সুপার ব্যালন ডি’অর ফিরলে জিততে পারেন কে, মেসি না রোনালদো
Published: 12th, June 2025 GMT
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ শুরু হবে শনিবার। এ টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স দিয়ে নিশ্চিত হতে পারে এবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী। এর মধ্যে গতকাল সুপার ব্যালন ডি’অরের প্রসঙ্গ ফিরিয়ে এনেছে পুরস্কারটি প্রচলন করা ফরাসি সাময়িকী ‘ফ্রান্স ফুটবল’।
সুপার ব্যালন ডি’অর একবারই দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার ব্যালন ডি’অরজয়ী ফুটবলারদের মধ্যে ভোটাভুটির মাধ্যমে ১৯৮৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর এ ট্রফি জেতেন আর্জেন্টিনা, স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। বিশেষ এ পুরস্কারের জন্য তখন শুধু ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দের বিবেচনা করা হতো।
আরও পড়ুনঢাকায় মেয়েদের সাফে অংশ নেবে না ভারত৩ ঘণ্টা আগেভোটাভুটিতে ডাচ কিংবদন্তি ইয়োহান ক্রুইফ ও ফরাসি কিংবদন্তি মিশেল প্লাতিনিকে পেছনে ফেলে সুপার ব্যালন ডি’অর জেতেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া ডি স্টেফানো। স্পেনের নাগরিকত্বও থাকায় মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকায় দুবার ব্যালন ডি’অরজয়ী এই কিংবদন্তি জায়গা পান।
ব্যালন ডি’অরের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে গতকাল বাংলাদেশ সময় রাতে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়। ক্যাপশনে লেখা হয়, ‘এমন একটি ব্যালন ডি’অর, যা বাকিগুলোর চেয়ে আলাদা। ১৯৮৯ সালে একজন খেলোয়াড় এই ট্রফি জিতেছিলেন, যা আর কারও নেই; সুপার ব্যালন ডি’অর। কিন্তু তিনি কে ছিলেন? এখন যদি এই পুরস্কার আবারও দেওয়া হয়, তাহলে কে এটা জয়ের যোগ্য?’
ভিডিওতে ডি স্টেফানো, প্লাতিনি, ক্রুইফদের ছবি দেখানোর পাশাপাশি কণ্ঠের ধারাবর্ণনাও আছে, ‘১৯৮৯ সালে ফ্রান্স ফুটবল গত তিন দশকের সেরা ব্যালন ডি’অরজয়ীকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা একটি নিয়মের ভিত্তিতে: একাধিকবার ব্যালন ডি’অরজয়ী। কারা ভোট দিয়েছিলেন? ফ্রান্স ফুটবলের পাঠক, বিচারকমণ্ডলী এবং পূর্বের (ব্যালন ডি’অর) বিজয়ীরা।’ ভিডিওটির শেষে জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কি নতুন সুপার ব্যালন ডি’অর চান? তাহলে এটা কে জিততে পারেন?’
একটি বিষয় জানিয়ে রাখা ভালো, ১৯৮৯ সালে সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকায় আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ডিয়েগো ম্যারাডোনা বিবেচিত হননি। কারণ, ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এ পুরস্কার শুধু ইউরোপিয়ান খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। ম্যারাডোনাকে ১৯৯৫ সালে ‘গোল্ডেন ব্যালন ডি’অর’ দেওয়া হয়েছিল, যেটা ছিল ইউরোপের বাইরের খেলোয়াড়দের জন্য।
আরও পড়ুনপোল্যান্ড কোচের পদত্যাগ, ‘যুদ্ধ’ জিতলেন লেভা৪ ঘণ্টা আগেফ্রান্স ফুটবল সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কারটি ফিরিয়ে আনছে কি না, এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এএস’ এর আগে জানিয়েছিল, ২০২৯ সালে সুপার ব্যালন ডি’অর দেওয়া হতে পারে। কিন্তু ব্যালন ডি’অরের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডলে সুপার ব্যালন ডি’অরের প্রসঙ্গ ফিরে আসায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে গুঞ্জন, অনেকে আবার এক ধাপ এগিয়ে এখনই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন, এখন এ পুরস্কার দেওয়া হলে কে জিততে পারেন।
সুপার ব্যালন ডি’অর পুরস্কার ফিরিয়ে আনা হলে আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি লিওনেল মেসি ও পর্তুগালের কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো তা জয়ের দৌড়ে বাকিদের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন। মেসি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন আটবার, রোনালদো জিতেছেন পাঁচবার। ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে প্রায় সব পুরস্কারই জেতা হয়ে গেছে মেসির। রোনালদো শুধু বিশ্বকাপই জিততে পারেননি। এ ছাড়া মেসির মতোই ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে জিতেছেন মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার, একাধিকবার জিতেছেন লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ।
১৯৯৫ থেকে এ পর্যন্ত হিসাব করলে মেসি ও রোনালদোর বাইরে শুধু একজন খেলোয়াড়ই একাধিকবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। ব্রাজিলের হয়ে দুবার বিশ্বকাপজয়ী রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ ও ২০০২ সালে বর্ষসেরার এ পুরস্কার জেতেন কিংবদন্তি স্ট্রাইকার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ র ন স ফ টবল র প রস ক র এ প রস ক র ১৯৮৯ স ল আর জ ন ট বদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ বছর পর রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কেউ রইলেন না
ক্লাব বিশ্বকাপ খেলেই চলতি মাসে রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে এসি মিলানে যোগ দিয়েছেন লুকা মদরিচ। ক্রোয়াট কিংবদন্তির প্রস্থানে শূন্য হয়েছে রিয়াল–সমর্থকদের হৃদয় থেকে ক্লাবটির ড্রেসিংরুম। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়ালের ট্রফি কেবিনেটে ২৮টি শিরোপায় ঘাম জমে আছে মদরিচের। তাঁর ব্যক্তিগত ট্রফি কেবিনেটও হয়েছে সমৃদ্ধ। রিয়ালে থাকতেই ২০১৮ সালে জিতেছেন ব্যালন ডি’অর। মদরিচের প্রস্থানের সঙ্গে রিয়ালেও ব্যালন ডি’অরজয়ী আর কেউ রইলেন না।
আরও পড়ুনসেই কলম্বিয়ার কাছে হেরেই কোপার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় আর্জেন্টিনার১ ঘণ্টা আগেচলতি শতাব্দীর প্রথম চতুর্থাংশে, অর্থাৎ গত ২৫ বছরে এমন কিছু কখনো দেখা যায়নি। আরেকটু ভেঙে বলা যায়, গত ২৫ বছরে রিয়ালের স্কোয়াডে এমন অন্তত একজন খেলোয়াড় ছিলেন যিনি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন। মদরিচের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আড়াই দশক পর ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য হয়ে পড়েছে মাদ্রিদের ক্লাবটি। গত ২৫ বছরে ৮ জন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে ড্রেসিংরুমে পেয়েছে রিয়াল।
বর্ষসেরার ব্যক্তিগত পুরস্কার ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। সেবার জেতেন ব্ল্যাকপুলের ইংরেজ কিংবদন্তি স্ট্যানলি ম্যাথুজ। পরের তিনটি বছরেই এই ট্রফি উঠেছে রিয়ালের ঘরে। ১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে জেতেন কিংবদন্তি আলফ্রেদো ডি স্টেফানো এবং তার মাঝখানে ১৯৫৮ সালে জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি রেমন্ড কোপা।
অবিশ্বাস্য ব্যাপার, এরপর চার দশকের বেশি সময় রিয়ালে ব্যালন ডি’অর জয়ী কাউকে দেখা যায়নি। ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ ২০০০ সালে ক্লাবটির সভাপতি হওয়ার পর ‘গ্যালাকটিকোস’ গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করে দলে ভেড়ান বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দের। সেই পথ ধরেই ২০০০ সালের জুলাইয়ে রিয়ালে নাম লেখান পর্তুগিজ কিংবদন্তি লুইস ফিগো। সে বছরের ১৯ ডিসেম্বর ব্যালন ডি’অর জেতেন ফিগো এবং শুরু হয় রিয়ালের ২৫ বছরের ধারা—যেখানে ড্রেসিংরুমে অন্তত একজন ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়কে দেখা গেছেই।
আরও পড়ুনগার্দিওলার এ কোন চেহারা, ভাবনায় ফেললেন ভবিষ্যৎ নিয়েও১২ ঘণ্টা আগেফিগো যোগ দেওয়ার পরের বছর রিয়ালে নাম লেখান জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জেতায় সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন ফরাসি কিংবদন্তি। ২০০২ সালে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদো নাজারিও। ১৯৯৭ সালে ব্যালন ডি’অর জেতার পাশাপাশি ২০০২ সালে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানোয় সে বছরও বর্ষসেরার এ ট্রফি জেতেন রোনালদো।
২০০৪-০৫ মৌসুমে রিয়ালে ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড় ছিলেন চারজন—ফিগো, জিদান, রোনালদো ও মাইকেল ওয়েন। ফিগো ও ওয়েন ২০০৫ সালে রিয়াল ছাড়েন, রোনালদো ২০০৭ সালে। এর মধ্যেই অবশ্য ব্যালন ডি’অরজয়ী আরেকজনকে দলে ভেড়ায় রিয়াল। ২০০৬ সালে উড়িয়ে আনা হয় ইতালির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ফাবিও কানাভারোকে। সে বছরই ব্যালন ডি’অর জেতেন কানাভারো। রোনালদোর প্রস্থানের পর প্রায় আড়াই বছর রিয়ালের স্কোয়াডে একমাত্র ব্যালন ডি’অরজয়ী হিসেবে দিন কেটেছে কানাভারোর।
কানাভারো রিয়াল ছাড়েন ২০০৯ সালে। সে বছরই ক্লাবটিতে যোগ দেন ২০০৭ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী কাকা ও ২০০৮ সালে জয়ী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০২২ সালে ব্যালন ডি’অরজয়ী করিম বেনজেমাও রিয়ালে নাম লেখান সে বছর (২০০৯)।
রোনালদো এরপর ২০১৩, ২০১৪, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে জেতেন ব্যালন ডি’অর। ২০১৮ সালের মে মাসে রোনালদো রিয়াল ছাড়েন। এরপর মাত্র কয়েক মাস ব্যালন ডি’অরজয়ী খেলোয়াড়শূন্য ছিল রিয়াল। শূন্যতাটা ঘুচে যায় সে বছরই ৩ ডিসেম্বর মদরিচ ব্যালন ডি’অর জেতায়। এরপর বেনজেমা ব্যালন ডি’অর জিতলেও ২০২৩ সালে তিনিও রিয়াল ছাড়েন। থেকে গিয়েছিলেন শুধু মদরিচ। তাঁর প্রস্থানের মধ্য দিয়ে রিয়ালে এখন ব্যালন ডি’অর জয়ী কেউ রইলেন না।
তবে ইঙ্গিত আছে জয়ের। গত বছর ব্যালন ডি’অর জয়ে রদ্রির সঙ্গে পেরে ওঠেননি রিয়ালের উইঙ্গার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। দ্বিতীয় স্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। যদিও চলতি বছর ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে রিয়ালের খেলোয়াড়েরা বেশ পিছিয়ে। কিন্তু নতুন কোচ জাবি আলোনসোর অধীন নিশ্চয়ই এ খরা ঘুচিয়ে ফেলবে রিয়াল—সমর্থকেরা সে আশায় বুক বাঁধতেই পারেন।