পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেছেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে নাজুক যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নির্ভর করছে দেশটির তালেবান সরকার সীমান্তপথে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অনুপ্রবেশ ও হামলা বন্ধ করতে পারে কি না, তার ওপর।

গতকাল সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসিফ বলেন, ‘এই একটি শর্তের ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে।’

রয়টার্সের সঙ্গে খাজা আসিফ কথা বলার এক দিন আগে কাতার ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এক সপ্তাহ ধরে সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর এ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার পর তালেবান ক্ষমতায় ফেরে। এর পর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।

পাকিস্তানের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ইসলামাবাদ কাবুলের কাছে দাবি জানায়, তারা যেন তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) যোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণ করে। টিটিপি হলো পাকিস্তানি তালেবান নামে পরিচিত কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর জোট। তারা আফগানিস্তানে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষমন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ বলেন, আফগানিস্তান থেকে আসা যেকোনো হুমকি এই চুক্তির লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে।

আফগানিস্তান থেকে আসা কোনো হুমকি এই চুক্তির লঙ্ঘন বলে গণ্য হবে।পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ

আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষমন্ত্রী মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবের সঙ্গে আলোচনায় নেতৃত্বদানকারী আসিফ আরও বলেন, সীমান্তে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটতে দেওয়া হবে না বলে লিখিত চুক্তিতে পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আসিফ অভিযোগ তুলে বলেন, টিটিপি আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানের ‘যোগসাজশে’ কাজ করছে। তবে তালেবান এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওপর পাল্টা অভিযোগ তুলে আফগানিস্তান দাবি করেছে, তারা দেশটির স্থিতিশীলতা ও সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে এবং আইএসআইএল (আইএসআইএস)–সংশ্লিষ্ট যোদ্ধাদের আশ্রয় দিচ্ছে।

তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, চুক্তির শর্তানুযায়ী কোনো দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে বৈরী কার্যক্রম চালাবে না কিংবা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে হামলা চালানো গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থনও দেবে না। উভয় দেশ একে অপরের নিরাপত্তা বাহিনী, বেসামরিক জনগণ বা গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করা থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়েছে।

পাকিস্তান তালেবান বছরের পর বছর ধরে ইসলামাবাদের সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে। কয়েক মাস ধরে তারা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনদোহায় আলোচনা: অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান১৯ অক্টোবর ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন র

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে এখনো সমঝোতার সুযোগ দেখছে এনসিপি

মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতার সুযোগ আছে বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও আসন সমঝোতার সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। তবে কারও সঙ্গে শেষ পর্যন্ত এনসিপির আসন সমঝোতা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৭২টিতে ইতিমধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে এনসিপির সঙ্গে আসন সমঝোতার আর কোনো সুযোগ আছে কি না, এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। কারণ, এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতার সম্ভাব্য নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওই আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনাও চলবে।

এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতার সম্ভাব্য নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। ওই আসনগুলোতে জামায়াতে ইসলামী আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছে।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা, হাতিরঝিল থানা (একাংশ) ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ এবং সদস্যসচিব আখতার হোসেন পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত রংপুর-৪ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

এ ছাড়া এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ঢাকা–১৮, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম পঞ্চগড়-১, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪ ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ঢাকা-৯ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।

এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের দুজন নেতার নির্বাচনী আসনে প্রথমে প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। গত ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তখন ঢাকা-৯ ও ঢাকা-১৮ আসনে প্রার্থী দেয়নি দলটি। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দ্বিতীয় দফায় যে ৩৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি, সেখানে ওই দুটি আসনও রয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে বলেও অনেকে মনে করছেন। যদিও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে এখনো মনে করেন, সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত অনেক কিছু ঘটতে পারে।

জামায়াতের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা নির্বাচনী জোট করার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। গত ১০ অক্টোবর এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের এক সভায় নেতাদের একটি অংশ জামায়াতের সঙ্গে নির্বাচনী জোটে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিল। দলের ওই অংশ এখনো একই অবস্থানে আছে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও এনসিপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। তাদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় যাওয়ার লাভ–ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা।

এ ছাড়া গত নভেম্বর মাসের শেষ দিকে বিএনপি–জামায়াতের বাইরে এবি পার্টি (আমার বাংলাদেশ পার্টি), বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনী জোটের প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছিল এনসিপি। গত ২৭ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই জোটের আত্মপ্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। এর আগের দিন গভীর রাত পর্যন্ত ওই চার দলের নেতারা বৈঠক করেছিলেন।

বিএনপির সঙ্গে এনসিপির সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে বলেও অনেকে মনে করছেন। যদিও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনেকে এখনো মনে করেন, সমঝোতার সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত অনেক কিছু ঘটতে পারে।

ওই বৈঠকে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতাদের একাংশের উদ্যোগে গঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আপ বাংলাদেশকে (ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ) প্রস্তাবিত এই নির্বাচনী জোটে রাখার প্রস্তাব দেয় একটি দল। এর বিরোধিতা করেন এনসিপির নেতারা। অন্যদিকে এই জোটে আসা নিয়ে গণ অধিকার পরিষদে মতভেদ দেখা দেয়। শেষ পর্যন্ত জোট করার বিষয়টি আর এগোয়নি।

প্রস্তাবিত জোট শেষ পর্যন্ত হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে দুটি দলের দুজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে গতকাল শুক্রবার বিকেলে পৃথকভাবে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁরা বলেন, জোট না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গেও এনসিপির অনানুষ্ঠানিক আলোচনা অব্যাহত আছে। তাদের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় যাওয়ার লাভ–ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা করছেন এনসিপির নীতিনির্ধারকেরা।

এককভাবে নির্বাচন নাকি বড় কোনো দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা, কোন পথে এগোচ্ছে এনসিপি—এমন প্রশ্নে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগামী দু–তিন দিনের মধ্যে ৩০০ আসনে আমাদের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হবে। আমরা এককভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি রাখছি। তবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আগপর্যন্ত বিভিন্ন দলের আসন সমঝোতার সম্ভাবনাও আছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ