প্রতি দুটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে
Published: 16th, November 2025 GMT
দেশে প্রতি দুটি মেয়ের মধ্যে একটি মেয়ে বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এ হার ৪ শতাংশ কমলেও বাল্যবিবাহ পরিস্থিতি এখনো উচ্চপর্যায়ে। দেশে এখন ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার ৬০ শতাংশ থেকে নেমে ৫৬ শতাংশ হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্র বা হাসপাতালে প্রসব, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব বেড়েছে। তবে সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অস্ত্রোপচারে (সিজারিয়ান সেকশন বা সি–সেকশন) শিশু জন্মের হার। নবজাতক থেকে শুরু করে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুর হার কমেছে। শিশুশ্রম ও স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর হার বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও ইউনিসেফের নতুন প্রকাশিত মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস–বহুনির্দেশক গুচ্ছ জরিপ) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন–মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ২ দফায় প্রায় ৬৩ হাজার পরিবারের ওপর জরিপ পরিচালনা করা হয়। এখানে জাতীয় অগ্রাধিকার ও বৈশ্বিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে ১৭২টি মানদণ্ড এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ২৭টি সূচককে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রথমবারের মতো অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের মধ্যে রক্তস্বল্পতা, সিসাসহ ভারী ধাতুর দূষণের মাত্রা পরীক্ষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ এমআইসিএসের প্রতিবেদনটি ছিল ২০১৯ সালের। ওই সময় থেকে কতটুকু অগ্রগতি বা অবনতি হয়েছে, তার তুলনামূলক চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে নতুন প্রতিবেদনে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, বাল্যবিবাহ ও শিশুমৃত্যুর হার প্রমাণ করে অগ্রগতি সম্ভব। সিসাদূষণ ও শিশুশ্রমের মতো সংকট লাখ লাখ শিশুকে সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত করছে। শিশুদের সুরক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। এমআইসিএসের ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা এমদাদুল হক প্রতিবেদনের মূল তথ্য উপস্থাপন করেন। মুক্ত আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন বিবিএসের উপপরিচালক মো.
জরিপ প্রতিবেদনে বাল্যবিবাহের দুটি উপাত্ত দেওয়া হয়েছে। একটি তথ্যে বলা হয়েছে, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ১৮ বছর বয়স হওয়ার আগে বাল্যবিবাহ হয়েছে ৪৭ শতাংশের, ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে এ হার ছিল ৫১ শতাংশ। অপর দিকে দেশজুড়ে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বাল্যবিবাহের হার দাঁড়িয়েছে ৫৬ শতাংশে, যেটা আগে ছিল ৬০ শতাংশ। কিশোরী মায়েদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার প্রতি হাজারে ৮৩ থেকে বেড়ে ৯২ হয়েছে। সি–সেকশন ২০১৯ সালের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫২ শতাংশে। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালে প্রসব ১৮ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৭১ শতাংশ। শিশুশ্রম ২ শতাংশের বেশি বেড়ে হয়েছে ৯ শতাংশ। মাধ্যমিক স্কুলে পড়ার বয়সী শিশুদের স্কুলে না পড়ার হার ২ শতাংশ বেড়ে প্রায় ৩৪ শতাংশ হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার ৫ শতাংশ কমে ৫৮ শতাংশ হয়েছে। মোট প্রজননহার (টিএফআর) ২ দশমিক ৩ থেকে বেড়ে ২ দশমিক ৪ হয়েছে।
এমআইসিএস (মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে) ২০২৫–এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অতিথিরা। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে। ছবি: ইউনিসেফ বাংলাদেশউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ২০১৯ স ল র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ ম্যাচকে মনে করানোর দিনে বুমরার ৫ উইকেট
২০১৯ সালের নভেম্বরে ইডেন গার্ডেনে দিবারাত্রির টেস্ট খেলেছিল ভারত–বাংলাদেশ। সেটিই ছিল ভারতের প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট, বাংলাদেশেরও। এরপর গত ছয় বছরে কলকাতার বিখ্যাত মাঠটিতে আর টেস্ট হয়নি। ইডেনের টেস্ট–খরা কেটেছে আজ ভারত–দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে। অর্ধযুগ বিরতির কারণেই কিনা কে জানে, প্রথম দিনে খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছেন ৩৬ হাজার ৫১৩ দর্শক।
দিনটা তাঁদের মন্দ যায়নি। টসে জেতা দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৫৯ রানে অলআউট করেছে ভারত। এরপর দিনের শেষ দিকে ভারত ২০ ওভার ব্যাট করে শুধু যশস্বী জয়সোয়ালের উইকেটটাই হারিয়েছে। দিন শেষে দর্শকেরা সঙ্গে নিয়ে গেছেন যশপ্রীত বুমরার ৫ উইকেট দেখার আনন্দ।
দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটিতে টসে জিতে ব্যাট করতে নামা প্রোটিয়াদের শুরুটা ভালোই হয়েছিল। প্রথম ১০ ওভারেই ৫৭ রান তুলে ফেলেছিলেন দুই ওপেনার এইডেন মার্করাম ও রায়ান রিকেলটন। ১১তম ওভারে রিকেলটনকে বোল্ড করে ভারতকে উদ্যাপনের প্রথম উপলক্ষ এনে দেন বুমরা। ২২ বলে ২৩ রান করা রিকেলটন বুমরার ঘণ্টায় ১৪০.৭ কিলোমিটার গতির ডেলিভারি ঠিকঠাক বুঝেই উঠতে পারেননি।
প্রথম স্পেলে টানা ৭ ওভার করা বুমরা শেষটিতে তুলে নেন মার্করামকেও। ১ ছক্কা ৫ চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করা মার্করাম ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে ঋষভ পন্তের হাতে। ৫ রানের মধ্যে বুমরা দুই ওপেনারকে তুলে নেওয়ার পর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে যায় ভারতের হাতে।
কুলদীপ যাদব এসে টেম্বা বাভুমাকে ফেরানোর পর টনি ডি জর্জি ও উইয়ান মুল্ডার কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের ৪৩ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিও ভেঙে দেন কুলদীপ। এরপর আর কেউই দাঁড়াতে পারেননি।
১১৪ থেকে ১৫৯—৪৫ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে শেষ উইকেট হিসেবে কেশব মহারাজকে এলবিডব্লু করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন বুমরা। টেস্টে এটি তাঁর ১৬তম বার ইনিংসে ৫ উইকেট। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ইশান্ত শর্মার পর ভারতের মাটিতে টেস্টের প্রথম দিনে কোনো পেসার ৫ উইকেট পেলেন এই প্রথম। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেই ম্যাচটি হয়েছিল গোলাপি বলে।
লাল বল বিবেচনায় নিলে ভারতে টেস্টের প্রথম দিনে ফাস্ট বোলারদের ৫ উইকেট নেওয়ার সর্বশেষ ঘটনা ২০০৮ সালে আহমেদাবাদে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইনের।
বুমরার ৫ উইকেট নেওয়ার দিনে বল হাতে ভালো করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসাররাও। কাগিসো রাবাদা চোটের কারণে ছিটকে পড়লেও মার্কো ইয়ানসেন, করবিন বশ ও মুল্ডাররা ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ভুগিয়েছেন। ২০ ওভার ব্যাট করে ভারত তুলতে পেরেছে মাত্র ৩৭ রান। এর মধ্যে ইয়ানসেনের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন জয়সোয়াল। ৫৯ বলে ১৩ রান করা লোকেশ রাহুলের সঙ্গে ৩৮ বলে ৬ রান নিয়ে অপরাজিত নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা ওয়াশিংটন সুন্দর।
সব মিলিয়ে ইডেনে প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ৭৫ ওভারে দুই দল মিলিয়ে উঠেছে ১৯৬ রান, উইকেট পড়েছে ১১টি। ইডেনে টেস্টের প্রথম দিনে এর চেয়ে বেশি উইকেট পড়েছিল শুধু ২০১৯ সালের বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচেই (১৩টি)।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৫ ওভারে ১৫৯ (মার্করাম ৩১, মুল্ডার ২৪, ডি জর্জি ২৪, রিকেলটন ২৩; বুমরা ৫/২৭, কুলদীপ ২/৩৬)।
ভারত প্রথম ইনিংস: ২০ ওভারে ৩৭/১ (রাহুল ১৩*, জয়সোয়াল ১২; ইয়ানসেন ১/১১)।