বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) বা জরিপে সরকারি সেবা নিতে প্রায় ৩২ শতাংশ নাগরিককে ঘুষ দিতে হয় বলে জানানো হয়েছে। এর অর্থ হলো, প্রতি তিনজন নাগরিকের মধ্যে একজনকে সরকারি সেবা নিতে ঘুষ দিতে হয়।

গত ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ৮৪ হাজার ৮০৭ নারী-পুরুষ বিবিএস পরিচালিত এই জরিপে অংশ নেন। জরিপের তথ্যানুসারে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ-দুর্নীতি হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে। গত এক বছরে বিআরটিএতে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩ দশমিক ২৯ শতাংশ ঘুষ–দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ৬১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, পাসপোর্ট অফিসে ৫৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ভূমি নিবন্ধন অফিসে ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষকে সেবা নিতে গিয়ে ঘুষ দিতে হয়েছে।

জরিপে নাগরিকের নিরাপত্তার বিষয়টিও উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, নারীর চেয়ে পুরুষেরা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। প্রতি পাঁচজন নারীর একজন অর্থাৎ ২০ শতাংশ সন্ধ্যায় একা চলাফেরা করতে নিরাপদ বোধ করেন না। বিপরীতে ৮৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ একা চলাফেরায় নিরাপদ বোধ করেন। এ ছাড়া গত এক বছরে দেশের ১৯ দশমিক ৩১ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জরিপে উল্লেখ করা হয়। এখানেও নারীরা বেশি বৈষম্য বা হয়রানির শিকার হন।

বৃহস্পতিবার পরিসংখ্যান ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে জরিপের তথ্য তুলে ধরেন সিপিএস প্রকল্পের পরিচালক রাশেদ-ই-মাসতাহাব। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ফেব্রুয়ারিতে নেওয়া বিবিএসের জরিপে গত এক বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরা হলে অর্ধেক সময় ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ও বাকি অর্ধেক অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের। কিন্তু কোনো সরকারের আমলে সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি–ভোগান্তি কমেছে বলে মনে হয় না।

সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবিএসের জরিপের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার জরিপের মিল আছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপে দেখা যায়, পাসপোর্ট নিতে গিয়ে দেশের মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির শিকার হন। বিবিএসের জরিপে শীর্ষে আছে বিআরটিএ। টিআইবি জরিপে এটা চতুর্থ নম্বরে। বিবিএসের জরিপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা দ্বিতীয় নম্বরে। আর টিআইবির জরিপে এর অবস্থান পঞ্চম।

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আশা করা হয়েছিল, সরকারি সেবা নিতে মানুষ ভোগান্তি ও দুর্নীতি থেকে রেহাই পাবেন। কিন্তু নম্বরের হেরফের হলেও সরকারি সেবা খাতে দুর্নীতির মাত্রা যে কমেনি, বিবিএসের জরিপই তার প্রমাণ।

সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা নিতে জনগণকে যে কী পরিমাণ ভোগান্তির শিকার হতে হয়, সেটা জানার জন্য জরিপের প্রয়োজন নেই। যেখানে যত বেশি সেবাপ্রার্থী, সেখানে ঘুষের পরিমাণও বেশি। প্রায় প্রতিটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে দালাল চক্র গড়ে ওঠে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকেরা যে সেবা পান না; দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাক্ষাৎ বা সই পাওয়া যায় না, দালালকে ঘুষ দিলে তা অনায়াসে মিলে যায়। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের বড়–ছোট সব কর্তাব্যক্তির সঙ্গে এই দালালদের অশুভ আঁতাত আছে। পাসপোর্ট পাওয়া থেকে শুরু করে গাড়ির নিবন্ধন—সবকিছুতেই মোটা অঙ্কের ঘুষ দিতে হয়।

ঘুষ আমাদের ‘জাতীয় সংস্কৃতির’ অংশ হয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার অনিয়ম–দুর্নীতি বন্ধে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জোর প্রচারণা আছে। কিন্তু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা জবাবদিহির আওতায় আনতে পারল না। সবকিছু যদি আগের মতোই চলে, কী পরিবর্তন হলো?

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

এইচ-ওয়ান বি ভিসা ফি ১৫০০ থেকে এক লাখ ডলার করল ট্রাম্প প্রশাসন

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের আগমন নিয়ন্ত্রণ করতে এইচ-ওয়ান বি ভিসার বার্ষিক ফি ১ হাজার ৫০০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ডলারে উন্নীত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

আরো পড়ুন:

বিমান বাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের এয়ারফোর্সের যৌথ অনুশীলন সমাপ্ত

ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের খরচ বেড়েছে যুক্তরাজ্যে

প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচ-ওয়ান বি একটি বিশেষ ভিসা কর্মসূচি, যার আওতায় মার্কিন কোম্পানিগুলো অস্থায়ীভাবে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দিয়ে থাকে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি বা প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছর ৮৫ হাজার বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ও কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়।

মূলত বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল বিদ্যা এবং ব্যাবসায় প্রশাসনে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়া হয় এ ভিসার আওতায়। যুক্তরাষ্ট্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা, অ্যাপল, গুগল প্রভৃতি বড় কোম্পানিগুলো এই ভিসা কর্মসূচির সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী। শত শত বিদেশি কর্মী এই কোম্পানিগুলোতে কাজ করেন। এতদিন কোম্পানিগুলোকে বছরে ১ হাজার ৫০০ ডলার ফি দিতে হতো। এখন তা বেড়ে ১ লাখ ডলার করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকর্মীদের স্টেম ওয়ার্কার বলা হয়। মার্কিন পরিসংখ্যান দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০০০ সালে দেশটিতে বিদেশি স্টেম ওয়ার্কার সংখ্যা যত ছিল, এইচ-ওয়ান বি ভিসা কর্মসূচির চালু হওয়ার পর সেখানে আরো ২৫ লাখ বিদেশি স্টেম ওয়ার্কার যোগ হয়েছেন। ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই কর্মীদের হার বেড়েছে ৪৪.৫ শতাংশ, যার অধিকাংশই ভারত ও চীন থেকে আসা।

শুক্রবার ওয়াশিংটনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে হাওয়ার্ড লুটনিক বলেন, “বড় বড় কোম্পানিগুলো প্রতি বছর লাখ লাখ বিদেশি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্রে আনছে। এই ভিসা ফি বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা তাদের এই বার্তা দিতে চাই যে, যদি আপনারা দক্ষ কর্মী চান- তাহলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ডিগ্রি নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়োগ করুন, অথবা মার্কিনিদের প্রশিক্ষিত করুন। বাইরের লোকজনদের আমাদের চাকরি কেড়ে নিতে দেবেন না।”

রয়টার্স বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন পদক্ষেপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাত বড়সড় ধাক্কা খেতে চলেছে। বেশিরভাগ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাই দক্ষ বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভর করে থাকে। বেশিরভাগ কর্মী যান ভারত এবং চীন থেকে। ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন নিয়মে আলাদা করে কোনো দেশের নাম উল্লেখ করা হয়নি। যেকোনো দেশের দক্ষ কর্মচারীর ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। তবে প্রধানত ভারত ও চিনের কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পাওয়া এর পর কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে এইচ–ওয়ান বি ভিসা থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছেন ভারতীয় কর্মীরা। ভারত থেকে ৭১ শতাংশ আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। তালিকায় দ্বিতীয় স্থানেই আছে চীন। সেখান থেকে ১১.৭ শতাংশ ভিসার আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।

এইচ–ওয়ান বি ভিসার জন্য ফি এক ধাক্কায় এতটা বেড়ে যাওয়ায়, ভারত–সহ বিশ্বের অন্য দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মী নিয়োগে কোম্পানিগুলো কতটা উৎসাহী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ নিয়ে অ্যামাজন, অ্যাপেল, গুগল এবং মেটার মতো সংস্থা এখনও মুখ খোলেনি।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ