নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আগামী মঙ্গলবার শুরু হতে যাচ্ছে দু’দিনব্যাপী ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলন। বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ নিরাপত্তা জোটে ৩২ দেশ থাকলেও আলোচনায় কেবল একমাত্র ব্যক্তি– মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 

বিবিসির বিশ্লেষণী প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৩২টি সদস্য দেশের নেতা ও ডজনখানেক সহযোগী রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা অংশ নিচ্ছেন এ সম্মেলনে। কিন্তু সম্মেলনের সময় কমিয়ে করা হয়েছে মাত্র তিন ঘণ্টা। বিবৃতি সংক্ষিপ্ত করে আনা হয়েছে পাঁচ প্যারাগ্রাফে। লক্ষ্য একটাই– মতবিরোধ আড়াল করে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট রাখা। 

ট্রাম্পের দাবি মেনে ইউরোপীয় মিত্ররাও প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য ব্যয় বৃদ্ধির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। জোটের প্রতিটি সম্মেলনে প্রধান লক্ষ্য কিছুটা ‘পূর্বনির্ধারিত’– সংঘবদ্ধতার বার্তা দেওয়া। তবে এবার মূল আলোচনার সূচি অনেকটা নির্ধারণ করেছেন ট্রাম্প নিজেই। তাঁর চাপে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়িয়ে জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার অঙ্গীকার করছে। যদিও জোটের নতুন মহাসচিব মার্ক রুটে আপাতত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ সরাসরি প্রতিরক্ষা এবং ১ দশমিক ৫ শতাংশ পরোক্ষ ব্যয় মিলে মোট ৫ শতাংশের প্রস্তাব দিয়েছেন। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের উপস্থিতি ন্যাটোর ঐক্যের ছবি অনেকাংশে ঢেকে দিচ্ছে। যদিও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানো নিয়ে তাঁর চাপ ইউরোপকে বাস্তব কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে বাধ্য করছে। তবে এই ব্যয় বৃদ্ধি আদতে কার্যকর কোনো প্রস্তুতি কিনা, নাকি কেবল মার্কিন চাপের কাছে মাথানত– সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। 

সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত কার্ট ভলকার স্বীকার করেছেন, ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন নীতিতে বিভেদ তৈরি হয়েছে। ইউরোপ ইউক্রেনকে নিরাপত্তার মূল অংশ মনে করলেও, ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিতে সেটি গুরুত্বহীন। 

এদিকে নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আয়োজিত এবারের ন্যাটো সম্মেলনকে ঘিরে ডাচ নিরাপত্তা বাহিনী ইতিহাসের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ব্যবস্থার আয়োজন করেছে। সম্মেলনের ব্যয় প্রায় ১৮ কোটি ৩৪ লাখ ইউরো। ন্যাটোর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল সম্মেলন এটি। 

নিরাপত্তাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতির কারণে শহরটি এখন কার্যত একটি দুর্গে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলায় শহরটির স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ‘অরেঞ্জ শিল্ড’ নামক এই বিশাল নিরাপত্তা অভিযানের অংশ হিসেবে শহরের বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড ও নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। ফলে অনেক রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং জনসাধারণের চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। এমনকি, শহরের আকাশেও বিমান চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। 

নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রায় ২৭ হাজার পুলিশ সদস্য এবং ১০ হাজারের বেশি সামরিক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ উত্তর সাগরে টহল দেবে এবং আকাশে টহল দেবে যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টার। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল সম্মেলন স্থল এবং আশপাশের এলাকা নিয়মিতভাবে তল্লাশি চালাবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

আফসোসে রেখে গল টেস্ট ড্র

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাজমুল হোসেন শান্তকে তুলাধুনা করা হচ্ছিল গল টেস্ট ড্র মেনে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই। সমর্থকদের কাছে মনে হয়েছে, পঞ্চম দিন সকালে শান্ত মন্থর ব্যাটিং করায় আগেভাগে ইনিংস ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। অধিনায়ক হিসেবে তিনি ম্যাচ জয়ের চিন্তা না করে রক্ষণাত্মক কৌশল নেন নিরাপদ ড্রয়ের লক্ষ্যে। এটিও বলা হয়েছে, অধিনায়কের উদ্দেশ্য ছিল সেঞ্চুরি করা। প্রত্যাশা পূরণ না হলে সমর্থকরা কখনও কখনও হয়ে ওঠেন সমালোচক। গল টেস্ট ড্র করা নিয়ে তাদের সেই আক্ষেপ। অনেক যদি, কিন্তু মেলানো গেলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া টেস্ট ম্যাচটি হয়তো শেষ দুই সেশনে জয়ের জন্য খেলা সম্ভব হতো। শান্তরা সেই যদি, কিন্তু মেলাতে পারেননি মূলত পঞ্চম দিন সকালে এক ঘণ্টা ব্যাটিং করার পর বৃষ্টির কারণে তিন ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকায়। সকালের বৃষ্টিই বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন থেকে ছিটকে দেয়। জয়ের সমীকরণ না মেলার আক্ষেপ থাকলেও ড্র টেস্টও প্রাপ্তিতে ভরপুর। শান্তর জোড়া সেঞ্চুরি, মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি, নাঈম হাসানের পাঁচ উইকেট অর্জনে গল থেকে আত্মবিশ্বাসের বাতাসে ফুসফুস ভরে নেওয়া গেছে কলম্বোর সিরিজ নির্ধারণী টেস্টের জন্য। ২৫ জুন সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট। 

স্কিল, ফিটনেসের সঙ্গে সাহস দেখাতে পারাও ক্রিকেটে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ড্রেসিংরুমে সাহসী লোকের ভীষণ অভাব এ মুহূর্তে। টি২০ বিশ্বকাপ থেকেই এই দুর্বলতা বড় হয়ে ধরা দিচ্ছে। সেমিফাইনালের সমীকরণ নিয়ে খেলতে নেমেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখাতে পারেননি চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মতো তুখোড় বুদ্ধিমান কোচও। গল টেস্টে ফিল সিমন্স, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন ড্রেসিংরুমে থেকে নাজমুল হোসেন শান্তর কাছে ইনিংস ঘোষণা করার বার্তা দেওয়ার সাহস করেননি; বরং টেস্ট ম্যাচটি ড্র করার পরিকল্পনায় শান্তকে মন্থর ব্যাটিং করে সেঞ্চুরি করার সুযোগ করে দেন তারা। অথচ অধিনায়ক সেঞ্চুরি না করে লিড দেড়শ রান নিয়ে ইনিংস ঘোষণা করে জয়ের লক্ষ্যে বোলিং করতে পারতেন। আক্রমণাত্মক মেজাজে বোলিং-ফিল্ডিং করে গেলে ম্যাচের শেষটা উত্তাপ ছড়ানো রোমাঞ্চকর হতে পারত। এই জায়গাতেই মুনশিয়ানার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। 

১০ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন শেষ করে ৫৭ ওভার খেলে ৩ উইকেটে ১৭৭ রানে। ১৮৭ রানের লিড নিয়ে পঞ্চম ও শেষ দিন ব্যাট করতে নামেন অপরাজিত জুটি মুশফিক-শান্ত। প্রথম থেকে মন্থর ব্যাটিং করতে থাকেন দু’জন। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১৯ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন তারা। বৃষ্টির কারণে বেলা ১১টা ৬ মিনিটে খেলা হওয়া ম্যাচ তিন ঘণ্টা পর আবার শুরু হয় দুপুর ২টা ৮ মিনিটে। শান্তরা ১১ ওভার না খেলে চাইলে দুই ওভার পরই ইনিংস ঘোষণা করতে পারতেন। তখনও ২৫৫ রানের লক্ষ্য দেওয়া যেত শ্রীলঙ্কাকে। এ ক্ষেত্রে শান্তর সেঞ্চুরি মিস হলেও বোলাররা জয়ের সুযোগ তৈরি করতে পারতেন। সেটি না করে বৃষ্টির পর ১১ ওভার খেলে ৬ উইকেটে ২৮৫ রানে পৌঁছে ইনিংস ঘোষণা করেন তিনি। শান্তর সেঞ্চুরি করতে লেগেছে ১৯০টি বল। তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১২৫ রানে।

টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডবুকে নতুন করে নাম তোলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। দেশের পর বিদেশেও এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরিয়ান তিনি। শান্ত প্রথম জোড়া সেঞ্চুরি করেন ২০২৩ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে। বিদেশের মাটিতে এক টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি করা প্রথম বাংলাদেশি তিনি। টেস্ট ম্যাচে দুবার জোড়া সেঞ্চুরি করা দেশের একমাত্র ব্যাটার হলেন শান্ত। তবে দেশের প্রথম জোড়া সেঞ্চুরিয়ান হলেন মুমিনুল হক। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ইনিংসে শতক পেয়েছিলেন বাঁহাতি এ ব্যাটার। গল টেস্টের সেরা খেলোয়াড় শান্ত জোড়া সেঞ্চুরিতে ২৪৮ রান করেন। বাংলাদেশ অধিনায়কের জন্য এটি রেকর্ড। ২০১৩ সালে এই গলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুশফিকের ২০০ রানই ছিল অধিনায়ক হিসেবে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। এদিক থেকে গল টেস্টকে শান্তর টেস্টও বলা যেতে পারে। অধিনায়কের প্রাপ্তির টেস্টে বাংলাদেশের অর্জন ৪ পয়েন্ট। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তৃতীয় আসরের মতো চতুর্থ আসরও পয়েন্ট অর্জনের মধ্য দিয়ে শুরু করা গেছে। এই প্রাপ্তি দেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ