নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, কেউ যদি এখনকার যে আকাঙ্ক্ষা, যা প্রস্ফুটিত, যা বোঝা গেছে, যা প্রকাশিত; তার সঙ্গে বেইমানি করতে চেষ্টা করে, তার বিরুদ্ধে লড়াই হবে। একেবারে নতুন ধরনের একটা পলিটিকস তৈরি হবে। নতুন ধরনের একটা রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরি হবে।

মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে গণশক্তি সভা আয়োজিত ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ও জন-আকাঙ্ক্ষা’-শীর্ষক আলোচনা সভায় মান্না এ কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ২০২৪ সালের আন্দোলন কেবল সরকার পতনের নয়, বরং রাষ্ট্র, সমাজ ও জীবনের মান বদলের জন্য মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় দিক হলো—মানুষ জেনেবুঝে জীবন দিয়েছে। শুধু ছাত্র নয়, কিশোর, মা ও শিশু পর্যন্ত রাস্তায় নেমেছে। এ রকম অকাতরে আত্মত্যাগ ইতিহাসে বিরল।

তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনাই নয়, এটি একটি জাতির অভ্যন্তরীণ চেতনার বিস্ফোরণ। মানুষের আকাঙ্ক্ষা, অর্থাৎ ভালো জীবন, ন্যায্য অধিকার ও নিরাপত্তার আকাঙ্ক্ষা থেকেই এই আন্দোলন এসেছে।

ডাকসুর সাবেক এই ভিপি বলেন, এইবারের আন্দোলন আর আগের মতো ছিল না। এটা এমন ছিল না যে, হঠাৎ একটা মিছিল বের হলো, পুলিশ গুলি করল, কয়েকজন মারা গেল। বরং মানুষ জেনেবুঝে রাস্তায় গেছে, মৃত্যুর আশঙ্কা জেনেও পিছু হটেনি। নিজের ঘরে বসে থাকার চেয়ে রাজপথে নামাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছে সাধারণ মানুষ। আমি নিজের চোখে দেখেছি, এক মা তাঁর শিশুকন্যাকে নিয়ে পথে নেমেছেন, জানেন গোলাগুলি হচ্ছে—তবুও পিছু হটেননি। এটাই আকাঙ্ক্ষার শক্তি।

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে মান্না বলেন, শুধু দল বদলালেই হবে না। আমরা সরকার বদলের লড়াই করিনি, সমাজ বদলের লড়াই করেছি। এই সমাজ বদলের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার। প্রথমবারের মতো বড় বড় রাজনৈতিক দল এক টেবিলে বসেছে, এমনকি যারা অতীতে একসঙ্গে বসতেই চাইত না, তারা এখন আলোচনা করছে। এটাও পরিবর্তনের সূচনা।

সাবেক সচিব আবদুল আল মামুনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন এমরান চৌধুরী, সাকিব আনোয়ার, ফেরদৌসী আক্তার প্রমুখ। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ক বদল র

এছাড়াও পড়ুন:

এ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণা গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের সময় গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের (ওএইচসিএইচআর) দপ্তরের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তবে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

আজ সোমবার মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ মন্তব্য করেন রাভিনা শামদাসানি।

ওএইচসিএইচআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকে আমরা নির্দেশদাতা ও নেতৃত্বের অবস্থানে থাকা ব্যক্তিদেরসহ দোষীদের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে আসছি। ভুক্তভোগীদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার ব্যবস্থা করারও আহ্বান জানিয়েছি।’

রাভিনা শামদাসানি বলেন, ‘যেহেতু এই বিচারপ্রক্রিয়ার কার্যক্রমের বিষয়ে আমরা অবগত ছিলাম না, তাই আমরা সব জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক অপরাধের অভিযোগগুলো যেন প্রশ্নাতীতভাবে যথাযথ প্রক্রিয়া ও ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করে, সে জন্য ধারাবাহিকভাবে বলে এসেছি। এটি বিশেষভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ যখন, এ মামলার ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার হয়েছে এবং মৃত্যুদণ্ডের শান্তি দেওয়া হয়েছে।’

মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাভিনা শামদাসানি। তিনি বলেছেন, ‘মৃত্যুদণ্ডের রায়ের জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। আমরা সব পরিস্থিতিতে এর বিরোধিতা করি।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য প্রকাশ, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য ও ক্ষত কাটিয়ে ওঠার দিকে এগিয়ে যাবে। এ প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা খাতের অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক সংস্কার অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত। আর এ সংস্কার হবে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, যেন আর কখনো মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে। এসব প্রচেষ্টাগুলোয় বাংলাদেশের সরকার ও জনগণকে সহায়তা দিতে প্রস্তত রয়েছে ওএইচসিএইচআর।

সম্পর্কিত নিবন্ধ