ঘণ্টা পর ট্রুথ সোশ্যালে এসব কথা বলেন ট্রাম্প। নতুন এই কর আরোপের ফলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে টানাপোড়েন বেড়েছে। তবে যুক্তরাজ্যকে এই অতিরিক্ত শুল্ক থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ