জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালায় স্থান পায়নি সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুমিল্লা জেলা বা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে সারাদেশে প্রথম কুবি শিক্ষার্থীরা পুলিশি হামলার শিকার হন। টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ইত্যাদির আঘাতে সেদিন অর্ধশতাধিকের বেশি শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুলিশের হামলায় আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও। 

পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও বাধাকে উপেক্ষা করে সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরোধ রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেদিনের সাহসিকতা দেশব্যাপী আলোচিত হয়।

আরো পড়ুন:

অভিযান থেকে অস্ত্রবিরতি: যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পথ বদলালো

‘নিখুঁত হামলার’ কারণে চুক্তি সম্ভব হয়েছে: ট্রাম্প

১১ জুলাইয়ের পুলিশি হামলায় হাত ভেঙে যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক মো.

এমরানের।

তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানমালার ক্যালেন্ডারে কোথায় সেই ১১ জুলাই? যেদিন সর্বপ্রথম হামলা হয় কুমিল্লা তথা আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এবং সেখানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। স্বৈরাচার পুলিশ বাহিনী সেদিন আমাদের উপর নির্মম হামলা চালিয়েছিল; যা সমগ্র বাংলাদেশ দেখেছে।”

তিনি বলেন, “হামলায় আমিসহ অসংখ্য কুবি শিক্ষার্থী সেদিন আহত হয়েছিল। হামলার পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে সবার কণ্ঠে আওয়াজ ছিল, ‘কুবিতে হামলা কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই আহত কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’। অথচ কোথায় সেই ১১ জুলাইয়ের মত ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনটি?”

তিনি আরো বলেন, “১১ জুলাইকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে নাকি বাদ দেওয়া হচ্ছে? জুলাইয়ের এই ঐতিহ্যবাহী দিনটি বাদ দেওয়া এটা আমাদের জন্য লজ্জার, যা আমাদের মোটেও কাম্য নয়। আমরা চাই, অতি দ্রুত জুলাই ক্যালেন্ডারে এই দিনটা সংযুক্ত করা হোক।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আরাফ ভূইয়া বলেন, “যদি এক কথায় বলি, আমরা হতাশ! গত ১০ মাসে আমরা এক ডজনের বেশি প্রোগ্রাম করেছি, যেখানে জুলাই এর সম্মুখ যোদ্ধা এবং বর্তমান সরকারের একাধিক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটা প্রোগ্রামে আমরা ১১ জুলাই এর প্রথম পুলিশি আক্রমণ, ১২ জুলাইয়ের ছাত্রলীগের প্রথম আক্রমণ এবং ১৮ জুলাইয়ের দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করার ইতিহাস উল্লেখযোগ্যভাবে বলেছি। একাধিকবার আলাদা করে বলছি, যেন ১১ জুলাইকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা এখনো দেওয়া হয়নি।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা সন্দেহ করছি, তারা হয়তো জুলাইয়ের ইতিহাস ঢাকা কেন্দ্রীক রাখতে চায়। তাদের এই ইতিহাস বিকৃতি এবং ইতিহাসকে ঢাকা কেন্দ্রীক ফ্রেমিং করার অপচেষ্টা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা কুমিল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কুমিল্লার বুক চিতিয়ে লড়াই করার ইতিহাস হারিয়ে যেতে দেব না।”

জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মাদ রাশেদুল হাসান বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুটা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা থেকে। কিন্তু এই আন্দোলনের প্রথম হামলার শিকার হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ জুলাই।”

তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুক পেইজ থেকে জুলাই স্মৃতি উদযাপনের অনুষ্ঠান সূচিতে ১১ জুলাইয়ে কুমিল্লার অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে জানানো হয়েছে। আশা করি, এই বিষয়ে শীঘ্রই তার মতামত জানতে পারব।”

জুলাই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মুহাম্মদ সাকিব হুসাইন বলেন, “১১ জুলাই বিপ্লবে যে দিনটিতে সারা বাংলাদেশে প্রথম হামলা কুমিল্লায় হয় এবং প্রথম প্রতিরোধও কুমিল্লা থেকে শুরু হয়। সেদিন আমরা রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম ব্লকেড করেছিলাম। আমাদের উপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে সেদিন এবং পরেরদিন প্রোগ্রাম ঘোষণা করে পুরো বাংলাদেশ।”

তিনি বলেন, “হামলার পর হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সার্জিস আলম ভাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। ১১ তারিখ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় এবং পরে আমরা তিনজন কুমিল্লার এসপির সঙ্গে এ বিষয়ে অভিযোগ করি এবং আলোচনা হয়। এমনকি অ্যামন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ হামলার প্রতিবাদ জানায়। তাহলে কেন এ দিনটিকে বাদ দিয়ে জুলাই কেন্দ্রীক প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হলো? জুলাই বিপ্লবের এমন তাৎপর্যপূর্ণ দিনটিকে কেনো বাদ দেওয়া হলো?”

ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত ১১ জ ল ই প রথম প অন ষ ঠ আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ

দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে গত সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এ বছর ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এ দুটি স্থলবন্দর দিয়ে শেষ মুহূর্তে আর ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই।

এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।

এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি প্রথম শুরু হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০–২১ অর্থবছরে। ওই সময় ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।

এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। তবে সিংহভাগই রপ্তানি করতে পারেনি।

জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।’

আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানি মূল্য কম। ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে দেশটি ইলিশ আমদানি করে ভারত। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিমাণে কম দামে ইলিশ আমদানি করে মিয়ানমার থেকে।

যেমন ২৪–২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল–মার্চ) দেশটি মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে। গড়ে ভারতের আমদানি মূল্য ছিল ৬ ডলার ২৩ সেন্ট। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৫ লাখ ৪২ হাজার কেজি ইলিশ। গড় আমদানি মূল্য ছিল ১০ ডলার ৯৩ সেন্ট।

এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যেই ইলিশ গেল

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।

এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯–২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।

এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালানের ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে। শুধু একটি চালান ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে। এই চালান রপ্তানি করেছে ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ৪২০ কেজি ইলিশ কেজিপ্রতি ১৩ ডলার ৬০ সেন্টে রপ্তানি করেছে।

স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।আবদুল মান্নান, পরিচালক, প্যাসিফিক সি ফুডসপ্রতিবারই অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানি

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ