মুরাদনগরে নির্যাতিত সেই নারী ও তার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে মঙ্গলবার দুপুরে হেলিকপ্টারে এলাকায় আসেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ। যদিও ওই নারী বাড়িতে ছিলেন না। পরে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে যোগ দেন কাজী কায়কোবাদ।

সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে কায়কোবাদ বলেন, ধর্ষিতা বোনের প্রতি সান্ত্বনা জানাতে আমি ছুটে এসেছি। এই পৈশাচিক নির্যাতনের ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, মুরাদনগরের সেই ঘটনার দায় বিএনপির ওপর চাপাতে চেয়েছিল একটি গোষ্ঠী। কিন্তু প্রকৃত তথ্য এখন বেরিয়ে এসেছে। এ ঘটনার সাথে বিএনপির কোনো কর্মী সম্পৃক্ত নয়। থানার ওসি ও একজন সাংবাদিক বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছেন, ষড়যন্ত্র করছেন। আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

বিএনপি নেতা বলেন, এই থানার ওসি যোগদানের পর আর আমাদের উপদেষ্টা, শিশু উপদেষ্টা (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া) আওয়ামী সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসন করেছেন। যেহেতু তাদের পুনর্বাসন হয়েছে তাই এসব ঘটনা ঘটছে।

তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ তাদের সঙ্গে আছে। ফলে আগামীতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আরও বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারে।

এ সময় জেলা বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন মোল্লা, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন, সদস্য সচিব মোল্লা মজিবুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া ও যুবদল নেতা মাসুদ রানাসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তবে কায়কোবাদের অভিযোগ অস্বীকার করে মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান সমকালকে বলেন, অপরাধ দমন করা আমাদের কাজ। কোনো দলকে পুনর্বাসন করা পুলিশের কাজ নয়। এলাকার লোকজন এখন শান্ত আছেন। যখন বদলির আদেশ আসে, চলে যাব। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে এলাকার যুবকরা উল্টো তাকে মারধর ও বিবস্ত্র ভিডিও ধারণ করে। এ সময় ওই যুবকরা ধর্ষণের অভিযোগে একই গ্রামের ফজর আলী নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করে হাত-পা ভেঙে দেয়। ওই নারীকে নির্যাতনের ৫১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও শনিবার রাত থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে ওই রাতেই পুলিশ প্রধান আসামি ফজর আলীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অপর গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো.

আলমের ছেলে মো. আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক। বৃহস্পতিবার পর্নোগ্রাফি আইনে ওই চারজনের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে হতে পারে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম র দনগর ম র দনগর ব এনপ র

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থ পাচার করে বিদেশে গড়ে তোলা ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান

বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিভিন্ন দেশে গড়ে তোলা প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটি দেশের সাতটি শহরে অনুসন্ধান চালিয়ে এই তথ্য পাওয়া গেছে বলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে জানিয়েছেন সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব।

আজ রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান ও সিআইসি মহাপরিচালক আহসান হাবিব প্রধান উপদেষ্টার সামনে এসব তথ্য তুলে ধরেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ ছাড়া নয়টি দেশে ৩৫২টি পাসপোর্টের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেগুলো টাকার বিনিময়ে অর্জন করেছে কিছু বাংলাদেশি। দেশগুলো হচ্ছে- অ্যান্টিগা অ‍্যান্ড বারবুডা, অস্ট্রিয়া, ডমেনিকা, গ্রেনেডা, সেন্ট কিটস অ‍্যান্ড নেভিস, নর্থ মেসিডোনিয়া, মালটা, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্ক।

সিআইসির মহাপরিচালক আহসান হাবিব বলেছেন, দেশে বসেই বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিক প্রস্তুতি শেষে সিআইসির গোয়েন্দারা দেশগুলোতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে বিস্তারিত তথ্য তুলে নিয়ে আসেন। আরও অনুসন্ধান চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে অর্থ পাচার করে গড়ে তোলা ৩৪৬টি সম্পত্তির সন্ধান মিলেছে। এটি আমাদের অনুসন্ধানের আংশিক চিত্র। এসব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে বাংলাদেশের অনুকূলে নিয়ে আসার জন‍্য এবং অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সাজা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সিআইসি। ছয়টিরও অধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে।’

সিআইসির মহাপরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা যা পেয়েছি এটি “টিপ অব দ্য আইসবার্গ” (হিমশৈলের চূড়া মাত্র)। আমাদের কাছে এখনো প্রচুর তথ্য রয়েছে, যা উন্মোচনে আরও সময় প্রয়োজন।’

এই অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা শেখ হাসিনার আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেটাবেজ (তথ্যভাণ্ডার) নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় নিজেদের লোক বসিয়ে বহু তথ‍্য গায়েব করে দিয়েছেন জানিয়ে আহসান হাবিব বলেন, মুছে দেওয়া ওই সব তথ‍্য উদ্ধারে দক্ষতা অর্জন করেছে সিআইসি।

বিস্তারিত জানার পর প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে দুদক, সিআইসি ও পুলিশের সিআইডিসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশে সম্পত্তি তৈরি করতে না পারে।

সিআইসিকে অনুসন্ধান কাজ চলমান রাখার নির্দেশনা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যত দূর সম্ভব গভীরে যেতে হবে এবং সম্ভাব্য আরও দেশে অনুসন্ধান বিস্তৃত করতে হবে। যাতে দেশের সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপে সরকার সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।

দেশের অর্থনৈতিক খাতের এই লুটপাটকে ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন‍্য একটি সুন্দর দেশ বিনির্মাণ করতে হলে অবশ্যই এই লুটেরাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দেশের সম্পদকে কীভাবে লুটপাট করেছে কিছু মানুষ, তা জাতির সামনে প্রকাশ করতে হবে। সে জন‍্য সবগুলো সংস্থাকে জোটবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ