সাহেব আলীতে শুরু, বাটলারে স্বপ্নপূরণ
Published: 4th, July 2025 GMT
২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে পথচলা শুরু বাংলাদেশ নারী দলের। প্রথম ম্যাচেই ১-০ গোলে হার। তবে সেই হতাশা বেশি দিন থাকেনি। পরের ম্যাচে ৩১ জানুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে ২-০ গোলে হারিয়ে আসে প্রথম জয়।
সেই শুরু থেকে আজ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশ নারী দল খেলেছে ফিফা–স্বীকৃত টায়ার-১ শ্রেণির ৬৯টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এর মধ্যে জয় ২৭টি, হার ৩১টি, ড্র ১১টি। ১৫ বছরের এই পথচলায় সবচেয়ে উজ্জ্বল অর্জন—প্রথমবারের মতো এএফসি নারী এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়া।
কোচ সাহেব আলী বেঁচে থাকলে আজ নিশ্চয়ই খুব খুশি হতেন। ১৯৭৭ সালের ১০ আগস্ট ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ২২ জন ছাত্রীকে নিয়ে ঢাকায় প্রথম মেয়েদের ফুটবলের অনুশীলন শুরু করেছিলেন তিনিই। তখন সাহেব আলী বলেছিলেন, এই মেয়েদের মধ্যেই ভবিষ্যতের ফুটবলার আছে। ৭-৮ জন অনেক দূর যেতে পারে। কিন্তু অর্থাভাবে কয়েক দিনের মধ্যেই সেই অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। তারপর দীর্ঘ নীরবতা।
২০০৩ সালে ফিফা ও এএফসির চাপ না থাকলে হয়তো সেই নীরবতা আজও থাকত। বাধ্য হয়েই বাফুফে আবার চালু করে নারী ফুটবল। মাঠে এসে তখন ম্যাচ পণ্ড করে দেয় একশ্রেণির মানুষ। বাফুফে পিছিয়ে আসে। কিন্তু মেয়েদের ফুটবল চালু না রাখলে অনুদান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় ফিফা। সেই হুমকিই যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
আরও পড়ুনপাহাড়ি কন্যা ঋতুপর্ণা, যাঁর বাঁ পায়ের জাদুতে ইতিহাসের সামনে বাংলাদেশ০২ জুলাই ২০২৫২০০৭ সালে ‘ভিশন এশিয়া’ প্রকল্পের অধীনে প্রথম মহিলা ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে বাফুফে। ২০০৯ সালে শুরু হয় জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ। এরপর গোলাম রব্বানীকে নারী দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাঁর হাত ধরেই শুরু নতুন যাত্রা। যদিও বাফুফে ভবনে দীর্ঘমেয়াদি আবাসিক ক্যাম্পের আয়োজন দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ভঙ্গুর কাঠামোর মধ্যে শুধু ক্যাম্প করে আর কত দূর যাওয়া যাবে? মেয়েদের অদম্য ইচ্ছার জোরে কত দূর যাওয়া যায়, তা তো আজ প্রমাণিতই।
২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের সময়টায় দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ ছিল বাংলাদেশ। ২০১১ সালে সাফের বাইরে প্রথম কোনো দল হিসেবে উজবেকিস্তানের সঙ্গে খেলার সুযোগ আসে। অলিম্পিক বাছাইয়ের সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে হেরেছে বাংলাদেশ।
গোলের পর আনন্দে কেঁদেই ফেললেন ঋতুপর্ণা চাকমা। উচ্ছ্বসিত মারিয়া মান্দা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নারী ফুটবলে ইতিহাস, এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ
দেশের ফুটবলে লেখা হয়েছে নতুন এক ইতিহাস। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে এএফসি নারী এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে।
আজ বিকেলে ইয়াঙ্গুনে শক্তিশালী মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। সেই জয়েই কার্যত নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশ চূড়ান্ত পর্বে যাওয়া। অপেক্ষা ছিল ৫ জুলাই শেষ ম্যাচের জন্য।
তবে আজই সন্ধ্যায় একই গ্রুপে (সি গ্রুপ) বাহরাইন-তুর্কমেনিস্তানের ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র হওয়ায় এক ম্যাচ হাতে রেখেই গ্রুপসেরা নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের। যাতে নিশ্চিত হয়েছে ২০২৬ এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ।
মিয়ানমারে অনুষ্ঠানরত ২০২৬ এএফসি নারী এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে এখন পর্যন্ত দুই ম্যাচে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ পয়েন্ট। মিয়ানমার ৩, আর বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তানের ঝুলিতে ১ পয়েন্ট করে।
৫ জুলাই গ্রুপের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ যদি তুর্কমেনিস্তানের কাছে হারেও, আর মিয়ানমার যদি বাহরাইনকে হারিয়ে মোট ৬ পয়েন্ট পায়—তবুও নিয়ম অনুযায়ী মুখোমুখি লড়াইয়ে জয়ী বাংলাদেশই হবে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। আগামী বছর অস্ট্রেলিয়ায় হতে যাওয়া আসরে জায়গা পাবে বাছাইপর্বের গ্রুপসেরারাই।
বাংলাদেশই বাছাইপর্ব থেকে এশিয়ান কাপের চূড়ান্ত পর্বে ওঠা প্রথম দল। চূড়ান্ত পর্বের ১২ দলের মধ্যে আগেই জায়গা নিশ্চিত ছিল চারটি দলের। স্বাগতিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়া, আর সর্বশেষ আসরের সেরা তিন দল হিসেবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। তাদের সঙ্গে যোগ হবে বাছাইয়ের আট গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা।
বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত একবারই এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলার কীর্তি আছে। ১৯৮০ সালে কুয়েতে খেলেছিল বাংলাদেশের পুরুষদের জাতীয় দল। এরপর আর কখনো বাংলাদেশের কোনো জাতীয় দল এশিয়ান কাপে খেলতে পারেনি। বর্তমানে ছেলেরা ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব খেলছে। প্রথম দুই ম্যাচে মাত্র ১ পয়েন্ট নিয়ে জামাল ভূঁইয়াদের চূড়ান্ত পর্বে ওঠার পথ এই মুহূর্তে কঠিন।
এমন সময়েই মেয়েদের জাতীয় দল দেখিয়ে দিল, স্বপ্ন শুধু দেখা নয়, ছুঁয়ে ফেলাও যায়।