মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির ৮০তম জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। সামরিক জান্তার কারাগারে বন্দী অবস্থায় তিনি জন্মদিন পার করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ আনা হয়েছে, বাকি জীবন তাঁকে হয় তো কারাগারে কাটাতে হতে পারে।

মিয়ানমারের দশকব্যাপী গণতন্ত্রের উত্থানের প্রধান মুখ ছিলেন সু চি। যখন দেশটি ধীরে ধীরে সেনাশাসন থেকে বেরিয়ে আসছিল, তখন তিনি আসলে দেশের কার্যত নেতা হয়ে উঠেছিলেন।

কিন্তু ২০২১ সালে সেনাবাহিনী সু চির সরকারকে উৎখাত করে আবার ক্ষমতা দখল করে এবং তাঁকে কারাবন্দী করে। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে কোভিড–১৯ বিধি ভাঙার মতো নানা অভিযোগ আনা হয়েছে। এখন তিনি ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন।

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সু চির ছেলে ৪৭ বছর বয়সী ছেলে কিম অ্যারিস বলেন, ‘এই মুহূর্তে জন্মদিন উদ্‌যাপন করা কঠিন।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু এত বছর ধরে চলছে, আমরা সহ্য করতে শিখে গেছি।’

সু চির জন্মদিনকে স্মরণীয় করে তুলতে ছেলে কিম ৮ দিনে ৮০ কিলোমিটার দৌড়েছেন এবং তাঁর মায়ের জন্য শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছ থেকে ৮০ হাজারের বেশি শুভেচ্ছাবার্তার ভিডিও সংগ্রহ করেছেন।

কিন্তু সু চি এসব কিছুই দেখতে পারবেন না। কারণ, তিনি মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে বন্দী অবস্থায় আছেন। এখান থেকে জান্তা সরকার দেশজুড়ে গেরিলা যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

কিম অ্যারিস জানান, গত দুই বছরে তাঁর মায়ের কাছ থেকে শুধু একটি চিঠি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি না, তিনি এখন কেমন আছেন।’

বিদেশে জনপ্রিয়তা কমেছে, দেশে এখনো জনপ্রিয়

সু চি মিয়ানমারে এখনো বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর মধ্যে।

তবে আন্তর্জাতিক মহলে সু চির গণতন্ত্রের প্রতীক হিসেবে অবস্থান বেশ নড়বড়ে হয়ে গেছে। কারণ, তিনি রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।

অং সান সু চির সরকার থাকা অবস্থায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। অবশ্য তাঁর পক্ষের মানুষের যুক্তি, সেনাবাহিনীর ওপর সু চির কোনো নিয়ন্ত্রণই ছিল না।

এক সময় যেসব আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিত্ব সু চিকে পুরস্কার ও সম্মাননা দিয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন দূরত্ব বজায় রাখছেন। তাঁর দ্বিতীয়বারের কারাবাস আগের মতো আন্তর্জাতিক দৃষ্টিও আকর্ষণ করতে পারছে না।

জন্মদিনে বন্দিত্ব

সু চি ছিলেন মিয়ানমারের স্বাধীনতা সংগ্রামী অং সান-এর মেয়ে। তিনি মূলত ‘ঘটনাচক্রে গণতন্ত্রের নেত্রী’ হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘ সময় বিদেশে কাটিয়ে সু চি ১৯৮৮ সালে অসুস্থ মাকে দেখতে মিয়ানমারে ফেরেন। তখন সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তিনি জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু সেনাবাহিনী তা দমন করে।

তখন সু চিকে ১৫ বছর গৃহবন্দী করে রাখা হয়। সেই বন্দিত্বকালে বেশির ভাগ সময় তিনি কাটান ইয়াঙ্গুনে পারিবারিক বাড়িতে। সেখানে দেয়ালের ওপার থেকে জনগণ তাঁর বক্তৃতা শুনত।

প্রবাসে চলে যাওয়ার শর্তে সেনাবাহিনী সু চিকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি সাহসিকতার সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেন। এতে তিনি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান এবং ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।

কিন্তু এবার সামরিক অভ্যুত্থানের ঠিক আগ মুহূর্তে সু চি জনদৃষ্টি থেকে পুরোপুরি উধাও হয়ে গেছেন।

চিকিৎসা সমস্যা ও সরকারের নীরবতা

কিম অ্যারিস বলেন, তাঁর আশঙ্কা, তাঁর মায়ের হৃৎপিণ্ড, হাড় ও দাঁতের সমস্যাগুলোর চিকিৎসা হচ্ছে না।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার মাঝেমধ্যে সু চির অবস্থা নিয়ে সামান্য তথ্য দেয়।
গত মার্চে সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেন, সু চি সুস্থ আছেন এবং নিয়মিত তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। তাঁর গুরুতর কোনো কিছু নেই।

সু চি ২০১০ সালে প্রথমবার বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান। এরপর তাঁর দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ২০১৫ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়। তবে সেনাবাহিনীর তৈরি নিয়মের কারণে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে। তবে অনেক দলই নির্বাচন বর্জন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা একসময় সু চির অহিংস রাজনীতির সমর্থক ছিলেন, কিন্তু এখন তাঁরা জান্তার বিরুদ্ধে বন্দুক হাতে তুলে নিয়েছেন।

সু চির ছেলে কিম অ্যারিস বলেন, যদি সু চি মুক্তি পান, তবে তিনি সম্ভবত আর সরাসরি রাজনৈতিক নেতৃত্বে থাকবেন না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণতন ত র সরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

‘পূর্ব আলোচনা ছাড়া’ জাতীয় পার্টির সম্মেলন স্থগিত, ‘বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন’ দুই কো-চেয়ারম্যান

রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ২৮ জুন জাতীয় পার্টির (জাপা) দশম জাতীয় সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই সম্মেলন স্থগিতের কথা জানায় জাপা। দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই সম্মেলন স্থগিত করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জাপার জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অনভিপ্রেত। এককভাবে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া দলীয় গঠনতন্ত্র, প্রেসিডিয়ামের সম্মান ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। আমরা এই সিদ্ধান্তে বিস্মিত ও গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

জাতীয় পত্রিকার মাধ্যমে দলের দশম জাতীয় সম্মেলন স্থগিতের বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ এই দুই নেতা। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘আমরা মনে করি, ২৮ জুনের জাতীয় সম্মেলন দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দলীয় গঠনতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা এবং নির্বাচন কমিশনের নিয়ম ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী বৈধতা নিশ্চিতের পরিপ্রেক্ষিতে এই সম্মেলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই সম্মেলনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে গণতান্ত্রিকভাবে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করা দলীয় গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ।’

আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেছেন, গত ২০ মে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে কোনো কারণবশত বরাদ্দকৃত সম্মেলনস্থল পাওয়া না গেলে বিকল্পভাবে রাজধানীর কাকরাইলের পাইওনিয়ার রোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উন্মুক্ত স্থানে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই সিদ্ধান্ত এখনো বহাল আছে।

জাতীয় পার্টির এই দুই জ্যেষ্ঠ নেতার আশা, জাপার চেয়ারম্যান গঠনতন্ত্র ও প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে ২৮ জুনই বিকল্প স্থান হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই দশম জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন নিশ্চিত করবেন। তাঁরা বলেছেন, জাতীয় পার্টি একটি গণতান্ত্রিক দল। গঠনতন্ত্রের প্রতি সম্মান ও অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের চর্চাই হোক তাদের এগিয়ে চলার প্রধান শক্তি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ: ঢাকাকেন্দ্রিক অলিগার্কি থেকে তৃণমূলের মুক্তি কীভাবে
  • সংকট এখনও কাটেনি, বললেন রিজভী
  • মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখাপ্রধানের সঙ্গে জামায়াতের বৈঠক
  • যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনৈতিক শাখাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক করল জামায়াত
  • ‘পূর্ব আলোচনা ছাড়া’ জাতীয় পার্টির সম্মেলন স্থগিত, ‘বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন’ দুই কো-চেয়ারম্যান
  • লন্ডন বৈঠক এবং গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রশ্ন 
  • প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরে যেতে হবে
  • রাজনীতির নতুন সমীকরণে উপেক্ষিত প্রসঙ্গ
  • গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান চান আলী রীয়াজ