বাংলাদেশে গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোর তথ্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। রোম সনদের ১৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিটি ঘটনার বিচার চায় মানবাধিকার সংগঠনটি। গতকাল বুধবার বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সংগঠনটি অন্তর্বর্তী সরকারের  প্রতি এই আহ্বান জানায়। 

বিবিসির ওই প্রতিবেদনে একটি ফাঁস হওয়া অডিও বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, আন্দোলন দমনে গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সাউথ এশিয়া ফেসবুক পেজে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের বিক্ষোভে প্রাণঘাতী দমনপীড়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবিও জানিয়েছে অ্যামনেস্টি। 

সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ওই বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হতে পারেন। যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত প্রাণঘাতী ধাতব ছররা ভর্তি সামরিক রাইফেল ও শটগানের গুলিতে। নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণত অস্ত্রগুলো ব্যবহার করে। অভ্যুত্থান চলাকালে হাজারো মানুষ গুরুতর জখম হন, যার প্রভাব আজীবন রয়ে যেতে পারে।

অ্যামনেস্টি জানায়, বিক্ষোভের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ ও স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সরাসরি সহিংসতাকারী কিংবা নির্দেশদাতা হোন না কেন, দোষীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং মৃত্যুদণ্ডবিহীন বিচার প্রক্রিয়া চালাতে হবে। এ জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার যেন রোম সংবিধির ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অপরাধের ডকুমেন্ট আইসিসিতে পাঠানোর জোরালো পদক্ষেপ নেয়। 

বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি বলেছে, বিবিসির বিশ্লেষিত নতুন তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত বিক্ষোভের সময় একটি ব্যাপক দমনপীড়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অডিও প্রমাণ পাওয়া গেছে।  

অ্যামনেস্টি উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের স্বাধীন তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। সহিংসতায় জড়িত ব্যক্তিদের পাশাপাশি যারা নির্দেশ দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আশ্রয় না নিয়েই বিচার করতে হবে। 

গতকাল বিবিসি জানায়, ফাঁস হওয়া একটি অডিও টেপ যাচাই করে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। চলতি বছরের মার্চে ফাঁস হওয়া ওই অডিওতে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে বলেন, ‘যেখানেই পাবে, গুলি করবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অ য মন স ট

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি, সবাই বিজয়ী হয়েছেন: চাকসুর নতুন ভিপি

চাকসুর ভিপি পদে নির্বাচিত হওয়ার পর ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী মো. ইব্রাহিম হোসেন বলেছেন, ‘এ নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি। সবাই বিজয়ী হয়েছেন। আমরা এখান থেকে অনেক কিছু শিখেছি। আমরা নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীকে সৃজনশীল চিন্তা প্রকাশ করতে দেখেছি। সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় চাকসু সারা দেশে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে ক্যাম্পাসে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন মো. ইব্রাহিম হোসেন।

ইব্রাহিম বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি আমাদের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের প্রতি। তাঁরা আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন। আমরা তাঁদের কাছে গিয়েছি। তাঁদের কথাগুলো জানার চেষ্টা করেছি। তাঁরাও আমাদের অসম্ভব সম্মান করেছেন। ভালোবেসেছেন। যে দায়িত্ব শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ আমাদের জন্য আমানত। আমরা চাই, যে আমানত তাঁরা আমাদের ওপর দিয়েছেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে যেন পালন করতে পারি।’

সবার প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে ইব্রাহিম বলেন, ‘যদি আমাদের ব্যাপারে বা আমাদের দায়িত্বের ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন থাকে, তবে অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমাদের অবশ্যই বুদ্ধি–পরামর্শ দেবেন। সমালোচনা করবেন।’

এর আগে চাকসুর নবনির্বাচিত জিএস সাঈদ বিন হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের প্রথম কাজ হলো ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া।’

চাকসুতে ফিরল শিবির

দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) নেতৃত্বে ফিরেছে ইসলামী ছাত্রশিবির। সংগঠনটির সমর্থিত প্যানেল ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোটের’ প্রার্থীরা ভিপি-জিএসসহ ২৪টি পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে চারটায় সপ্তম চাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভিপি (সহসভাপতি) পদে ছাত্রশিবিরের মো. ইব্রাহিম হোসেন ৭ হাজার ৯৮৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সংগঠনটির চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের এমফিলের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের প্যানেলের সাজ্জাদ হোসেন পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭৪ ভোট।

জিএস (সাধারণ সম্পাদক) পদে ৮ হাজার ৩১ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন একই প্যানেলের সাঈদ বিন হাবিব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলের মো. শাফায়াত পেয়েছেন ২ হাজার ৭৩৪ ভোট।

চাকসুতে ২৬টি পদে নির্বাচন হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি পদে নির্বাচিত হয়েছেন ছাত্রদলের প্যানেলের প্রার্থী আইয়ুবুর রহমান। তিনি এজিএস (সহসাধারণ সম্পাদক) পদে পেয়েছেন ৭ হাজার ১৪ ভোট। একই পদে ছাত্রশিবিরের সাজ্জাত হোছেন পেয়েছেন ৫ হাজার ৪৫ ভোট। এ ছাড়া সহখেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জিতেছেন তামান্না মাহবুব। তিনি বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ছিলেন।

চাকসু নির্বাচনে শিবিরের সর্বশেষ জয় এসেছিল ১৯৮১ সালে। ওই নির্বাচনে ভিপি হন জসিম উদ্দিন সরকার আর জিএস হন আবদুল গাফফার। দুজনই ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন নেতা। এরপর দীর্ঘ ৪৪ বছর পর আবারও শিবির-সমর্থিত প্রার্থীরা সেই নেতৃত্বের আসনে ফিরলেন।

দীর্ঘ এক দশক পর

আশির দশক থেকেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। তবে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) সরকারের আমলে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ হারায় সংগঠনটি।

এরপর প্রায় এক দশকের নীরবতা কাটিয়ে গত বছরের ৫ আগস্ট আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফেরে ছাত্রশিবির। তাদের এই প্রত্যাবর্তনের এক বছর না যেতেই চাকসু নির্বাচনে এমন বিজয় ক্যাম্পাসজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এখন পর্যন্ত চাকসু নির্বাচন হয়েছে মাত্র সাতবার— ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১, ১৯৯০ এবং এবার ২০২৫ সালে। ১৯৮১ সালের নির্বাচনে ছাত্রশিবির পেয়েছিল প্রথম জয়। এরপর ১৯৯০ সালের নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’র কাছে হেরে যায় তারা।

এর পরের দীর্ঘ তিন দশক চাকসু নির্বাচনই হয়নি। বন্ধ ছিল ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম। নতুন প্রজন্মের ভোটে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে চাকসু। প্রথমবার ভোট দেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারিনি; কিন্তু চাকসুতে দিয়েছি—এটাই আমাদের গণতান্ত্রিক অভিজ্ঞতার শুরু।

গতকাল পাঁচটি অনুষদ ভবনে ১৫টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৭০০টি বুথে শিক্ষার্থীরা ভোট দেন। প্রত্যেক ভোটার একসঙ্গে ৪০টি ভোট দেন—চাকসুর ২৬টি পদ ও ১৪টি হল সংসদের জন্য। ভোটার ছিলেন ২৭ হাজার ৫১৬ জন। শুরুতে নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোট পড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। তবে ভোরে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার সময় বলা হয়, ভোট পড়েছে ৬৫ শতাংশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনে কেউ পরাজিত হননি, সবাই বিজয়ী হয়েছেন: চাকসুর নতুন ভিপি
  • ৪৪ বছর পর চাকসুর নেতৃত্বে ফিরল ছাত্রশিবির
  • ইয়াংওয়ান করপোরেশন পেল ডব্লিউসিডি ভিশনারি অ্যাওয়ার্ডস
  • ইলুমিনাতি স্যাটানিজম বা শয়তানবাদ সম্পর্কে কতটুকু জানেন?