হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তির পর সংবাদ সম্মেলন করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষক মাহমুদুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, সাড়ে ছয় বছর শিক্ষকতাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকার কারণেই একটি চক্র তাঁর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। 

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হেয়াত মামুদ ভবনের নিচতলায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তিনি ওই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। 

মাহমুদুল হক জানান, বেরোবির সাবেক উপাচার্য ড.

কলিমুল্লাহর বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রণী। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি মহল জাতীয় পতাকা চারকোনা আকৃতি করে ছাপিয়েছিল। তার প্রতিবাদে তিনি জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা করেছিলেন। এরপর থেকেই অজানা চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। 

তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ সময় ধরে অধিকার নিয়ে কাজ করছি। মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। ফলে সংঘবদ্ধ ষড়যন্ত্রকারী আমার পেছনে তৈরি হয়ে গেছে। তারাই এ মামলাগুলো করাচ্ছে। 

তিনি দাবি জানান, দুটি মামলা থেকেই তাঁর নাম প্রত্যাহার করতে হবে। কারণ এটি হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা। হাজিরহাট থানার ওসিকে অপসারণ করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। এ ছাড়া তাঁর গ্রেপ্তারের পেছনে যারা আছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। 

গত বছরের ২ আগস্ট রংপুর নগরীর হাজিরহাট এলাকায় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয় শমসের নামে এক ব্যক্তির। ১০ মাস পর তাঁর মৃত্যুকে জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ড দাবি করে রংপুর মহানগরীর হাজিরহাট থানায় হত্যা মামলা করে ওই ব্যক্তির পরিবার। গত ১৯ জুন ওই মামলার আসামি হিসেবে শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি জামিনে মুক্ত হন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ বব দ য

এছাড়াও পড়ুন:

এক দিনেই ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৯৪

প্রতিদিনই বাড়ছে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টার ৩৯৪ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিনের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার রোগীর সংখ্যা ৩০০ ছাড়াল। গত মে মাসের তুলনায় চলতি মাসে রোগীর সংখ্যা হলো আড়াই গুণ।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মে মাসে যেখানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট ডেঙ্গু রোগী ছিলেন এক হাজার ৭৭৩ জন, সেখানে জুনের এক সপ্তাহ বাকি থাকতেই রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ১৯৯-এ। এর আগে গত রোববার ৩২৯ জন এবং শনিবার ৩৫২ জনের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তথ্য জানিয়েছিল অধিদপ্তর। 
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৩৯৪ জনের মধ্যে বরিশাল বিভাগের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫৮, ঢাকা বিভাগে ৩৫, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৪২, ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৫০, খুলনা বিভাগে ৮ জন এবং রাজশাহী বিভাগের হাসপাতালে ৪৪ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যু হয়নি। আগের হিসাবে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। মারা যাওয়াদের মধ্যে পুরুষ ও নারী সমান। আর চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের। 
২২ বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২৩ সালে দেশে ডেঙ্গু রোগী হয় তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন এবং মৃত্যু হয় এক হাজার ৭০৫ জনের। তার আগে ২০১৯ সালে রোগী ছিল এক লাখ ১ হাজার 
৩৫৪ জন। 

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে করণীয়
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) গতকাল অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে ইন্টারনাল মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নাজমুল হাসান ডেঙ্গু গাইডলাইন বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। এতে তিনি জানিয়েছেন, ডেঙ্গু জ্বরের হালকা উপসর্গে (৩-৫ দিন জ্বর, মাথাব্যথা ও হালকা গায়ে ব্যথা) রোগীকে বাড়িতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও তরল পানীয় (স্যালাইন, ফলের রস ও স্যুপ) খেতে হবে।
বিএমইউতে করোনা, ডেঙ্গু ও জ্বরের সাম্প্রতিক প্রবণতা নিয়ে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে ডা. নাজমুল বলেন, জ্বর কমানোর জন্য কেবল প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যাবে। ডেঙ্গুর জন্য অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা ব্যথানাশক জাতীয় ওষুধ নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়ায়। জ্বর কমে যাওয়ার পর হঠাৎ শরীর খারাপ হওয়া, বারবার বমি, পেটব্যথা, রক্তপাত, ঘন ঘন দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট বা চামড়া মলিন, অস্থিরতা, অজ্ঞান ভাব, মাথা ঘোরানোর মতো উপসর্গ দেখা গেলে এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ রোগীর জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করে, ফুসফুসে পানি জমার ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণা বলছে, এতে ডেঙ্গুর চিকিৎসায় কোনো উপকার হয় না। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারেরও প্রয়োজন নেই। কারণ ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ। যদি নিশ্চিত ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ থাকে (যেমন নিউমোনিয়া), তখন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা যেতে পারে।

বরগুনায় ডেঙ্গু আক্রান্তের ঊর্ধ্বগতি 
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু প্রকোপের ঊর্ধ্বগতি চলমান। সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৫৭ জন। তার মধ্যে ৯৩ জনই বরগুনার।  
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, রোববার বিভাগে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছিলেন ১২৬ জন। যার মধ্যে বরগুনাতে ছিলেন ৭৩ জন। এখন বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ৪৩২ জন। তার মধ্যে ২৪২ জনই বরগুনা জেলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ