মানবদেহে সফল মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন, নিউরালিংকের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যারাড্রমিকসের বড় সাফল্য
Published: 5th, June 2025 GMT
প্রথমবারের মতো মানব মস্তিষ্ক সফলভাবে প্রতিস্থাপন বা ইমপ্ল্যান্ট করল যুক্তরাষ্ট্রের নিউরোটেক স্টার্টআপ প্যারাড্রমিকস। প্রায় তিন বছর ধরে পশুর দেহে গবেষণা চালানোর পর গত ১৪ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পরীক্ষা চালায় প্রতিষ্ঠানটি। সফল এই ইমপ্ল্যান্টকে ব্রেন কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) প্রযুক্তিতে একটি বড় অগ্রগতি হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
‘কনেক্সাস’ নামে পরিচিত ডিভাইসটি মস্তিষ্কে স্থাপন ও অপসারণের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় মাত্র ১০ মিনিটে। অস্ত্রোপচারটি পরিচালনা করেন নিউরোসার্জন ডা.
২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত প্যারাড্রমিকসের প্রধান নির্বাহী ম্যাট অ্যাঙ্গেল বলেন, যেসব জটিল মস্তিষ্কজনিত রোগকে এখনো ‘অসাধ্য’ মনে করা হয়, ভবিষ্যতে সেগুলোকে প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাধানযোগ্য সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে, এই লক্ষ্যেই তাঁরা কাজ করছেন। প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরে ভেড়ার ওপর বিসিআই প্রযুক্তি পরীক্ষায় ব্যস্ত ছিল। মানবদেহে সফল প্রয়োগের পর এবার তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্যারাড্রমিকস জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রক অনুমোদন পেলে চলতি বছরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ মানব পরীক্ষায় যাওয়া হবে। প্রতিষ্ঠানটি আশা করছে, এই দশকের শেষ নাগাদ ডিভাইসটি বাজারজাত করার অনুমোদন মিলবে। বাণিজ্যিকভাবে এটি এক লাখ মার্কিন ডলারে বিক্রি হতে পারে বলে ধারণা করা হয়েছে।
ব্রেন কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে মস্তিষ্ক ও বাইরের যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়। ১৯৭৩ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানী জ্যাক ভিদাল প্রথম এই ধারণা দেন। এর পর থেকে বিসিআই প্রযুক্তির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে চলেছেন গবেষকেরা। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, মাইক্রোইলেকট্রোড স্থাপন করা বানর একটি রোবোটিক হাত সচেতনভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। ২০০৪ সালে পঙ্গু অ্যাথলেট ম্যাট ন্যাগল বিসিআই ব্যবহার করে কম্পিউটার কার্সর ও কৃত্রিম হাত চালাতে সক্ষম হন।
বর্তমানে বিসিআই প্রযুক্তির শীর্ষ প্রতিদ্বন্দ্বিতাটি চলছে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক ও প্যারাড্রমিকসের মধ্যে। নিউরালিংক এরই মধ্যে তিন রোগীর শরীরে তাদের তৈরি ডিভাইস বসিয়েছে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব স আই
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।