ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর বর্জ্য সরানোর কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

সোমবার (৯ জুন) বিকেলে রাজধানীর ওয়াসা ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন দক্ষিণ সিটির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া।

এ সময় তিনি বলেন, “ঈদুল আজহার প্রথম ও দ্বিতীয় দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ডে শতভাগ কোরবানির পশুর বর্জ্য সরানো হয়েছে। তৃতীয় দিনে দুপুর পৌনে তিনটা পর্যন্ত সবগুলো ওয়ার্ড থেকে বর্জ্য সরানো হয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ডিএনসিসির প্রশাসক
ঈদের ৩ দিনে ডিএনসিসির ২০ হাজার টন বর্জ্য অপসারণ

কোরবানির ৮৫ শতাংশ বর্জ্য অপসারণ হয়েছে: ডিএনসিসি প্রশাসক

তিনি বলেন, “ঈদের তৃতীয় দিন দুপুর পৌনে তিনটা পর্যন্ত মোট ৩১ হাজার ২২৬ মেট্রিক টন বর্জ্য সরানো করা হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার অধিক বর্জ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই সরানো করা সম্ভব হয়েছে।”

শাহজাহান মিয়া বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটির অস্থায়ী ইজারা দেওয়া আটি পশুর হাটের সবগুলোর বাঁশের খুঁটিসহ ভাসমান ও উড়ন্ত ময়লা সরানো হয়েছে। হাটের সামগ্রিক বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করা যায় দ্রুত শেষ হবে।”

এ বছর ঈদুল আজহায় দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মোট  এক লাখ ৬৬ হাজার ৭৫৪টি পশু কোরবানি করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রশাসক জানান, তার মধ্যে প্রথম দিনে এক লাখ ৩৩ হাজার ৩১৭টি, দ্বিতীয় দিনে ৩১ হাজার৭৪৫টি এবং তৃতীয় দিনে এক হাজার ৬৯২টি পশু কোরবানি হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে জড়িত ছিলো ১২ হাজার ৮৫৩ জন। বর্জ্য সরাতে ছোট-বড় দুই হাজার ৭৯টি যানবাহন এবং ৩৪৪টি যান যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়া, নগর ভবনে স্থাপিত কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে কোরবানির পশুর হাট ও কোরবানির পশুর বর্জ্য সরানোর কাজ সরেজমিনে সচিত্র তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।তাছাড়া প্রতিটি হাটে আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছিল। প্রতিটি হাটে আলাদা আলাদা তদারকি কমিটি, অঞ্চলভিত্তিক আঞ্চলিক তদারকি কমিটি এবং কেন্দ্রীয়ভাবে সার্বিক তদারকি কমিটির মাধ্যমে সরেজমিনে মনিটরিং করা হয়। হাটে আইনশৃঙ্খলা তদারকির জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় এবং ৮টি হাটে ৪০০ জন আনসার ভিডিপির সদস্য মোতায়েন করা হয়েছিল।

কোরবানি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে নগরবাসীর মধ্যে প্রায় ৪৫ টন ব্লিচিং পাউডার, ২০৭ গ্যালন (প্রতি গ্যালনে ৫ লিটার) এবং এক লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে নির্ধারিত সময়ের আগেই কোরবানির পশুর বর্জ্য সরানোয় মাঠ পর্যায়ের পরিচ্ছন্ন কর্মী এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রশাসক মো.

শাহজাহান মিয়া।

এছাড়া কোরবানির বর্জ্য সরাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনকে সহযোগিতা করায় নগরবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

এ সময় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রশাসক বলেন, “নগরবাসীকে নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি দিতে ও বর্জ্য ফেলতে উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে এবং সঠিক সময়ে নগরবাসীকে সিটি কর্পোরেশনের বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যমে তারা দায়িত্বশীল ও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে।”

ব্রিফিংয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স ক রব ন র হ ট ন বর জ য নগরব স

এছাড়াও পড়ুন:

১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক

এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।

এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?

এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?

অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।

শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?

তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।

তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।

এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।

তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।

এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
  • ১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক