বিকেলের আলোটা ঘরের ভেতর এসে পড়ে হঠাৎ, যেন চুপচাপ কাঁদতে কাঁদতে একটা শিশু থেমে গেছে। রিজওয়ান দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে। নিচে মা বসে আছেন উঠানে– একা। পাশে ধুলোমাখা শিউলিতলা, ফুল শুকিয়ে গেছে। চার দিন হলো সে এসেছে কানাডা থেকে। অথচ এখনও মায়ের চোখে চোখ পড়েনি।
তুমি মায়ের ঘরে গেলে না কেন? রিজওয়ানের স্ত্রী সুমাইয়া জিজ্ঞেস করে।
– ‘তুমি তো জান, মা তোমাকে বউ হিসেবে কোনোদিন মেনে নেয়নি।’
রিজওয়ান জানে। মায়ের মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বিয়ে, তাদের পরিবারের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর মা আরও চুপ হয়ে গেছেন। একাই রান্না করেন, খান, কারও দরজায় দাঁড়ান না। অথচ তিনিই রিজওয়ানের সবচেয়ে কাছের মানুষ।
মা বলতেন, ‘তুই তোর বউ-সংসার করিস, কিন্তু আমায় যেন ভুলিস না।’
রিজওয়ান ভুলে যায়নি, কিন্তু মায়ের নীরব অভিমানে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিল।
পরদিন সকালে রিজওয়ান চুপচাপ গিয়ে দাঁড়ায় মায়ের দরজায়। মা জানালা দিয়ে তাকান। চোখে কোনো রকম বদল নেই। একই চুপচাপ তা। ‘মা, কথা বলবে না?’
মা চুপ। মুহূর্ত পরে বলেন, ‘তুই কথা বলার প্রয়োজনই রাখিসনি। যেদিন বউ নিয়ে বাড়ি ছাড়লি, ভেবেছিলাম সময় তোকে ফিরিয়ে দেবে, ফিরিয়েছে?’ মায়ের কণ্ঠে অভিমান, কিন্তু লুকানো এক আশ্চর্য ভালোবাসা।
মা উঠানে বসে সেলাই করছেন। রিজওয়ান গিয়ে বসে পাশে।
‘আমি ভুল করেছি মা।’ মা হাত থামান না। বলেন, ‘তোর বাবা বলেছিলেন–ছেলে যদি ভুল করে, আমি যেন বোঝাই।’
– ‘আমি বুঝেছি মা।’
মা এবার তাকান। চোখে পানি নেই, কিন্তু রিজওয়ান বোঝে, এটি ক্ষমার চোখ।
পরদিন সকালের চা মা নিজে হাতে বানান। সুমাইয়ার কাপেও দেন। সুমাইয়া অবাক হয়ে শুধু বলল, ‘আম্মা’।
মা বললেন, ‘তুমি ছেলের বউ। তোমার ভুল ছিল না, সময়টাই ছিল ভুল। এখন সময় শোধরানোর।’
মুহূর্তেই উঠানের ওপর যেন সূর্যটা একটু বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে…। v
সুহৃদ ঢাকা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ র জওয় ন
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন
রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।
ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।
অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।
ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।
স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।
ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়