বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক হলেন ড. নবী
Published: 10th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক থেকে নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) হিসেবে পদোন্নতি পেলেন ড. মো. গোলজারে নবী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষে ১৯৯৪ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে গবেষণা বিভাগে যোগদান করেন। আজ বৃহস্পতিবার তার পদোন্নতি সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ড. নবী অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ছাড়াও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিষয়ে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া মালয়েশিয়ার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া পার্লিস থেকে ইসলামী ব্যাংকিং বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি (ফাইন্যান্স) ডিগ্রি লাভ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদানের আগে তিনি আইএফআইসি ব্যাংকে প্রবেশনারী অফিসার ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জেনারেল সাইডে কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। গোলজারে নবী গবেষণা বিভাগ ছাড়াও মনিটারি পলিশি বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমি এবং চিফ ইকোনমিকস ইউনিটে কাজ করেছেন। নিয়মিত কাজের পাশাপাশি তিনি মূলধন বাজার, ইসলামী ব্যাংকিং, সুকুক, রেমিট্যান্স, ক্ষুদ্রঋণ, সঞ্চয়পত্র, কৃষিঋণ, ক্ষুদ্রঋণে মানিলন্ডারিং ঝুঁকি ও অন্যান্য বিষয়ের ওপর ১১টি সমীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কর্মকর্তা জিডিপি-ফাইন্যান্স সম্পর্ক, মুদ্রানীতি, ব্যাংক পারফরমেন্স, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, মোবাইল ব্যাংকিং, সবুজ অর্থায়ন, ক্ষুদ্রঋণ, ইসলামী ব্যাংকিংসহ বিভিন্ন বিষয়ের ওপর দেশি–বিদেশি জার্নালে ৩৫টির বেশি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিআইবিএম, ডেফোডিল, ব্রাকসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত সেমিনারে অর্থনীতি ও ফাইন্যান্স বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ফরিদপুর জেলার ভাংগা উপজেলার পুখুরিয়া গ্রামে তার জন্ম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
১৮ মাসে এসেছেন নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত ও সহিংসতার কারণে গত ১৮ মাসে নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন। গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি আরও বলেছে, ২০১৭ সালের পর বাংলাদেশে সর্বোচ্চসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি।
ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে গত জুন পর্যন্ত কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরগুলোয় এসব রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে জুন পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছেন ১ লাখ ২১ হাজার। আর অন্যরা নিবন্ধন ছাড়াই আশ্রয়শিবিরগুলোতে বসবাস করছেন। নতুন করে আসা এসব রোহিঙ্গার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউএনএইচসিআরের সদর দপ্তরে সংস্থাটির মুখপাত্র বাবর বালুচ সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের নিশানা করে সহিংসতা ও তাদের ওপর নিপীড়ন চলছে। এ ছাড়া মিয়ানমারজুড়ে চলছে সশস্ত্র সংঘাত। এতে বাধ্য হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সীমান্ত পেরিয়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
বাবর বালুচ বলেন, ‘২০১৭ সালের পর সবচেয়ে বেশিসংখ্যক রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা এটি। সেই বছর প্রাণঘাতী সহিংসতার মুখে ৭ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গা রাখাইনে তাঁদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন।’
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আগে থেকেই বাংলাদেশে আছেন। বেশির ভাগই ২০১৭ সালে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তাঁদের সঙ্গে নতুন করে আরও দেড় লাখ রোহিঙ্গা যুক্ত হলেন।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র। মাত্র ২৪ বর্গকিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন জানিয়ে বাবর বালুচ বলেন, এসব আশ্রয়শিবির বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার একটি হয়ে উঠেছে।
তহবিল–সংকটে ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারাবাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য তহবিলের তীব্র সংকট চলছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর। সংস্থাটি জানিয়েছে, প্রয়োজনীয় তহবিল পাওয়া না গেলে এসব রোহিঙ্গাকে খাবারের মতো জরুরি সহায়তা প্রদান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ২৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারের তহবিলের জন্য আবেদন জানালেও এর মাত্র ৩৫ শতাংশ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর।
রোহিঙ্গাদের সহায়তার ক্ষেত্রে তহবিলের এ ঘাটতি অনেক বেশি উল্লেখ করে বাবর বালুচ বলেন, ‘আমাদের যা প্রয়োজন আর যা পেয়েছি সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এ ব্যবধান অনেক বেশি। এ তহবিল–ঘাটতি রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনের ওপর বড় প্রভাব ফেলবে। কারণ, দৈনিক ভিত্তিতে খাবার ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে এসব রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী পুরোপুরি মানবিক ত্রাণসহায়তার ওপর নির্ভরশীল।’
ইউএনএইচসিআর বলছে, প্রয়োজনীয় তহবিল না পেলে আগামী সেপ্টেম্বের থেকে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত ও ডিসেম্বরের মধ্যে তাঁদের যে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধ হয়ে যাবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পশ্চিমা দেশের সরকারগুলো তহবিল বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে বড় সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়া ও চীনের দিক থেকে হুমকি ক্রমেই বাড়ছে—এমন উদ্বেগ থেকে প্রধান দাতা এসব দেশ ত্রাণসহায়তার বদলে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক ত্রাণসহায়তা কার্যক্রমে।
বাংলাদেশে আগে থেকে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা তহবিল–সংকটে ঝুঁকির মুখে ছিলেন। এর মধ্য নতুন করে দেড় লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় ত্রাণসহায়তার ক্ষেত্রে সংকট আরও বাড়বে বলে জানান বাবর বালুচ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই তহবিলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আরও লাখো রোহিঙ্গা আশ্রয় নেওয়ায় নতুন করে আসা রোহিঙ্গা ও আগে থাকা অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের দৈনন্দিন চাহিদা অপূর্ণ থেকে যাবে। এখন নতুন করে অতিরিক্ত তহবিল যদি পাওয়া না যায়, তাহলে খাবার ও সব রোহিঙ্গার জরুরি ত্রাণসহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।