এভিন কারাগারে ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৭১: ইরান
Published: 30th, June 2025 GMT
ইরানের রাজধানী তেহরানে অবস্থিত এভিন কারাগারে ২৩ জুন ইসরায়েলের হামলায় নিহত মানুষের সংখ্যা ৭১ জন। গতকাল রোববার ইরানি বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর এই তথ্য জানিয়েছেন।
সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে সংঘাত চলাকালীন একেবারে শেষ ভাগে এসে তেহরানের এভিন কারাগারে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ কুখ্যাত কারাগারে ইরানের রাজনৈতিক বন্দীদের রাখা হয়ে থাকে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ কারাগারে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল দেখাতে চেয়েছে যে শুধু সামরিক বা পারমাণবিক স্থাপনা নয়, বরং ইরানি শাসনব্যবস্থার চিহ্নগুলোকেও হামলার নিশানা করা হবে।
ইরানের বিচার বিভাগের সংবাদমাধ্যম মিজানে প্রকাশিত এক বক্তব্যে জাহাঙ্গীর বলেন, ‘এভিন কারাগারে হামলায় ৭১ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মী, সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া তরুণ, বন্দী, বন্দীদের দেখতে আসা পরিবারের সদস্য ও কারাগারের আশপাশে বসবাসকারী মানুষেরা।’
এর আগে জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, হামলায় এভিন কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের একটি অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং কিছু মানুষ হতাহত হয়েছেন। বিচার বিভাগ জানিয়েছে, বেঁচে থাকা বন্দীদের তেহরান প্রদেশের অন্যান্য কারাগারে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এভিন কারাগারে কয়েকজন বিদেশি নাগরিক বন্দী আছেন। এর মধ্যে দুই ফরাসি নাগরিকও আছেন।
হামলার পর ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বাহো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘তেহরানের এভিন কারাগারে হামলার ঘটনাটি আমাদের নাগরিক সেসিল কোহলা ও জ্যাকস প্যারিসকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটি কার্পাসের ফুল
প্রায় দুই হাজার বছর আগে লেখা রোমান লেখক পেট্রোনিয়াসের স্যাটিরিকান গ্রন্থে বাংলার ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত মসলিন বস্ত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাঁর বর্ণনায় মসলিন ছিল যেন হাওয়ায় বোনা কাপড়। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ লিখেছিলেন, মসলিন যেন ভোরের কুয়াশা দিয়ে বোনা। কী চমৎকার সব কাব্যিক উপমা!
যে কাপড়কে নিয়ে এত উপমা, সেই কাপড় আসলে কি হাওয়া বা কুয়াশা দিয়ে বোনা হতো? নিশ্চয়ই না। এ দুটির কোনোটি দিয়েই কাপড় বা বস্ত্র বয়ন সম্ভব নয়। কিন্তু সে কাপড়ের মাধুর্য ও সৌন্দর্য এমনই ছিল যে তা দেখে এরূপ মনে হতো। আসলে মসলিন বোনা হতো এক বিশেষ ধরনের তুলা থেকে তৈরি করা সূক্ষ্ম বা মিহি সুতা দিয়ে। সে সুতা তৈরি হতো ফুটি কার্পাস তুলা থেকে।
একদিন বিজ্ঞানলেখক আবদুল গাফফার রনি বললেন, গাজীপুর জেলার কাপাসিয়ার হাইলজোর গ্রামে কৃষক তাজউদ্দিনের বাড়িতে ফুটি কার্পাসের গাছ আছে। জানালেন, তিনি তাঁর কাছ থেকে ফুটি কার্পাসের একটি চারাও এনেছেন, বাড়িতে লাগাবেন।
তাঁর কথায় কাপাসিয়ার সেই গ্রামে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু একটু খোঁজখবর নিতেই ওই গ্রামে আর যেতে হলো না, গাজীপুরের শ্রীপুরেই পেয়ে গেলাম সে গাছ। শ্রীপুরের ভবানীপুরে তুলা গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও বীজবর্ধন খামারের মাঠের একটি গবেষণা খেতে চাষ করা হয়েছে ফুটি কার্পাস। হেমন্তের এক সকালে সে খামারের কটন অ্যাগ্রোনমিস্ট মো. আবদুল ওয়াহাব সেই খেতের পাশে দাঁড়িয়ে ফুটি কার্পাসের গাছগুলোকে দেখাচ্ছিলেন। বললেন, গাজীপুরের কাপাসিয়া, দিনাজপুর, বাগেরহাট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে তিনি ফুটি কার্পাসের চারটি জাত সংগ্রহ করেছেন। গত বছরের ২৯ আগস্ট সেই চারটি জাতের চারা এই খামারে গবেষণার উদ্দেশ্যে লাগানো হয়েছে। প্রতিটি জাতের ৪০টি করে গাছ রয়েছে সেখানে, পাশাপাশি লাগানো জাতগুলোর ফেনোটাইপিক বৈশিষ্ট্য দেখা তাঁর উদ্দেশ্য।
ঘুরে ঘুরে চারটি জাতের গাছগুলোকেই দেখলাম। প্রতিটি গাছই আমার দ্বিগুণ উচ্চতারও বেশি লম্বা, এই এক বছরেই গাছগুলো অনেক লম্বা হয়ে ছোট বৃক্ষের রূপ ধরেছে, অনেক ডালপালা, ডালগুলো খাড়া, শক্ত ডালপালার বাকল ধূসর বাদামি, অমসৃণ। ডালগুলোর মাথায় ফুল ফুটেছে। আবার তুলার গুটিও ধরেছে। কোনো কোনো গুটি পেকে ফেটে তার তুলাও বেরিয়ে পড়েছে। সকাল বলে ফুলের রং ঘিয়ে বা সবুজাভ হালকা হলুদ। বেলা পড়তেই ফুলগুলো গোলাপি হতে শুরু করে। ফুটি কার্পাসের প্রধান গবেষক আবদুল ওয়াহাব জানালেন, ফুটি কার্পাসের গাছ প্রায় ১৫ বছর বাঁচে, গাছের বৃদ্ধি দ্রুত হয়। এ জন্য একে বলে ট্রি কটন বা গাছতুলা। অন্যান্য তুলার চেয়ে এ গাছের তুলার আঁশ খাটো, শক্ত ও চকচকে উজ্জ্বল। কিছু গাছে দুই দফায় ফুল ধরে। সেপ্টেম্বর থেকে খামারের গাছগুলোয় ফুল ফোটা শুরু হয়েছে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে বেশি ফুল ফুটছে, মার্চ-এপ্রিলে আরেক দফায় ফুল ফুটবে, তবে সে সময় কম ফোটে।
জানা গেল, তাঁত বোর্ড এ দেশে মসলিন পুনরুদ্ধারে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ফুটি কার্পাসগাছের দুষ্প্রাপ্যতা। অথচ একসময় এ দেশে মেঘনা-শীতলক্ষ্যা নদীর তীর ধরে এ গাছ ছিল অঢেল, চাষ করা হতো। যে কারণে ফুটি কার্পাস তুলা জন্মানো গাজীপুরের এই প্রধান এলাকার নামই কালক্রমে হয়ে যায় কাপাসিয়া। এ দেশে ফুটি কার্পাসের গাছ যখন পাওয়াই যাচ্ছিল না, তখন গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকার জনৈক কলেজ অধ্যক্ষ তাজউদ্দীন এলাকায় মাইকিং করে ও প্রচারপত্র ছেপে বিলি করেন। এর ফলে কাজ হয়। ২০১৭ সালের মার্চে গাজীপুরের রাঙামাটি ও কাপাসিয়া গ্রাম থেকে ফুটি কার্পাসগাছের খবর পাওয়া যায়। ওই দুটি জায়গা থেকে ৩৮টি ফুটি কার্পাসের গাছ সংগ্রহ করেন গবেষকেরা। ফলে বিলুপ্তির শঙ্কামুক্ত এখন ফুটি কার্পাস।