বরিশালে পলিথিনে পেঁচানো হাত-পা বাঁধা নারী উদ্ধার
Published: 29th, June 2025 GMT
বরিশাল সদরের তালুকদারের হাট এলাকায় হাত-পা বাঁধা ও পলিথিনে পেঁচানো অবস্থায় মারিয়া বেগমকে (২৩) উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রীর স্বজনরা নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
রোববার ভোরে বরিশাল-ভোলা সড়কের পাশ থেকে স্থানীয়রা মারিয়াকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশ শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করে।
বন্দর থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম জানান, মারিয়ার স্বামীর নাম মশিউর রহমান। শ্বশুর বাড়ি ভোলায়। বরিশাল নগরীর দপদপিয়া গ্যাসটারবাইন এলাকায় তার বাবার বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয়রা জানান, তালুকদারহাট এলাকার ব্যবসায়ীরা সড়কের পাশে পলিথিনে পেঁচানো অবস্থায় মারিয়াকে দেখতে পান। পরে পুলিশে খবর দেন তারা।
হাসপাতালে মারিয়া সাংবাদিকদের জানান, ভোলার ব্যবসায়ী মশিউর রহমানের সঙ্গে এক বছর আগে তার বিয়ে হয়। স্বামীর কাছে ভোলা যেতে শনিবার বিকেলে বাসা থেকে বের হন। ঘাটে গিয়ে লঞ্চ ধরতে পারেননি। সড়ক পথে লাহারহাট স্টেশনে গিয়েও লঞ্চ ধরতে ব্যর্থ হন। এর পর বাসায় ফিরতে সন্ধ্যার পর ভ্যানে বরিশাল নগরীর উদ্দেশে রওনা হন।
চরকাউয়ার জিরো পয়েন্টে পৌঁছলে স্বামীর প্রাক্তন স্ত্রীর ভাইয়েরা মারিয়াকে অপহরণ করেন। একটি জঙ্গলে নিয়ে নির্যাতন করে হাতা-পা বেঁধে পলিথিনে পেঁচিয়ে ফেলে রেখে যান।
শেবাচিম হাসপাতালের দায়িত্বরত এক চিকিৎসক জানান, মারিয়ার পা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুড়ে ফোসকা পড়েছে। এটি এসিড নাকি রাসায়নিক জাতীয় কোনো দ্রব্যে হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বন্দর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর শ ল বর শ ল পল থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিতে হবে বহুমাত্রিক কৌশল
জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নগরমুখী স্রোত থামাতে উপকূলে উপযুক্ত কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে। নগরে আশ্রয় নেওয়া জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও সাশ্রয়ী পুনর্বাসন। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধা দিতে নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রাপ্তি সহজ করতে হবে। পাশাপাশি জাতীয়ভাবে প্রয়োজন একটি বহুমাত্রিক কৌশল।
গতকাল জার্মান কো–অপারেশন ও কারিতাস জার্মানির সহযোগিতায় কারিতাস বাংলাদেশ ও প্রথম আলো আয়োজিত ‘নগরমুখী জলবায়ু উদ্বাস্তু: সামাজিক নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তি’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন বক্তারা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ত্রাণ কর্মসূচি) সেখ ফরিদ আহমদ বলেন, সরকার চায় তার প্রত্যেকটা নাগরিক তার যে অধিকার, সেটা পাক। নগর অভিবাসীদের ভাগ্য উন্নয়নে নীতিকৌশল গ্রহণ করতে হবে। এটা করতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য–উপাত্তের প্রয়োজন বলে অভিমত দেন তিনি।
সেখ ফরিদ বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে তাঁদের বিভিন্ন সেবায় প্রবেশগম্যতা নেই। তাঁরা এ দেশের মানুষ। এসব সেবা পাওয়ার অধিকার তাঁদের আছে।
বহুমাত্রিক কৌশল ও সমন্বিত নীতি গ্রহণের সময় সেখ ফরিদ শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, সারা দেশ নিয়ে ভাবার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সেখ ফরিদ বলেন, যে যে জায়গা থেকে উদ্বাস্তু হয়ে যাচ্ছেন, সে জায়গার নিকটবর্তী কোনো স্থানে তাঁকে যদি পুনর্বাসন করা যায়, তাহলে তাঁর আত্মপরিচয় ও আত্মসম্মানের সঙ্গে তিনি বেঁচে থাকতে পারবেন।
জাতিসংঘের উন্নয়নমূলক সংস্থা ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘সরকার মনে করে, শহরে যদি আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি শক্তিশালী করি, তাহলে নগরমুখী স্রোত বেড়ে যাবে। গ্রামে যেমন কর্মসংস্থান করতে হবে, তেমনি শহরে এসে যারা জীবন–জীবিকা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে, সেটা কীভাবে মোকাবিলা করা যায়, সে পথ বের করতে হবে।’
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর কবিতা বোস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে নারী ও শিশুদের। বাস্তুচ্যুতি ঘটলে তাঁদের এ সংকট আরও গভীর হয়।
যাঁরা উদ্বাস্তু হন না, তাঁদের প্রজননস্বাস্থ্যসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতায় ভুগতে হয়। লবণাক্ততা এড়াতে মাসিক ঋতুচক্র বিলম্বিত করতে উপকূলের নারীরা জন্মনিরোধক ব্যবহার করেন জানিয়ে কবিতা বোস বলেন, উদ্বাস্তু হওয়া ঠেকাতে গ্রামে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামে থেকে যদি টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে মানুষ আর নগরমুখী হবেন না।
নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিল বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের কান্ট্রি ডিরেক্টর শেহনাজ ওজমাদার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
শেহনাজ ওজদামার বলেন, লিগ্যাল ডকুমেন্ট (জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ) না থাকায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সেবা পেতে বিঘ্ন ঘটছে। এতে তাঁদের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। তিনি তুরস্কের ভূমিকম্পে জাতীয় তথ্যভান্ডার দুর্যোগ–পীড়িত ব্যক্তিদের সহায়তায় কীভাবে কাজে লেগেছে, সে অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মো. ইসমাঈল হোসেন।
প্রবন্ধে মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, বিশ্বে জলবায়ু উদ্বাস্তু বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। একজন মানুষ যখন তাঁর বসতভিটা হারিয়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নেন, তখন তাঁর মানসিক অভিঘাত হয় গভীর। এর বাইরে তাঁদের প্রথম সংকট হয় আবাসনসংকট। এরপর থাকে বিশুদ্ধ পানি ও বিদ্যুতের সংকট। এগুলো অবৈধভাবে ব্যবস্থা করে নিতে হয় তাঁদের।
বাস্তুচ্যুতি হলে নাগরিকত্ব সনদ, জন্মনিবন্ধন—এগুলো সংগ্রহ করা যায় না জানিয়ে মো. ইসমাঈল হোসেন বলেন, এসব কাগজপত্র না থাকায় নাগরিক সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হন। তিনি জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য এসব আইনি কাগজপত্র পেতে প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানান।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শামছুন নাহার বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। এর চ্যালেঞ্জগুলো বহুমাত্রিক। জলবায়ু উদ্বাস্তুদের সংকট মোকাবিলায় একটা সমন্বিত ও টেকসই কর্মপন্থার ওপর জোর দেন তিনি।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার জাতীয় প্রকল্প কর্মকর্তা মো. সৈয়দ শাহরিয়ার শাবাব বলেন, জীবিকার সংকট বাস্তুচ্যুতির পেছনে একটা বড় সংকট। তাই উপকূলে টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, ‘যারা উদ্বাস্তু হচ্ছে, তারা আমাদের সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাদের জন্য একটা বহুমাত্রিক কৌশল নিতে হবে।’
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ পরিচালক (অপারেশনস) চন্দন গোমেজ জলবায়ু উদ্বাস্তুদের নিয়ে একটি তথ্যভান্ডার করার পরামর্শ দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট ও ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান খান বলেন, জলবায়ু নীতির মধ্যে যে ফারাক আছে, সেগুলোকে চিহ্নিত করে সমন্বিত ও সামষ্টিকভাবে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (রামরু) সদস্য ড. রাশেদ আলম ভূইয়া বলেন, গ্রাম ও নগর—এ দুই জায়গাতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য সরকারকে কাজ করতে হবে।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাকশন অ্যান্ড রেজিলিয়েন্সের পরিচালক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত কাকে বলব, সেটার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে এবং সেভাবে সাপোর্ট সিস্টেম প্রস্তুত করতে হবে।’
কারিতাস বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রধান আলেক্সান্ডার ত্রিপুরা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগে জরুরি সেবা প্রদানে তহবিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
কারিতাসের কর্মসূচি পরিচালক দাউদ জীবন দাস বলেন, প্রতিদিন দুই হাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু ঢাকা নগরীতে যোগ হচ্ছেন, বছরে যা সাত লাখ।
কারিতাস বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার (অ্যাডভোকেসি) জামিল আহমেদ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে একটা ওয়ার্কিং গ্রুপ করার পরামর্শ দেন।
গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।