Samakal:
2025-11-17@19:11:15 GMT

নিরাময়ে সাইকোথেরাপি

Published: 28th, June 2025 GMT

নিরাময়ে সাইকোথেরাপি

অতীতের ঘটনা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে সাইকোথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে

দশ-এগারো বছর আগে যখন বয়ঃসন্ধি শুরু হয়, তখন তারিন (ছদ্মনাম) নিকটাত্মীয়ের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হন। তখন অনেক শারীরিক, মানসিক অশান্তির মধ্য দিয়ে গেলেও কাউকে ভয়ে কিছু বলতে পারেননি। মনে হতো, সবাই তাঁকেই দোষ দেবে অথবা কেউ হয়তো দুর্বলতার সুযোগ নেবে। এ প্রসঙ্গে তারিন বলেন, ‘এতকিছুর পরও আমি আমার পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের দিকে ফোকাস রেখে গেছি। এখন আমার বিয়ের কথা চলছে। হবু বরের সঙ্গে কথা হয়। খুব ফ্রেন্ডলি স্বভাবের আর অনেক কেয়ারিং। মনে হয়, তিনি আমাকে অনেক ভালো বুঝতে পারেন। আমার বিশ্বাস, এই সম্পর্কে আমি অনেক সুখী হতে পারব। সমস্যা হলো, প্রায়ই আমার সেই খারাপ অতীত মনে পড়ে যায়। ভুলে থাকতে চাই সে কথা, পারি না। কেমন যেন মনে হয়, এটি আমার সঙ্গে কেন হলো? আমার তো কোনো দোষ ছিল না। আমি নতুন সম্পর্কে, নতুন মানুষকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। মনে প্রশ্ন জাগে, তিনি কি আমার এই দুর্ঘটনা মেনে নেবেন? যদি তিনি না মানেন– এই ভয় কাজ করে সারাক্ষণ মনের মধ্যে। আমি তাঁকে হারাতে চাই না, নতুন করে বাঁচতে চাই। এই মানসিক ট্রমা থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসব?’
ধর্ষণের ফলে শুধু শরীরই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; মানসিকভাবে ব্যাপক বিপর্যস্ত অবস্থা দেখা দেয়। তারিন হয়তো নিজেকে বেশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন ১০-১১ বছর ধরে। যেহেতু তিনি এখন বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করতে যাচ্ছেন, সেহেতু বিভিন্ন প্রশ্ন বা সংশয় মনে আসছে। এ ধরনের পরিস্থিতিতে এটি অস্বাভাবিক নয়। এ ধরনের ট্রমা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবে বহু বছর ধরে একজন মানুষের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মানসিক উন্নয়ন ও সাহায্য পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইএমডিআর সাইকোথেরাপি
ইএমডিআর (আই মুভমেন্ট ডিসেনসিটাইজেশন অ্যান্ড রিপ্রসেসিং) থেরাপি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী পদ্ধতি, যা মানসিক ট্রমা কাটাতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে অতীতের দুঃখজনক ঘটনা বা ট্রমা থেকে মুক্তির জন্য মস্তিষ্কের সঠিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধার করা হয়। এটি বিশেষত সেই ব্যক্তিদের জন্য উপকারী, যারা দীর্ঘ সময় ধরে শারীরিক বা মানসিক আঘাত ভোগ করছেন। এই থেরাপির মাধ্যমে স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের গভীরে চাপ সৃষ্টি করা স্মৃতি ও অনুভূতিগুলো পুনঃপ্রসেস করা হয়, যা অতীতের ঘটনা সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি নিজের ভেতরে আত্মবিশ্বাস তৈরি করে।

নিজেকে দোষী না মনে করা
‘এটি আমার সঙ্গে কেন হলো? আমার তো কোনো দোষ ছিল না।’ এমন কথা বহু ভিকটিমের মনে আসে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি যেন নিজেকে কোনোভাবেই দোষী মনে না করেন। ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়ন একটি আক্রমণ এবং এর জন্য পুরোপুরি অপরাধী সেই ব্যক্তি, যে এমন অপরাধ করেছে। ভিকটিম সর্বতো নির্দোষ ও নিরপরাধ।

নতুন সম্পর্কে অতীত শেয়ার করা
নতুন সম্পর্কে অতীত শেয়ার করার ভয় ও সংশয় খুবই সাধারণ। তবে সঠিক সময়ে এবং উপযুক্ত পরিস্থিতিতে যদি সম্পর্ক গভীর ও বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তবে এটি খুবই সহায়ক হতে পারে। এ নিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে চাপ না নিতে চেষ্টা করা উচিত। একে অপরকে সময় দিন, সম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং একে অপরের অনুভূতিকে সম্মান করুন। যদি মনে হয় যে একদিন আপনার অতীত শেয়ার করা প্রয়োজন, তবে সেটি একান্তভাবে আপনার এবং আপনার সঙ্গীর মধ্যেই হবে।

নতুন জীবনে মানসিক প্রস্তুতি
বিয়ের পর নতুন জীবন শুরু করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নেওয়া খুবই জরুরি। নতুন জীবন শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন জায়গায় যাওয়ার, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বাড়াতে পারেন। একসঙ্গে ভ্রমণ, সিনেমা দেখা বা একান্তে সময় কাটাতে পারেন। এতে একে অপরকে নতুনভাবে জানার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। v
লেখক : সাইকোথেরাপিস্ট

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

এ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন রাভিনা শামদাসানি।

ওএইচসিএইচআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদেরসহ দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানিয়েছি।’

রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘যেহেতু এই বিচারপ্রক্রিয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না, তাই আমরা সব জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগগুলো যেন প্রশ্নাতীতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে, সে জন্য ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি। এটি বিশেষভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন, এ মামলার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডের শান্তি দেওয়া হয়েছে।’

মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাভিনা শামদাসানি। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সব পরিস্থিতিতে এর বিরোধিতা করি।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা খাতের অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। আর এ সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, যেন আর কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে। এসব প্রচেষ্টাগুলোয় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তত রয়েছে ওএইচসিএইচআর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ