আসন্ন নির্বাচনে পুলিশকে নিরপেক্ষ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এর আগে দেড় ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন। সভায় আগামী ফেব্রয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার নিয়ে আলোচনা হয়।

নির্বাচনে যদি পুলিশ কোনো দলকে বিশেষ সুবিধা দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি করেছি আমরা। কারও কোনোরকম নেগলিজেন্স থাকলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আগে জিডি করে রাখা হতো, শুধু কিন্তু এবার সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশের প্রতি আমার নির্দেশনা হচ্ছে, নির্বাচন হতে হবে ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ও উৎসবমুখর। পুলিশের কেউ অনৈতিক কাজে জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’

বিগত নির্বাচনে যেসব ওসি বিভিন্ন থানায় দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের অনেকেই এখন ঢাকা মহানগর পুলিশের বিভিন্ন থানায় ওসি। তাঁদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা বলেছি ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ নির্বাচনে যারাই ছিল, তাদের অধিকাংশকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করব। কিন্তু আমাদেরও একটা সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা সবাইরে তো পারব না। আমরা দেখব প্রথম যারা তিনটা নির্বাচনে জড়িত ছিল, তাদের বাদ দেব। তারপরে দুইটার সাথে জড়িত ছিল তারা, তারপরেও যদি দেখি জনবল রয়ে গেছে, তখন একটার সাথে জড়িতদের বাদ দিয়ে দেব। আমি তো নিয়োগ দিয়ে নতুন ওসি নিয়ে আসতে পারব না। তারপর দেখব, যে একটা নির্বাচনে জড়িত ছিল, তার বিরুদ্ধে তেমন কোনো অভিযোগ নেই, তাকে তো আমাদের কাজে লাগাতে হবে।’

জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকে পালিয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের বাইরে যাঁরা পালিয়ে আছেন, তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশকে নানাভাবে বিশৃঙ্খল করার জন্য দেশে এবং দেশের বাইরে থেকেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য আসছে।

নির্বাচনের আগে অস্ত্র উদ্ধারের অগ্রগতি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাউজানে অভিযানে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কথা জানিয়ে বলেন, ‘রাউজান, ফটিকছড়ি একটু কঠিন এলাকা। আগেও ছিল, এখনো কঠিন। এসব জায়গায় অপরাধ করে অপরাধীরা পাহাড়ে চলে যায়। অন্য এলাকার মত সমতল না।’

নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা থাকছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা এখনই আছে। নির্বাচনের সময় বন্ধ হবে কেন? আমরা বন্ধ করছি নাকি? নির্বাচন আসুক, সে সময় জিজ্ঞাস করিয়েন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত ১৪ মাসে ৪০টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথ্য এসেছে, কারা এসব হত্যাকাণ্ডে জড়িত, এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী বা যেকোনো বাহিনী বা যার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড হোক না কেন, প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে।’

বৈঠকে পুলিশ কমিশন নিয়ে কোনো কথা হয়নি জানালেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, তবে পুলিশ কমিশন হয়ে যাবে।

বিমান বন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন লাগার পর সেখানকার সুরক্ষিত ভল্ট ভেঙে অস্ত্র চুরি হয়েছে, এমন তথ্য আসছে। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ড তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের জন্য চারটি–পাঁচটি দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দু-একটি দেশের বিশেষজ্ঞ এসেছেন। আর তদন্তের পর জানা যাবে, চুরি হয়েছে কি হয়নি। যদি চুরি হয়ে থাকে, তাহলে কার মাধ্যমে হয়েছে, কে দায়ী, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ হ ঙ গ র আলম চ ধ র আইন র আওত য়

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের একচ্ছত্র ক্ষমতা ম্লান হলো মাত্র দুই দিনেই

চলতি বছরের শুরুতে ক্ষমতায় বসার পর থেকে কী করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! দেশ–বিদেশে যুগের পর যুগ ধরে চলে আসা রীতিনীতি তছনছ করে দিয়েছেন। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, মিত্রদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শহরগুলোয় সেনা মোতায়েন করেছেন, সরকারি দপ্তরগুলো ওলট–পালট করেছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একপ্রকার নাজেহাল করে ছেড়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একচ্ছত্র ক্ষমতা অবশেষে কিছুটা ম্লান হয়েছে। তা ঘটেছে মাত্র দুই দিনে। মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়রসহ বিভিন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতারা জয় পেয়েছেন। আর বুধবার মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকেরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে সংবিধান ট্রাম্পকে যে জরুরি ক্ষমতা দিয়েছে, তা ব্যবহার করে তিনি বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করতে পারেন কি না?

ব্যাপক কূটকৌশলের পরও নিউইয়র্কের মেয়র হওয়া থেকে জোহরান মামদানিকে ঠেকাতে পারেননি ট্রাম্প। ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সিতে জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আবিগালি স্প্যানবার্গার ও মিকি শেরিল। যদিও এই এলাকাগুলোয় ডেমোক্র্যাটদের প্রভাব বেশি, তারপরও তাঁরা যে বড় জয় পেয়েছেন, তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি রিপাবলিকানরা।

এই জয়ের আগে থেকেই যদিও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া শুরু করেছিলেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গাভিন নিউসম ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, ‘ভালুককে খোঁচা দিলে সে গর্জন করে রুখে দাঁড়াবেই।’ ইলিনয়ের গভর্নর ও আরেক ডেমোক্র্যাট জে বি প্রিটজকার ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেছেন। আদালতে ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছে তহবিল ছাঁটাইয়ের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও।

মধ্যবর্তী নির্বাচন কঠিন হবে

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ‘অগাধ’ ক্ষমতা। তবে ট্রাম্পের মতো কোনো প্রেসিডেন্টই হোয়াইট হাউসকে রাজদরবার মনে করেননি। রিপাবলিকান কংগ্রেসে ট্রাম্পের এতটাই নিয়ন্ত্রণ যে তাঁর আগ্রাসী ক্ষমতাচর্চার ওপর নজরদারি করার মতো কেউ নেই। আর ট্রাম্পের জীবনের একটি মন্ত্র হলো—সব বাধার জবাব দিতে হবে আগ্রাসীভাবে। আর প্রতিটি হিসাব যথাযথভাবে চুকিয়ে দিতে হবে।

সে হিসেবে মঙ্গলবারের ডেমোক্র্যাটদের জয়ের জবাব আগ্রাসীভাবে দিতে পারেন ট্রাম্প। ইতিমধ্যেই তিনি পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছেন। মামদানির জয়ের আগেই তিনি নিউইয়র্কে কেন্দ্রীয় তহবিল কমানোর হুমকি দিয়েছেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন এবং সময়ের আগেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মানচিত্র পুননির্ধারণের চেষ্টা করছেন।

ট্রাম্প যা–ই করুন না কেন, তাঁর ওপর মার্কিনরা যে আস্থা হারাচ্ছেন, তা সম্প্রতি কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে। তাঁরা মনে করছেন, ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। অর্থনীতিও নড়বড়ে। আর কয়েকটি নির্বাচনের ফল দিয়ে ভবিষ্যৎ নির্ধারণ না হলেও মঙ্গলবারে ডেমোক্র্যাটদের জয় এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচন রিপাবলিকানদের জন্য সহজ হবে না।

আরও পড়ুনমামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক২ ঘণ্টা আগে

ট্রাম্পের ভুল ধারণা

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল্যবোধের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এক অসাংবিধানিক ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন রয়েছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। বুধবারেই ট্রাম্প বলেছেন, ‘তাঁরা বলেন, আমি নাকি রাজা। আমি তা নই।’ তবে গত আগস্টে মন্ত্রিসভার বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্টই কিন্তু বলেছিলেন, ‘আমি যা চাই, তার সবকিছু করার অধিকার আমার আছে।’

প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সম্পর্কে এই ভুল ধারণা হয়তো ট্রাম্প পেয়েছেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীল বিচারকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে। এই বিচারকেরাই চলতি বছরে এক ফৌজদারি মামলার রায় ট্রাম্পের পক্ষে দিয়েছিলেন। ওই মামলার রায়ে তাঁরা বলেছিলেন, ক্ষমতায় থাকাকালে যেকোনো সরকারি কর্মকাণ্ডের জন্য যথেষ্ট দায়মুক্তি পাবেন একজন প্রেসিডেন্ট।

সেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদেরই এখন শুল্ক আরোপ নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতার ব্যবহারে অসন্তুষ্ট মনে হয়েছে। বুধবার তাঁরা এই ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ থেকে বোঝা গেছে, রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের কাছে বিচার বিভাগের হস্তক্ষেপের যে অধিকার রয়েছে, তা সাংবিধানিকভাবে কাজ করছে। এতে কিছুটা হলেও ট্রাম্পের ক্ষমতাচর্চা ম্লান হয়েছে। তবে ট্রাম্প তো ট্রাম্পই। একে কতটা তিনি তোয়াক্কা করেন, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

আরও পড়ুনপ্রভাবশালী মার্কিন ডানপন্থীরা কীভাবে মামদানিকে আইএসের সঙ্গে জড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ