হাত-পা ঝিনঝিন করে কেন, এটা কি কোনো মারাত্মক রোগের লক্ষণ?
Published: 16th, June 2025 GMT
চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় এই সমস্যাকে ‘পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি’ বলে। এর অর্থ হাত–পায়ের দূরবর্তী স্নায়ুগুলোর সমস্যা। হাতের চেয়ে পায়ে এ রোগের প্রকোপ বেশি হয়। আরও বেশি হয় পায়ের তলায়। সমস্যা বেশি হলে অনেক সময় পায়ের অনুভূতি কমে যায়। পা থেকে স্যান্ডেল খুলে গেলেও রোগী টের পান না। খসখসে একটা অনুভূতি হয়।
কেন হয়পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি অনেক কারণেই হতে পারে। তবে নিম্নোক্ত কারণগুলো অন্যতম—
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস
থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা
কিডনির রোগ
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভিটামিনের অভাব
কীভাবে বুঝবেনহাত-পা ঝিনঝিন করা, খোঁচানো, জ্বালা করা। হাত-পা অবশ হয়ে আসা। হাত-পায়ের অনুভূতি কমে যাওয়া। ব্যথা করা। হাত-পায়ের শক্তি কমে যাওয়া।
আরও পড়ুনপা ভাঁজ করে বসার কিছুক্ষণ পরেই অবশ হয়ে আসে কেন০৫ মার্চ ২০২৫পরীক্ষা-নিরীক্ষাপেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি রোগনির্ণয়ের জন্য রোগীর ইতিহাস শুনতে হবে এবং ভালো করে রোগীর শারীরিক পরীক্ষা করাতে হবে। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড হরমোন ও প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ‘নার্ভ কন্ডাকশন’ পরীক্ষা করা যেতে পারে।
চিকিৎসাপ্রথমেই খেয়াল করতে হবে রোগী এমন কোনো ওষুধ সেবন করছেন কি না, যার কারণে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হচ্ছে। যদি এ ধরনের কোনো ওষুধ রোগী সেবন করে থাকেন, তাহলে তা বন্ধ করা যায় কি না, সেটা বিবেচনা করতে হবে।
ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এবং সম্ভব হলে ইনসুলিন ব্যবহার করতে হবে। থাইরয়েডের সমস্যা শনাক্ত হলে তার চিকিৎসা করতে হবে। ভিটামিনের অভাবে নিউরোপ্যাথি হলে তা পুষ্টিকর খাবার বা ওষুধের মাধ্যমে পূরণ করা যেতে পারে।
প্রিগাবালিন ও এমিট্রিপটাইলিন জাতীয় ওষুধ হাত-পা ঝিনঝিন কমাতে পারে। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথির রোগীদের এ ওষুধগুলো দীর্ঘদিন সেবন করতে হতে পারে।
হাত-পা ঝিনঝিন করার অনুভূতি খুবই অস্বস্তিকর হলেও সঠিক কারণ নির্ণয় ও চিকিৎসায় তা নিরাময়যোগ্য। প্রয়োজনে নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডা.
নাজমুল হক, সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক
অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।
বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক।
আরো পড়ুন:
রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী
‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত
সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।
প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।
জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।
আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।
লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড
ঢাকা/লিপি