খেলার মাঠগুলো ব্যবহার উপযোগী করুন
Published: 11th, July 2025 GMT
রাজধানী ঢাকা দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এর অন্যতম একটি কারণ, এ শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, পার্ক ও অন্য জনপরিসর নেই। মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকার খেলার মাঠগুলোর চিত্র খুবই হতাশাজনক। যেখানে শিশু-কিশোরদের নির্মল বিনোদন, বয়স্কদের হাঁটার পথ এবং সুস্থ সামাজিক পরিবেশ গড়ে ওঠার কথা, সেখানে অনেক মাঠই পরিণত হয়েছে মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ও প্রভাবশালীদের অবৈধ ব্যবসার কেন্দ্রে। এমন পরিস্থিতি থেকে মাঠগুলোকে রক্ষা করতেই হবে।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, টাউন হল মাঠ, সলিমুল্লাহ রোড, তাজমহল রোড, জাকির হোসেন রোড এবং লালমাটিয়ার মাঠগুলো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি মোহাম্মদপুরের টাউন হলের শহীদ পার্ক খেলার মাঠের। মাঠের প্রধান প্রবেশপথগুলো অস্থায়ী চা-সিগারেট আর আসবাবের দোকানের দখলে। ভেতরে মাদকসেবীদের অবাধ আনাগোনা, খোলা জায়গায় মূত্রত্যাগের ফলে দুর্গন্ধে হাঁটার অনুপযোগী পরিবেশ। স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির তত্ত্বাবধানেই চলছে অবৈধ দোকানপাট ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নামে চলে ভাড়া দেওয়ার ব্যবসা। ফলে সাধারণ মানুষ তাঁদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সলিমুল্লাহ রোডের মাঠে নিয়মিত বসে অস্থায়ী বাজার, যেখানে প্রতি চার হাত জায়গার জন্য হকারদের ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। তবে এই টাকা কারা নেয়, তা এক রহস্য। তাজমহল রোডের মাঠে সিটি করপোরেশন কর্তৃক উন্নয়নকাজ চললেও তদারকির অভাবে মাদকাসক্তদের আনাগোনা কমছে না। একইভাবে শেরশাহ সুরি রোড ঈদগাহ মাঠ এবং জাকির হোসেন রোডের মাঠেরও কোনো তদারকি নেই।
তবে ইকবাল রোডের উদয়াচল পার্ক ও খেলার মাঠ স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে পেয়েছে। অন্যদিকে ইকবাল রোড পার্ক অ্যান্ড ফিল্ড একটি স্থানীয় ক্লাব কমিটির তত্ত্বাবধানে নিজস্ব অর্থায়নে চলছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। তাদের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে, সঠিক উদ্যোগ নিলে মাঠগুলোকে রক্ষা করা সম্ভব। লালমাটিয়া ডি ব্লকের মাঠটির অবস্থা উদ্বেগজনক। তদারকির অভাবে মাঠের বিভিন্ন স্থাপনার লোহালক্কড়, সিসিটিভি ক্যামেরা, এমনকি শিশুদের খেলনাও চুরি হয়ে গেছে। বেড়েছে মাদকসেবী ও ছিনতাইকারীদের আনাগোনা।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইফতেখার হাসান স্বীকার করেছেন যে মাদকসংশ্লিষ্টতার বিষয়টি পুরোনো সমস্যা এবং তাঁরা সীমিত জনবল দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ফারজানা খানম রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের বিষয়টি স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আমরা আশা করব, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ মাঠগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। মাঠের ভেতরে বা সামনে কোনো ধরনের বাজার বা মার্কেট বসানোর সুযোগ নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করেই মাঠগুলোকে ব্যবহার উপযোগী ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদপ র ম দকস
এছাড়াও পড়ুন:
মাঠ আছে, খেলার পরিবেশ নেই
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও লালমাটিয়া এলাকায় বেশ কিছু খেলার মাঠ আছে। যেখানে গড়ে ওঠার কথা ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা, বয়স্ক ব্যক্তিদের হাঁটার পথ আর মানুষের বিনোদনের কেন্দ্র। সেসব আছে ঠিকই। কিন্তু তদারকির অভাবে অনেক মাঠে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা ও অস্থায়ী চা-সিগারেটের দোকান।
সম্প্রতি মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোড, টাউন হল মাঠ, সলিমুল্লাহ রোড, তাজমহল রোড, জাকির হোসেন রোড এবং লালমাটিয়ার মাঠগুলো ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেহাল চিত্র টাউন হলের শহীদ পার্ক খেলার মাঠের।
মাঠের প্রধান দুই প্রবেশপথ দখল করে নিয়েছে চা-সিগারেটের অস্থায়ী দোকান। অন্য আরেকটি প্রবেশপথ ঘিরে আসবাবের দোকান। সেদিকে সরু একটি রাস্তা দিয়ে মাঠে ঢোকা যায়। মাঠে নিয়মিত বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। মাঠের এক কোণে করা হয়েছে মূত্রত্যাগের খোলা ব্যবস্থা। দুর্গন্ধে হাঁটার উপযোগী পরিবেশ নেই এখানে। তাই আশপাশের লোকজন খুব একটা আসতে চান না। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, ‘মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক ক্রীড়াচক্র’ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে চলছে মাঠের তদারকি। লোহার বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা মাঠের এক কোণে শিশুদের খেলার জন্য কিছু রাইডের ব্যবস্থা আছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাঠটির দখল মূলত স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির হাতে। তাঁরাই বর্তমানে মাঠের দেখভাল করছেন। সোহরাব হোসেন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা জানালেন, ৫ আগস্টের আগে এই মাঠে উত্তর সিটি করপোরেশনের কিছুটা তদারকি ছিল। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় বিভিন্ন প্রভাবশালী মাঠের দখল নিয়েছেন। চা-সিগারেটের দোকানও তাঁদের তত্ত্বাবধানে চলে। ভাড়ায় চলানো হয় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। ফলে মাঠের অধিকার হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
পাশে সলিমুল্লাহ রোডের মাঠটিতে প্রতি রোববার অস্থায়ী বাজার বসে। সপ্তাহের বাকি ছয় দিন এই মাঠ উন্মুক্ত থাকে। তবে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে তেমন কোনো উন্নয়নকাজ এই মাঠে দেখা যায়নি। নেই কোনো তত্ত্বাবধান। রোববারের অস্থায়ী বাজারে স্টল বসাতে প্রতি চার হাত জায়গার জন্য হকারদের চাঁদা গুনতে হয় ৫০০ টাকা করে। তবে এই টাকা কারা নেন, সে বিষয়ে ব্যবসায়ীরা কিছু বলতে চাননি।
তাজমহল রোডের মাঠটিতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজনের অনুরোধে সিটি করপোরেশন কর্তৃক কিছু উন্নয়নকাজ করা হচ্ছে। উন্নয়নকাজে নিযুক্ত সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, প্রায় ৬২ লাখ টাকার উন্নয়নকাজ চলছে। এসবের মধ্যে রয়েছে মাঠের অভ্যন্তরে বাউন্ডারি ফ্রেম ফেন্সিং নির্মাণ, বৃক্ষরোপণ, ওয়াশরুম এবং ফটক মেরামত। তবে এই মাঠেও তেমন কোনো তদারকি না থাকায় নিয়মিত মাদকাসক্তদের আনাগোনা থাকে।
মোহাম্মদপুর শহীদ পার্ক খেলার মাঠ