নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনে আজ ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রায় ৫০ লাখ নিবন্ধিত ভোটার আজ ৪ নভেম্বর নগরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের লক্ষ্যে ভোট দেবেন।

নিউইয়র্ক সিটি বোর্ড অব ইলেকশনের তথ্য অনুযায়ী, ৯ দিনে আগাম ভোট পড়েছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৩১৭টি। এই হার ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি।

সর্বশেষ রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানির প্রতি ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার সমর্থন জানিয়েছেন। অন্যদিকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোর প্রতি সমর্থন রয়েছে ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটারের। এই জরিপ অনুযায়ী কুমোর চেয়ে ১৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন জোহরান। রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার প্রতি সমর্থন রয়েছেন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ।

তবে গতকাল সোমবার রাতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমোর প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন রিপাবলিকান দলীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক। এই দুই প্রভাবশালীর শেষ মুহূর্তের সমর্থন ভোটারদের মন পরিবর্তন করবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্টস অব আমেরিকার (ডিএসএ) সদস্য জোহরান মামদানি তাঁর ঘোষিত নীতির মাধ্যমে তরুণ ও উদার ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যেমন সবার জন্য বিনা মূল্যে শিশুযত্ন, বিনা মূল্যে বাস–সেবা এবং বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট থাকা।

নিউইয়র্ক নগরে প্রতি চার বছর পর মেয়র নির্বাচন হয় এবং কোনো ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে মেয়র থাকতে পারেন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস (ডেমোক্র্যাট) ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে দায়িত্বে আছেন। তবে তিনি এবার দলের মনোনয়ন পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও পরে তিনি নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন।

এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে গত বছর ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। অবশ্য পরে গত এপ্রিলে আদালত তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ খারিজ করে দেন।

এবারের নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে—তিনটি শিবিরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নগরে উদারপন্থী, মূলধারা এবং রক্ষণশীল রাজনীতিকেরা মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছেন।

জরিপ কতটা নির্ভরযোগ্য

রিয়েলক্লিয়ারপলিটিকস-এর তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন জরিপে কুমোর সঙ্গে জোহরান মামদানির ব্যবধান ৩ থেকে ২৫ পয়েন্ট পর্যন্ত।

তবে প্রতিটি জরিপেরই কিছু মার্জিন অব এরর (ভুলের পরিমাণ) থাকে। জরিপকারীরা জনমতের প্রতিনিধিত্বমূলক নমুনা তুলে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রকৃত সমর্থনের হার ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে কয়েক পয়েন্ট এদিক-ওদিক হতে পারে।

এ ছাড়া বিভিন্ন জরিপে সিদ্ধান্তহীন ভোটারদের হিসাব করার পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় ফলেও পার্থক্য দেখা যায়।

তবে বিভিন্ন জরিপের ফল একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে সেই মার্জিন অব এরর কিছুটা কমে যেতে পারে।

বছরের শুরুর দিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রাথমিক বাছাইয়ে অধিকাংশ জরিপ ভুল ছিল। সেগুলোতে কুমোর জয় সহজ হবে বলে ধারণা দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে জোহরান মামদানি বিপুল ব্যবধানে জয় পান।

জরিপ কীভাবে করা হয়

এমারসন কলেজ, ম্যারিস্ট কলেজ ও কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির মতো প্রতিষ্ঠান নিয়মিত জনমত জরিপ চালায়, যাতে ভোটাররা কাকে সমর্থন করছেন এবং কোন কোন বিষয় তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায়।

এই জরিপে র‌্যানডম স্যাম্পলিং (দ্বৈবচয়ন) পদ্ধতিতে ফোন, মেসেজ বা অনলাইনে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদের কাছে জানতে চাওয়া হয়—কোন প্রার্থীকে তাঁরা ভোট দেবেন, কোন ইস্যুগুলো তাঁদের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলছে, বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের সমর্থন কেমন ইত্যাদি।

প্রতিটি জরিপে নমুনার আকার (স্যাম্পল) এবং ভুলের সীমা উল্লেখ থাকে, যার ফলাফল কতটা নির্ভুল, তা বুঝতে সাহায্য করে।

২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিউইয়র্ক নগরে ৫১ লাখ ভোটার নিবন্ধিত ছিলেন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাট, ১১ শতাংশ রিপাবলিকান। এ ছাড়া প্রায় ১১ লাখ ভোটার কোনো দলের পক্ষে নিবন্ধিত নন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ধনকুবেরদের ৪ কোটি ডলার ব্যয়েও জিততে পারেননি কুমো

যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ধনকুবের বিল অ্যাকম্যান এবং নিউইয়র্ক শহরের তিনবারের মেয়র ও ধনকুবের মাইকেল আর. ব্লুমবার্গসহ আরও কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী অ্যান্ড্রু কুমোর পেছনে লাখ লাখ ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এরপরও তাঁরা কুমোকে জেতাতে পারেননি; পারেননি জোহরান মামদানিকে হারাতে।

মামদানির বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে বিশাল বিশাল ডিজিটাল বিলবোর্ড ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিজ্ঞাপনে বিশেষভাবে মনোযোগ দিয়েছিলেন কুমোর তহবিলের জোগানদাতারা। এসব বিজ্ঞাপনের মূল বার্তা ছিল—মামদানি একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী, তিনি ফিলিস্তিনের সমর্থক এবং তুলনামূলকভাবে কম অভিজ্ঞ।

প্রচারের শেষ দিকে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপনগুলোর ভাষাকে ‘খোলামেলা ঘৃণা’ অভিহিত করেছিলেন মামদানি। কোনো কোনো বিজ্ঞাপনের ভাষা ইসলাম বিষয়ে ঘৃণা (ইসলামোফোবিয়া) ছড়াচ্ছিল। কুমোর পক্ষে তহবিল সংগ্রহকারী ‘ফর আওয়ার সিটি’ নামের প্ল্যাটফর্মের একটি বিজ্ঞাপনে বিধ্বস্ত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের সামনে হাস্যোজ্জ্বল মামদানির ছবি ব্যবহার করেছিল।

কুমোর পক্ষের রাজনৈতিক তহবিল কমিটিগুলো (প্যাক) ৪ কোটি ডলারের বেশি অর্থ সংগ্রহ করেছিল। অন্যদিকে মামদানির পক্ষের প্যাকগুলো সংগ্রহ করতে পেরেছিল মাত্র ১ কোটি ডলারের মতো অর্থ।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে সর্বশেষ হিসাবে কোন প্রার্থী কত ভোট পেলেন২ ঘণ্টা আগে

কুমোর পক্ষে যেসব বড় বা সুপার প্যাক অর্থ সংগ্রহ ও প্রচারণা চালিয়েছে ‘ফিক্স দ্য সিটি’ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। মামদানিসহ কুমোর আরেক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে প্ল্যাটফর্মটি ২ কোটি ৯০ লাখের বেশি ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু তাদের এত অর্থ সফলতার মুখ দেখেনি।

নির্বাচনী প্রচারকে কেন্দ্র করে কুমোর দিক থেকে আসা আক্রমণগুলোর জুতসই জবাব দিয়েছেন মামদানি। তিনি ভোটারদের বারবার বলেছেন, এবারের মেয়র নির্বাচন ‘অলিগার্ক বা ধনী শ্রেণি বনাম গণতন্ত্রের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি তিনি ধনীদের ওপর কর বসানোর পরিকল্পনাও ঘোষণা করেছেন।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র কে এই জোহরান মামদানি১১ ঘণ্টা আগে

যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধিক জনসংখ্যার শহরের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি বলেছেন, ধনীরা নিউইয়র্কবাসীর উন্নত জীবনযাত্রার পথে বাধা। ক্ষমতায় এতে তিনি নিউইয়র্কবাসীর সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মামদানি একই সঙ্গে ভারতের গর্ব, আবার মোদির মতো নেতাদের কঠোর সমালোচক
  • ‘মামদানি মডেল’ কি নিউইয়র্কের বাইরেও ছড়িয়ে পড়বে
  • ‘সালাম বম্বে!’, থেকে ‘মুনসুন ওয়েডিং’, মামদানির মাকে কতটা চেনেন
  • ট্রাম্প–মামদানি কি সমানে সমান
  • মামদানিপত্নী কে এই রমা, কীভাবে তাঁদের প্রেম–পরিণয়
  • জোহরান মামদানির ‘ট্রানজিশন’ দলের সবাই নারী
  • জোহরান মামদানিকে বেছে নিয়ে আমরা সার্বভৌমত্ব হারিয়েছি: ডোনাল্ড ট্রাম্প
  • সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
  • মামদানির জয়, ট্রাম্পকে বার্তা
  • ধনকুবেরদের ৪ কোটি ডলার ব্যয়েও জিততে পারেননি কুমো