মৌলভীবাজারে উপজেলা সম্মেলন বাতিলের দাবিতে বিএনপির একাংশের বিক্ষোভ
Published: 19th, June 2025 GMT
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন কমিটি এবং উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল বাতিলের দাবি জানিয়েছে দলটির একাংশ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজার সদর উপজেলা বিএনপি ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের একাংশ এই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে।
দুপুরে মৌলভীবাজার শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এরপর শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কুসুমবাগ এলাকায় গিয়ে প্রতিবাদ সভার মাধ্যমে শেষ হয়। এ সময় বক্তারা দাবি করেন, অবিলম্বে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন কমিটি এবং উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ও কাউন্সিল বাতিল করতে হবে। নিরপেক্ষ ও নির্যাতিত নেতা–কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত ও সমন্বয় করে ইউনিয়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন করে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার দাবি জানান তাঁরা।
প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সদর উপজেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মুহিতুর রহমান। সদর উপজেলা কমিটির সদস্য ওয়াহিদুর রহমানের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান, সদর উপজেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য খালিছুর রহমান, সাবেক পৌর কাউন্সিলর স্বাগত কিশোর দাস চৌধুরী, বিএনপির নেতা মাহবুব ইজদানী, সেলিম মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন প্রমুখ।
উপজেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুনের সম্মেলন ও কাউন্সিলকে সফল করতে সদর উপজেলা কমিটির পক্ষ থেকে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ পাঁচটি পদে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। এতে সভাপতি পদে দুজন, সাধারণ সম্পাদক পদে দুজনসহ বিভিন্ন পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
কাউন্সিল সম্পন্ন করতে গঠিত নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ব্যালট পেপার ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা মুদ্রণের কাজ চলছে। প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা, পোলিং এজেন্ট নির্বাচন করার কাজ শেষ। কাউন্সিলে ছয়টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হবে। সদর উপজেলার ৭১ সদস্যবিশিষ্ট ১৩টি ইউনিটের ৯২৩ জন ভোটার। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী, জাতীয় কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা কমিটির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন এবং সদস্যসচিব আব্দুর রহিম রিপন উপস্থিত থাকবেন।
বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা প্রসঙ্গে সদর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক বদরুল আলম আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা এই প্রতিবাদ সভা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে। মুহিতুর রহমানসহ তাঁদের পক্ষের নেতা-কর্মীদের মতামত অনুযায়ী ১৩০ জনকে উপজেলার বিভিন্ন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এখন আর তাঁদের দাবি অনুযায়ী সম্মেলন বাতিলের সুযোগ নেই। আর মাত্র দুই দিন আছে। কেন্দ্রের নির্দেশে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন বলেন, ‘আমরা উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিকে বলেছি সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি করতে। ইউনিয়ন ও উপজেলা কমিটি সেইভাবে করা হয়েছে। এই আলোকে নির্বাচন কমিশন করে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য আমরা এখন কার কী বক্তব্য, সেটা জানার চেষ্টা করছি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কম ট র সদস য সদর উপজ ল র ক উন স ল র রহম ন ন কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
শরীয়তপুর শিল্পকলা একাডেমি: যেখানে ‘শিল্প-বাণিজ্য’ আছে, ‘কলা’ নেই
শরীয়তপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম বন্ধ আছ এক বছরের বেশি সময় ধরে। একাডেমির মাঠে এক মাস ধরে চলছে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা।
জেলা শিল্পকলা একাডেমি সূত্র জানায়, জেলা শহরের তুলাসার মৌজায় ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে জেলা শিল্পকলা একাডেমির অবস্থান। তিন কক্ষের একটি টিনশেডের আধা পাকা ঘরে ১৯৮০ সালে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫ বছর ধরে সেই ঘরেই একাডেমির কার্যক্রম চলছে।
শিল্পকলা একাডেমিতে সংগীত, নৃত্য, নাটক, আবৃত্তি, চারুকলা ও তালযন্ত্র বিভাগ আছে। বিভাগগুলোতে শিশু-কিশোরেরা প্রশিক্ষণ নেয়। এ বছর সংগীত ও নৃত্য বিভাগে ৬৮ জন ভর্তির তথ্য আছে। অন্য বিভাগগুলোতে কতজন ভর্তি হয়েছে, সে তথ্য তাদের কাছে নেই। আগের বছরগুলোতে কোন বিভাগে কত শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তার কাছে নেই।
জেলা কালচারাল অফিসার মোহাম্মদ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানুয়ারি মাসে শরীয়তপুরে যোগ দিয়েছেন। এর পর থেকে শিল্পকলার কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা করছেন। প্রশিক্ষণ বিভাগগুলোতে প্রশিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম চলছে। গত মে মাসে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল, ১৪ আগস্ট নিয়োগ পরীক্ষা হয়েছে। সেখানে সব বিভাগের প্রশিক্ষক পাওয়া যায়নি। সংগীত, চারুকলা ও তালযন্ত্রের (তবলা) প্রশিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আর নৃত্য, নাটক ও আবৃত্তির প্রশিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি আবার দেওয়া হবে।
কয়েকজন অভিভাবকের ভাষ্য, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকদের নিয়োগ বাতিল করা হয়। এর পর থেকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শিল্পকলা মাঠে শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজন করার জন্য নিউ স্টাইল মার্কেটিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক গত ১২ আগস্ট ওই প্রতিষ্ঠানকে এক মাসের জন্য সেখানে মেলার আয়োজন করার অনুমতি দেন। বর্তমানে শিল্পকলা একাডেমি মাঠের ওই মেলায় বিভিন্ন পণ্যের ৫৫টি দোকান বসানো হয়েছে।
জেলা শিল্পকলা একাডেমির আশপাশে আছে ১০০ শয্যার সদর হাসপাতাল, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, জেলা মহিলা সংস্থার কার্যালয়, শিশু একাডেমি, শিশুদের বিনোদনের শরীয়তপুর পার্ক ও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। মেলার কারণে ওই এলাকায় এবং সদর হাসপাতালের সামনে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হাবীবুর রহমান বলেন, ‘জেলা হাসপাতালের সামনে এমন একটি মেলার অনুমতি কীভাবে দেওয়া হয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। ওই মেলার কারণে হাসপাতালের প্রবেশমুখে সার্বক্ষণিক যানজট লেগে থাকে।’
শরীয়তপুরের কবি ও সাহিত্যিক শ্যামসুন্দর দেবনাথ বলেন, ‘একটি জেলার সরকারি পর্যায়ে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হচ্ছে শিল্পকলা। তা কীভাবে এক বছর ধরে বন্ধ থাকতে পারে, আমাদের বোধগম্য নয়। এই প্রজন্মের কিশোর ও তরুণদের শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি এমনিতেই আগ্রহ কম। তার ওপরে সংস্কৃতির প্রশিক্ষণকেন্দ্র বন্ধ রাখা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়।’
সার্বিক বিষয়ে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগম বলেন, শিল্পকলা একাডেমির মাঠে এক মাসের জন্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অনুমতি দেওয়ার আগে তিনি জানতেন না, স্থানটি হাসপাতালের সামনে। আর নানা কারণে শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক নিয়োগে দেরি হচ্ছে। নিয়োগপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। শিগগিরই শিল্পকলার কার্যক্রম চালু করা হবে।