গাঠনিক ক্ষমতাই জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পথ
Published: 21st, October 2025 GMT
জুলাই সনদ স্বাক্ষর বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক যুগান্তকারী অধ্যায়। এটি কেবল একটি দলিল নয়, বরং জাতির সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে অর্জিত এই সমঝোতা এক নতুন যুগের সূচনা করেছে।
এই ঐতিহাসিক সমঝোতা বাস্তবায়নের পথে চ্যালেঞ্জ আছে। প্রথমত, অংশগ্রহণকারী দলগুলোর বিভিন্ন প্রস্তাবে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। দ্বিতীয়ত, কয়েকটি দল এখনো স্বাক্ষর করেনি। তৃতীয়ত, সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান বিষয়ে দ্বিধাবিভক্তি আছে। চতুর্থত, গণভোটের রূপরেখা নিয়ে আছে মতান্তর। কী প্রশ্ন করা হবে, কতটি প্রশ্ন থাকবে, এর ব্যাখ্যা কী হবে—এসব নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
চারটি দল সব বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। এই দলগুলো হলো ইসলামী ঐক্যজোট, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), গণসংহতি আন্দোলন ও বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। সবচেয়ে বেশিসংখ্যক—১৬টি প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বাসদ। বিএনপি ১৫টি প্রস্তাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে। এর মধ্যে ৯টি প্রস্তাবে এনডিএম, ১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোটও একই অবস্থান নিয়েছে।
এই আপত্তিগুলো শুধু সংখ্যার বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন। একটি জাতির সাংবিধানিক দর্শন নিয়ে চলমান সংলাপের প্রকাশ।
আরও পড়ুনজুলাই সনদ কি পর্বতের মূষিক প্রসব১৮ অক্টোবর ২০২৫প্রস্তাব ও জনগণের গাঠনিক ক্ষমতাউত্থাপিত বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব বিষয়ে ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতা প্রস্তাবগুলোর সারবত্তা অনুধাবনে সহায়ক। প্রস্তাব করা হয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিক আদেশ বা অধ্যাদেশের মাধ্যমে সনদটি কার্যকর করতে পারে। কিন্তু ইতিহাস দেখিয়েছে, এ ধরনের পথ স্থিতিশীলতা বা বৈধতা নিশ্চিত না–ও করতে পারে। জনগণের সরাসরি সম্মতি ছাড়া যখনই ওপর থেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়েছে, তখনই তা বিভাজন সৃষ্টি করেছে এবং আস্থার সংকট ডেকে এনেছে।
আইয়ুব খান থেকে পারভেজ মোশাররফ পর্যন্ত পাকিস্তানে সামরিক শাসকেরা বারবার আদেশ জারি করে গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, যার প্রভাব আজও বর্তমান। ২০১২ সালে মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের চেষ্টা করলে ব্যাপক জনবিক্ষোভের জন্ম দেয় এবং দেশটি এখনো নতুন জান্তার শাসনব্যবস্থায় থিতু হয়ে আছে। একইভাবে গণপরিষদ (সংবিধান সভা) আহ্বান যদিও আকর্ষণীয় মনে হয়, তবু তা ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিহাসে অনেক নজির আছে। যেমন ফরাসি বিপ্লবের সময় গণপরিষদ শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসের যুগে পরিণত হয়েছিল। এই অভিজ্ঞতাগুলো প্রমাণ করে, বৈধতা চাপিয়ে দেওয়া যায় না; জনগণের সম্মতির মাধ্যমেই অর্জিত হয়।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ল ই সনদ প রস ত ব দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মাসদাইর কবরস্থান মসজিদে মাসুদুজ্জামানের দোয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন ও তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য ও দীর্ঘায়ু কামনায় মাসুদুজ্জামানের আয়োজনে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) মাসদাইর কবরস্থান মসজিদে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় জুম্মার নামাজ আদায় ও দোয়ায় অংশ নেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (সদর-বন্দর) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী, বিশিষ্ট সমাজসেবী মাসুদুজ্জামান।
জুম্মার নামাজ শেষে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, দেশের কল্যাণ, জাতির শান্তি–সমৃদ্ধি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের অগ্রযাত্রার জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হয়। মসজিদে উপস্থিত স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, সাধারণ মানুষ, মসজিদ কমিটির সদস্য এবং বিএনপি–সমর্থিত নেতৃবৃন্দও এতে অংশ নেন।
দোয়া শেষে মাসুদুজ্জামান মাসুদ বলেন, “দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজ গুরুতর অসুস্থ। তাঁর দ্রুত আরোগ্য, সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনায় আমরা জনগণের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছি। বেগম খালেদা জিয়া শুধু একজন জাতীয় নেতা নন; তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং স্বাধীনতার প্রতীক।
আল্লাহর কাছে আমরা আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করি—তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও দেশের জনগণের কল্যাণে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হন। জনগণের এই ভালোবাসা ও দোয়া নিশ্চয়ই আল্লাহ কবুল করবেন।”
মাসুদুজ্জামান মাসুদের সঙ্গে দোয়া মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু, আনোয়ার হোসেন আনু, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি সদস্য; হাজী ফারুক হোসেন, সাবেক কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, কৃষকদলের সভাপতি এনামুল খন্দকার স্বপন।
এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের বিএনপির মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ কৃষকদল, যুবদল, মহিলাদল এবং সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে দোয়া মাহফিলকে আরও মর্যাদাপূর্ণ এবং প্রাণবন্ত করে তুলেছেন।
স্থানীয়দের মতে, এই আয়োজন কোনো রাজনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি একজন অসুস্থ জাতীয় নেত্রীর প্রতি জনগণের গভীর শ্রদ্ধা, অন্তরঙ্গ ভালোবাসা এবং মানবিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ। তারা জানান, দেশের প্রতিটি মানুষ, দলমত নির্বিশেষে, বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত আরোগ্য কামনায় একতাবদ্ধভাবে প্রার্থনা করছে।
বিশেষ করে মাসুদুজ্জামান-এর মতো নেতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ এই অনুষ্ঠানটিকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ ও হৃদয়স্পর্শী করে তুলেছে। জুম্মার নামাজ ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দোয়ার পরে মাসুদুজ্জামান মাসুদ মাসদাইর কবরস্থানে গিয়ে তাঁর প্রয়াত বাবা-মায়ের রূহের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করেন।