চট্টগ্রাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ এনে পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন রিয়াজুল জান্নাত নামে এক নারী। দুই কোটি টাকা চাঁদা না পেয়ে তাঁর স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকি মব সৃষ্টি করে তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নগরের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন চাঁদা দাবির অভিযোগকে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বলে জানিয়েছেন। মিথ্যা অভিযোগের জন্য রিয়াজুল জান্নাতের বিরুদ্ধে মানহানিসহ দুটি মামলা দায়ের করবেন বলে জানান তিনি। 

শনিবার চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বরাবর আইনী বিচার চেয়ে চিঠি দেন রিয়াজুল জান্নাত। চিঠিতে তার স্বামী নওশেদ জামালকে জামায়াতে ইসলামীর বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওযার্ডের সেক্রেটারি দাবি করেন। মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার নওশেদ জামালকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানা-পুলিশ। নওশেদ জাতীয় শ্রমিক লীগ মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ কমিশনারকে দেওয়া চিঠিতে রিয়াজুল জান্নাত অভিযোগ করেন, তার স্বামী নওশেদ জামাল চট্টগ্রামে মেঘনা পেট্রোলিয়াম এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি জামায়াতে ইসলামীর রোকন। সিটি করপোরেশনের বাগমনিরাম দক্ষিণ সাংগঠনিক ওয়ার্ড সেক্রেটারি। কিছুদিন ধরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে নেজাম (নিজাম) উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর স্বামীর কাছ থেকে দুই কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। চাঁদা না পেয়ে তাঁর স্বামীকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওতে নিজাম উদ্দিন একটি কক্ষে বসে মুঠোফোনে কথা বলেন। সেখানে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আরে ভাই শোনেন, পুলিশ পারে না যে এমন কিছু নাই.

..। আমি বলতে চাচ্ছি, আপনার যার প্রতি ক্ষোভ, যাদের প্রতি ক্ষোভ, ওই তিনজনকে হলেই তো হইছে... আপনি যদি চান ওই তিনজনকে...করে দিতে পারবে ...দেশে থাকতে হবে, এটা মাথায় রাইখেন।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে নওশেদ জামাল আওয়ামী লীগের শ্রমিক নেতা ছিলেন। তার প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। প্রথমে ওই নারী ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির কথা বলেছিলেন। এখন দুই কোটি টাকা বলছেন। সিএমপি কমিশনারকে বলেছি, অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত করতে। আমার বিরুদ্ধে জিরো পয়েন্ট এক পারসেন্ট সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবেন। আমি স্বেচ্ছায় কারাগারে যাব। সত্যতা না পেলে ওই নারীর বিরুদ্ধে আমি মানহানিসহ দুটি মামলা দায়ের করব।’
 
এক প্রশ্নের জবাবে নিজাম উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর নিজেকে জামায়াত পরিচয় দিচ্ছেন। জামায়াতের নামে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন। 

চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) মাহমুদা বেগম বলেন, এক নারী চাঁদা-দাবির একটি অভিযোগ দিয়েছেন। এখন এটি কমিশনার স্যার তদন্ত করে দেখবেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নওশ দ জ ম ল

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ