বহুরূপী শিক্ষাবৈষম্যের বহুমাত্রিক আঘাত
Published: 4th, November 2025 GMT
২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের উৎস ছিল শিক্ষাবৈষম্যের অনেক ক্ষেত্রের মধ্যে একটি—শিক্ষার সমাপ্তিতে কর্মসংস্থানে বৈষম্য, যা কোটা আন্দোলন নামে পরিচিত। গণ–অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলো। রাষ্ট্র ও সমাজে রূপান্তরের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে, শিক্ষা রূপান্তরের উদ্যোগ এতে থাকবে—এ রকম আশ্বাস পাওয়া গেল অধ্যাপক ইউনূসের জাতির উদ্দেশে প্রথম গণভাষণে (২৫ আগস্ট ২০২৪)। কিন্তু প্রথমেই খটকা লাগল, যখন দেখা গেল রাজনীতি, অর্থনীতি ও অন্যান্য বিষয়ে সংস্কারের পরামর্শ দেওয়ার জন্য ১১টি উচ্চমর্যাদার কমিশন গঠন করা হলো, কিন্তু শিক্ষার জন্য কোনো কমিশন গঠন করা হলো না।
শিক্ষার সুযোগ ও মানের বৈষম্য ঔপনিবেশিক কালেই শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের আধা ঔপনিবেশিক আমলেও শিক্ষাব্যবস্থার কাঠামোগত পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রণীত কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন থেকে শুরু করে ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে অন্তত মৌলিক শিক্ষার স্তর পর্যন্ত রাষ্ট্রের দায়িত্বে সর্বজনীন সুযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে—এই প্রতিশ্রুতি ছিল। সেই শিক্ষানীতি এখনো বলবৎ আছে। কিন্তু সব শিশুর জন্য গ্রহণযোগ্য মানসম্মত শিক্ষার অধিকার বা সুযোগ ২০২৫ সালেও প্রতিষ্ঠিত হয়নি; বরং শিক্ষাব্যবস্থাই সমাজের বিদ্যমান বহুমাত্রিক বৈষম্যকে আরও পাকাপোক্ত করার ইন্ধন জোগাচ্ছে।
২
শিক্ষার সংকটের বর্ণনা হিসেবে বৈষম্য কথাটি বহুল আলোচিত। শিক্ষার নানা বিদ্যমান সমস্যা, ব্যক্তি ও সমাজজীবনে এর প্রতিক্রিয়া বৈষম্যের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সমস্যার প্রকৃতি বোঝা ও সমাধানের পথ খোঁজা সহজ হতে পারে। সে জন্য শিক্ষার বৈষম্যের প্রকাশ ও স্বরূপ বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থার তিনটি উপাদানে বৈষম্যের প্রতিফলন ঘটে—শিক্ষার সুযোগ প্রাপ্তি বা অভিগম্যতা, শিক্ষার সংস্থান ও সেবার মান এবং শিক্ষা থেকে অর্জিত ফল। অভিগম্যতা সাধারণত শিক্ষার সংখ্যাগত বিস্তার দিয়ে বোঝানো হয়। এটাকেই শিক্ষার অগ্রগতির বয়ান হিসেবে সব ক্ষমতাসীন সরকার প্রচার করে। কিন্তু এখানে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। প্রথমত, গড় ভর্তির হার থেকে সমাজের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর চিত্র পাওয়া যায় না। দারিদ্র্য অভিগম্যতায় এক বড় বাধা; কারণ, সরকারি বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও আসলে প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়া বা কোচিং অপরিহার্য মনে করা হয়। ২০২২ সালে শিশুশ্রম জরিপে দেখা যায়, ৫-১৭ বছরের শিশুদের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ বা প্রায় ১৮ লাখ শিশুশ্রমে নিযুক্ত ছিল, যা তাদের পড়ালেখা ব্যাহত করেছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক শিশু ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত ছিল, যা তাদের জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ এখনো শহরের বিদ্যালয় থেকে পিছিয়ে আছে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারের কাছে ইয়াংওয়ান, অর্ধবিলিয়ন ছাড়িয়ে হা-মীম, মণ্ডল ও ডিবিএল
বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে শীর্ষ অবস্থানটি দক্ষিণ কোরীয় ব্যবসায়ী কিহাক সাংয়ের মালিকানাধীন ইয়াংওয়ান করপোরেশনের। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের মালিকানাধীন হা-মীম গ্রুপ।
ইয়াংওয়ান ও হা-মীম ছাড়াও রপ্তানিতে সেরা দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা বাকি আট শিল্প গ্রুপ হচ্ছে মণ্ডল গ্রুপ, ডিবিএল গ্রুপ, অনন্ত, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, পলমল গ্রুপ, প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ ও মাইক্রো ফাইবার গ্রুপ।
সেরা দশে থাকা নয়টি শিল্প গ্রুপের রপ্তানির ৯০ থেকে ১০০ শতাংশই তৈরি পোশাক। এই তালিকায় ব্যতিক্রম শুধু প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে শুরু করে জুতা, আসবাব, প্লাস্টিক ও হালকা প্রকৌশল পণ্য—প্রায় সবই আছে শিল্প গ্রুপটির রপ্তানির তালিকায়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রপ্তানি পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে প্রথম আলো বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের শীর্ষ ১০ শিল্পগোষ্ঠীর এই তালিকা তৈরি করেছে। এনবিআরের পরিসংখ্যান থেকে স্থানীয় বা প্রচ্ছন্ন রপ্তানি ও নমুনা রপ্তানি বাদ দিয়ে প্রকৃত রপ্তানির হিসাব নেওয়া হয়েছে।
এনবিআরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশ থেকে মোট ৪৬ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৬৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শীর্ষ দশ গ্রুপের সম্মিলিত রপ্তানির পরিমাণ ৫ দশমিক ২৫ বিলিয়ন বা ৫২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা মোট রপ্তানির ১১ শতাংশ।
গত ২০২৪–২৫ অর্থবছরে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক শিল্পগোষ্ঠী