কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণ ও সহিংসতার ঘটনায় নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। আজ রোববার আসকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনা শুধু একটি ভয়াবহ অপরাধ নয়, বরং নারীর প্রতি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও বিদ্বেষের নগ্ন বহিঃপ্রকাশ, যা বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মৌলিক ভিত্তিকে লঙ্ঘন করে। পাশাপাশি এ ঘটনার দ্রুত, নিরপেক্ষ ও দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

আসকের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই অপরাধের পেছনে কেবল ব্যক্তি নয়, বরং সরকারের নির্লিপ্ততা ও দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা কাজ করছে। একজন নারী তাঁর নিজ ঘরে, নিজ পরিচয়ে সুরক্ষিত না থাকলে, তা রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা ও নিরাপত্তাহীনতা নির্দেশ করে। অতীতে নারীদের ওপর হামলা, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ঘটনায় বিচার বিলম্বিত বা অপরাধীদের রক্ষা করার যে প্রবণতা দেখা গেছে, এ ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা বলে বিবেচিত হতে পারে।

গণমাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে ঘটনার যথাযথ ও দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্ত ব্যক্তির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিবৃতিতে ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা, ক্ষতিপূরণ, প্রয়োজনীয় আইনি, মানসিক ও স্বাস্থ্যসহায়তা প্রদানের দাবি জানায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র মনে করে, এ ধরনের পৈশাচিক ঘটনার যথাযথ ও কঠোর বিচার না হলে নারীর মর্যাদা, অধিকার রক্ষা ও আইনের শাসন ভেঙে পড়বে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্রকে অবশ্যই কঠোর বার্তা দিতে হবে যে এমন বর্বরতার কোনো স্থান এই দেশে নেই। আসক রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানায়, দায়সারা নয় বরং ঘটনার প্রতিটি দিক স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অপর ধ ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

এ রায়ের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে: ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ (আইসিজি)। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর বেলজিয়ামভিত্তিক গ্রুপটি এ মন্তব্য করেছে। তারা বলেছে, এ বিচারপ্রক্রিয়া সমালোচনামুক্ত নয়। তবে এ রায়ের ফলে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ হয়েছে।

আইসিজির বাংলাদেশবিষয়ক জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট থমাস কিয়ান বিবৃতিতে বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার রায়কে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে স্বাগত জানানো হবে। কারণ, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বিক্ষোভকারীদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার জন্য তাঁর দায় নিয়ে সন্দেহের অবকাশ খুব কম।’

এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে গত বছর বিক্ষোভ-সহিংসতায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হওয়ার যে তথ্য দেওয়া হয়, সেটি উল্লেখ করেছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ।

এ বিচারপ্রক্রিয়া সমালোচনার বাইরে নয় উল্লেখ করে আইসিজি বলেছে, ‘(আসামির) অনুপস্থিতিতে হওয়া বিচার প্রায়ই বিতর্কের সূত্রপাত করে। এ মামলার ক্ষেত্রে যে দ্রুততার সঙ্গে শুনানি হয়েছে, সেটা এবং বিবাদী পক্ষের স্পষ্টত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতিও সুষ্ঠু বিচার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করে। এসব সমালোচনা বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জগুলোকে তুলে ধরছে। ২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতায় আসার পর দেশটির অন্তর্বর্তী সরকার (এসব চ্যালেঞ্জ) সমাধান করতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়নি। কিন্তু এসব সমালোচনা শেখ হাসিনার কর্মকাণ্ড, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কর্মকাণ্ড বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশের কর্মকাণ্ডকে হালকাভাবে নেওয়ার জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়।’

এ রায়ের উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে বলে মনে করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘(এ রায়ের ফলে) শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা এখন খুব কম বলে মনে হচ্ছে। তিনি যত দিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি না হচ্ছেন, তত দিন দলটির রাজনীতির ময়দানে ফেরা সহজ হবে না।’

আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা ধরে পড়া হলো রায়, এরপর এল মৃত্যুদণ্ডের আদেশ১০ ঘণ্টা আগে

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এমন এক সময়ে সাম্প্রতিক বোমা হামলার ঘটনা এবং আওয়ামী লীগের ‘লকডাউন’ কর্মসূচি দেশটির পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে বলে উল্লেখ করেছে আইসিজি। তারা বলেছে, আওয়ামী লীগের সহিংসতাপূর্ণ কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা উচিত এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই দলটির সমর্থকদের ওপর অতিরিক্ত দমন-পীড়ন বাদ দিতে হবে।

আরও পড়ুনযত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—এটা পুনর্নিশ্চিত করেছে এই রায়২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর কতটা গুরুত্ব পেল৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ