বেশ সকালেই সঙ্গীসাথিদের নিয়ে জীববৈচিত্র্য, বিশেষ করে পাখি জরিপকাজে বের হই। বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে যমুনা নদীর নতুন রেলওয়ে সেতুর পূর্ব পাশে তাদের সার্ভিস সেন্টারে আমরা পৌঁছে যাই। সেখানে আগে থেকেই কয়েকজন বিদেশি ও কয়েকজন বাংলাদেশি কনসালট্যান্ট আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। জায়গাটা অত্যন্ত নীরব। পাখিদের জন্য যেন অভয়ারণ্য।
যথারীতি সবার সঙ্গে জরিপকাজের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শেষ করে সবাই বেরিয়ে পড়ি জীববৈচিত্র্য জরিপে। বিশেষ করে পাখি এবং যমুনা নদীতে স্পিডবোটে মিঠাপানির ডলফিন জরিপ শুরু করি এবং কয়েকটি ডলফিনের দেখাও পেয়ে যাই। ডলফিনগুলো এত দ্রুত পানির ওপরে ভেসে উঠে আবার ডুব দিচ্ছিল যে দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা তাক করেও ছবি তুলতে পারছিলাম না।
ছবি তুলতে ব্যর্থ হয়ে নদীর মাঝখানে একটি চরে স্পিডবোট থেকে নামি। চতুর্দিকে পাখিদের কলকাকলি শুনে মনে হচ্ছিল যে তাদের রাজ্যে আমরা কেন এসেছি, কেনই–বা তাদের বিরক্ত করছি, সেটাই বারবার তারা জানতে চাইছে। চরের মধ্যে সবাই মিলে হাঁটতে গিয়ে দেখলাম, যে পাখিগুলো আমাদের দেখে উচ্চস্বরে ডাকাডাকি করছিল, কারণ সেই পাখিগুলোর বাসায় ডিম ছিল এবং সেখানে কিছু পাখি তাদের নিজ নিজ বাসায় ডিমে তা দিচ্ছিল। দুটি ডিমসহ একটি বাসা হঠাৎই পেয়ে গেলাম। এই পাখি অত্যন্ত চিরচেনা, যার বাংলা নাম বাবু বাটান। আমরা কয়েক শ বাবু বাটান গুনে ফেললাম।
এই পাখিগুলোর উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিল নদীর চরগুলো পাখির বৈচিত্র্যের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ! বড় বড় নদীর চর এলাকায় বাবু বাটান পাখির বিচরণ ও প্রজননস্থান। এদের মূলত এশিয়ার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বিস্তৃতভাবে দেখা যায়, বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে।
এর বৈজ্ঞানিক নাম Glareola lactea, ইংরেজি নাম Small Pratincole এবং বাংলায় এটি ‘বাবু বাটান’ নামে পরিচিত। এদের দেহ সরু এবং হালকা ধূসর বর্ণের। পেট সাদাটে, পিঠ ফিকে ধূসর ও সাদা। লেজের আগা কালো। কবুতরের চেয়ে একটু আকারে ছোট।
যমুনার চরে এক গাছের নিচে বাবু বাটান পাখির জোড়া ডিম.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ষ কর
এছাড়াও পড়ুন:
কমলার বইয়ে ‘পর্দার অন্তরালের গল্প’
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই লিখেছেন সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। স্মৃতিচারণামূলক বইটির তিনি নাম দিয়েছেন ‘হান্ড্রেড অ্যান্ড সেভেন ডেজ’ বা ‘১০৭ দিন’। বইটিতে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ‘পর্দার অন্তরালের গল্প খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন’ কমলা।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার কমলা হ্যারিস নিজেই নতুন বইয়ের কথা জানান। বইটির প্রকাশক বিশ্বখ্যাত মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর বইটি বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস।
বইটি হাতে নিয়ে করা একটি ভিডিও বার্তা নিজের ভেরিফায়েড ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করেছেন কমলা হ্যারিস। সেখানে বলেন, ‘মাত্র এক বছরের কিছুটা বেশি সময় আগে আমি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নিজের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলাম। ১০৭ দিন আমি পুরো দেশ ভ্রমণ করি। আমাদের ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আধুনিক ইতিহাসে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত নির্বাচনী প্রচার ছিল এটি।’
কমলা হ্যারিস যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ও একমাত্র নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে হেরে যান তিনি। এরপর জনপরিসরে কার্যত তাঁকে তেমন একটা দেখা যায়নি। এর মধ্যে কমলা এই বইয়ের ঘোষণা দিলেন।
অনেকটা নাটকীয়ভাবে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছিলেন কমলা হ্যারিস। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আবারও ডেমোক্র্যাটদের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৮২ বছর বয়সী বাইডেনের শারীরিক সক্ষমতা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়। অনেক ডেমোক্র্যাট নেতা এর সমালোচনা শুরু করেন। এর মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের লড়াই থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে প্রার্থী হন কমলা।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন সিনেটর কমলা ভিডিও বার্তায় জানান, নির্বাচন নিয়ে বইটিতে ‘খোলামেলাভাবে’ লিখেছেন তিনি। আরও বলেছেন, বইটি পড়লে বিগত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের ‘পর্দার অন্তরালের অনেক বিষয়’ সম্পর্কে জানতে পারবেন পাঠকেরা।
কমলা হ্যারিস তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ‘প্রচার নিয়ে বিশ্ব যা দেখেছে, সেটা ছিল কেবল গল্পের একটি অংশ মাত্র। এই বই আমাদের সেই নির্বাচনী লড়াই ফিরে দেখা নিয়ে নয়। আমার সেই সময়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার খোলামেলা বিবরণ তুলে ধরেছি এখানে। আমি বিশ্বাস করি, আমি সেই সময় যা দেখেছি, যা শিখেছি ও সামনে এগিয়ে যেতে যা প্রয়োজন সেসব অন্য সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটা মূল্য রয়েছে। এই বইটি লেখার সময় আমার মনে একটি সত্য বারবার ফিরে এসেছে। আর সেই সত্যটা হলো—কখনো কখনো লড়াইয়ের জন্য সময় প্রয়োজন।’
বইয়ের আগে আরও একটি ঘোষণা দেন কমলা। গত বুধবার তিনি জানান, আগামী বছর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নির্বাচনে অংশ নেবেন না। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ২০২৮–এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কমলা হ্যারিসের আবার প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ‘উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না’।