জুলাই আয়োজনে উপেক্ষিত প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুবি
Published: 24th, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠানমালায় স্থান পায়নি সারাদেশে প্রথম পুলিশি হামলার শিকার কুমিল্লা জেলা বা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে জেলা ও মহানগরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ১১ জুলাই আন্দোলনের শুরুর দিকে সারাদেশে প্রথম কুবি শিক্ষার্থীরা পুলিশি হামলার শিকার হন। টিয়ারগ্যাস, লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ইত্যাদির আঘাতে সেদিন অর্ধশতাধিকের বেশি শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি পুলিশের হামলায় আহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীও।
পুলিশের বর্বরোচিত হামলা ও বাধাকে উপেক্ষা করে সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ি বিশ্বরোড সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রায় ৬ ঘণ্টা অবরোধ রাখেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেদিনের সাহসিকতা দেশব্যাপী আলোচিত হয়।
আরো পড়ুন:
অভিযান থেকে অস্ত্রবিরতি: যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে পথ বদলালো
‘নিখুঁত হামলার’ কারণে চুক্তি সম্ভব হয়েছে: ট্রাম্প
১১ জুলাইয়ের পুলিশি হামলায় হাত ভেঙে যায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক মো.
তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক আগামী ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত জুলাই স্মৃতি উদযাপন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানমালার ক্যালেন্ডারে কোথায় সেই ১১ জুলাই? যেদিন সর্বপ্রথম হামলা হয় কুমিল্লা তথা আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর এবং সেখানে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়। স্বৈরাচার পুলিশ বাহিনী সেদিন আমাদের উপর নির্মম হামলা চালিয়েছিল; যা সমগ্র বাংলাদেশ দেখেছে।”
তিনি বলেন, “হামলায় আমিসহ অসংখ্য কুবি শিক্ষার্থী সেদিন আহত হয়েছিল। হামলার পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশে সবার কণ্ঠে আওয়াজ ছিল, ‘কুবিতে হামলা কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাই আহত কেনো, প্রশাসন জবাব চাই’। অথচ কোথায় সেই ১১ জুলাইয়ের মত ঐতিহ্যবাহী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনটি?”
তিনি আরো বলেন, “১১ জুলাইকে ভুলে যাওয়া হচ্ছে নাকি বাদ দেওয়া হচ্ছে? জুলাইয়ের এই ঐতিহ্যবাহী দিনটি বাদ দেওয়া এটা আমাদের জন্য লজ্জার, যা আমাদের মোটেও কাম্য নয়। আমরা চাই, অতি দ্রুত জুলাই ক্যালেন্ডারে এই দিনটা সংযুক্ত করা হোক।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কুমিল্লা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূখ্য সংগঠক আরাফ ভূইয়া বলেন, “যদি এক কথায় বলি, আমরা হতাশ! গত ১০ মাসে আমরা এক ডজনের বেশি প্রোগ্রাম করেছি, যেখানে জুলাই এর সম্মুখ যোদ্ধা এবং বর্তমান সরকারের একাধিক উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিটা প্রোগ্রামে আমরা ১১ জুলাই এর প্রথম পুলিশি আক্রমণ, ১২ জুলাইয়ের ছাত্রলীগের প্রথম আক্রমণ এবং ১৮ জুলাইয়ের দীর্ঘ ৬ ঘণ্টা বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করার ইতিহাস উল্লেখযোগ্যভাবে বলেছি। একাধিকবার আলাদা করে বলছি, যেন ১১ জুলাইকে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেটা এখনো দেওয়া হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা সন্দেহ করছি, তারা হয়তো জুলাইয়ের ইতিহাস ঢাকা কেন্দ্রীক রাখতে চায়। তাদের এই ইতিহাস বিকৃতি এবং ইতিহাসকে ঢাকা কেন্দ্রীক ফ্রেমিং করার অপচেষ্টা আমাদের ব্যথিত করেছে। আমরা কুমিল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করার জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কুমিল্লার বুক চিতিয়ে লড়াই করার ইতিহাস হারিয়ে যেতে দেব না।”
জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা মহানগরের সদস্য সচিব মুহাম্মাদ রাশেদুল হাসান বলেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শুরুটা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা থেকে। কিন্তু এই আন্দোলনের প্রথম হামলার শিকার হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ১১ জুলাই।”
তিনি বলেন, “দুঃখজনক হলেও সত্য, আজ প্রধান উপদেষ্টার ফেইসবুক পেইজ থেকে জুলাই স্মৃতি উদযাপনের অনুষ্ঠান সূচিতে ১১ জুলাইয়ে কুমিল্লার অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। বিষয়টি ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদকে জানানো হয়েছে। আশা করি, এই বিষয়ে শীঘ্রই তার মতামত জানতে পারব।”
জুলাই আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক মুহাম্মদ সাকিব হুসাইন বলেন, “১১ জুলাই বিপ্লবে যে দিনটিতে সারা বাংলাদেশে প্রথম হামলা কুমিল্লায় হয় এবং প্রথম প্রতিরোধও কুমিল্লা থেকে শুরু হয়। সেদিন আমরা রাত ১১টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম ব্লকেড করেছিলাম। আমাদের উপর হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে সেদিন এবং পরেরদিন প্রোগ্রাম ঘোষণা করে পুরো বাংলাদেশ।”
তিনি বলেন, “হামলার পর হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সার্জিস আলম ভাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসেন। ১১ তারিখ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় এবং পরে আমরা তিনজন কুমিল্লার এসপির সঙ্গে এ বিষয়ে অভিযোগ করি এবং আলোচনা হয়। এমনকি অ্যামন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনালও এ হামলার প্রতিবাদ জানায়। তাহলে কেন এ দিনটিকে বাদ দিয়ে জুলাই কেন্দ্রীক প্রোগ্রাম ঘোষণা করা হলো? জুলাই বিপ্লবের এমন তাৎপর্যপূর্ণ দিনটিকে কেনো বাদ দেওয়া হলো?”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আহত ১১ জ ল ই প রথম প অন ষ ঠ আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন বহাল
ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত শফিউর রহমান ফারাবীকে হাইকোর্টের দেওয়া অন্তর্বর্তী জামিন বহাল রয়েছে। ওই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক রোববার এ আদেশ দেন।
ওই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের দেওয়া রায়ে ফারাবীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।
২০২২ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। বিচারাধীন আপিলে জামিন চেয়ে আবেদন করেন ফারাবী। এর ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ জুলাই হাইকোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেন। এই জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা এদিন চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুদ্দিন খালেদ। ফারাবীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহিনুর রহমান ও ওমর ফারুক।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। তার মানে হাইকোর্ট ফারাবীকে যে জামিন দিয়েছিলেন, তা বহাল। ফারাবী ১৬৪ ধারায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। মামলায় চারজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের কেউই ফারাবীর নাম উল্লেখ করেননি। ফারাবী প্ররোচনা দিয়েছেন—কোনো সাক্ষী তা বলেনি। এমনকি তাঁর সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততাও পাওয়া যায়নি। ফারাবীর জামিনের পক্ষে এসব যুক্তি তুলে ধরা হয়।
২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। হামলায় অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদও গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায় বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৬ আগস্ট ছয়জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে এই মামলায় ২৮ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
আরও পড়ুনব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ফারাবীর জামিন৩০ জুলাই ২০২৫এই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান রায় দেন। রায়ে পাঁচ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক আসামিকে (শফিউর রহমান ফারাবী) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই হাইকোর্টে আপিল করেন ফারাবী।