লড়াইটা ছিল মাঠে, কিন্তু তার প্রতিফলন দেখা গেল বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের পাতায়। আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে জোর প্রতিরোধ গড়ে তুলেই বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল পেয়েছে মর্যাদার স্বীকৃতি। ছয় বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এতটা ওপরে উঠল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
শেষ ফিফা উইন্ডোতে ত্রিদেশীয় এক টুর্নামেন্টে অংশ নেয় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। শক্তিমত্তার বিচারে যারা অনেক ওপরে সেই ইন্দোনেশিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে ড্র করে প্রমাণ দেয় তাদের বিকাশমান ফুটবল সামর্থ্যের। পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, এই সাহসী পারফরম্যান্সই দারুণ প্রাপ্তির সূত্রপাত।
ফিফার সদ্য প্রকাশিত র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ উঠে এসেছে ১২৮তম স্থানে। আগের তুলনায় পাঁচ ধাপ এগিয়ে। ১০৯৯.
আরো পড়ুন:
ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা-অস্ট্রেলিয়াসহ যেসব দল নিশ্চিত করেছে ২০২৬ বিশ্বকাপ
হেরেও পয়েন্ট টেবিলে ভারতের ওপরে বাংলাদেশ
জর্ডানে অনুষ্ঠিত ম্যাচ দুটো ছিল পরীক্ষার। আর সেখানেই উত্তীর্ণ আফঈদা খন্দকার, মাসুরা পারভীনরা। প্রথমে ৩১ মে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র এবং পরে ৩ জুন জর্ডানের বিপক্ষে ২-২ সমতা। দুই ম্যাচেই দেখা গেছে প্রতিরোধের পরিণত রূপ। কোচ পিটার বাটলারের পরিকল্পনায় এ এক নতুন বাংলাদেশ।
২০১৯ সালে ১২৭তম স্থানে থাকলেও সময়ের সঙ্গে রেটিংয়ে নেমে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে একসময় নেমে যায় ১৪৭ নম্বরে। যা ছিল নারী ফুটবলের ইতিহাসে তাদের সর্বনিম্ন অবস্থান। তবে অতীতের ঘুরে দাঁড়ানোর চিত্রও আছে। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে একবার করে বাংলাদেশ উঠেছিল ১০০ নম্বরে, যা এখনও রয়ে গেছে সর্বোচ্চ র্যাঙ্ক হিসেবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ড্র করা ইন্দোনেশিয়া এবার পিছিয়ে গেছে এক ধাপ, অবস্থান এখন ৯৫। একইভাবে জর্ডানও নেমে গেছে ৭৫ নম্বরে। অথচ দুটো দেশই র্যাঙ্কিংয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা দল। এভাবে বাংলাদেশ কেবল পয়েন্টই বাড়ায়নি, দেখিয়ে দিয়েছে তারা এখন ছোট কোনো প্রতিপক্ষ নয়।
এই র্যাঙ্কিংয়ের উত্থান বাংলাদেশকে দিচ্ছে আত্মবিশ্বাসের টনিক। সামনে রয়েছে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের বড় পরীক্ষা। ২৩ জুন থেকে মিয়ানমারে শুরু হচ্ছে এই আসর, যেখানে বাংলাদেশ খেলবে মিয়ানমার, বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে। থুউনা স্টেডিয়ামে আয়োজিত প্রতিটি ম্যাচে একটাই লক্ষ্য গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।