বাবা আমাকে মূল্যহীন ভাবতেন, প্রচন্ড মারধর করতেন: রবি
Published: 23rd, July 2025 GMT
ভারতীয় সিনেমার দাপুটে অভিনেতা, রাজনীতিবিদ রবি কিষাণ। তেত্রিশ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য দর্শকপ্রিয়, ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। যশ-খ্যাতি যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি অঢেল অর্থেরও মালিক হয়েছেন। কিন্তু আজকের এই অবস্থান সহজে তৈরি হয়নি। লড়াই করেছেন পরিবার ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতার সঙ্গে। কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে রবি জানান, তার বাবা শ্যাম নারায়ণ শুক্লা তাকে প্রতিদিনই মারতেন।
রাজ শামানির পডকাস্টে অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন রবি কিষাণ। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি আমার বাবার কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলাম, আমি ভালোবাসার যোগ্য। বাবা আমাকে মূল্যহীন মনে করতেন। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম আমি তা নই। আমার বাবা পুরোহিত ছিলেন। আমি একবার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম—আপনি এত পূজা করেন কেন? আপনার গায়ে কোনো কাপড় নেই, পরনে ছেঁড়া কাপড়, সাইকেলটাও ভাঙাচোরা। তারপর রেগে গিয়ে আমাকে খুব মেরেছিলেন।”
মায়ের শাড়ি পরে নাটকে অভিনয় করতেন রবি। এতে ক্ষুব্ধ হতেন তার বাবা। এ তথ্য জানিয়ে রবি কিষাণ বলেন, “আমি গ্রামে নাটকে অভিনয় করতাম। দেবী সীতার ভূমিকায় অভিনয় করার কারণে প্রায়শই মায়ের শাড়ি পরতাম। এতে বাবা ক্ষুব্ধ হতেন, রাগে পাগল হয়ে যেতেন। বাবা আমাকে বলতেন, ‘তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, তুমি কি নাচনি হতে চাও?”
একদিন রবি কিষাণকে তার বাবা প্রচন্ড মারধর করেছিলেন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “বাবা একদিন আমাকে এত মারধর করেন যে, আমাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে হয়। সেদিন আমার মা আমাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেছিলেন, ‘যাও, না হলে আজ ও তোমাকে মেরে ফেলবে’।”
ভাগ্য পরীক্ষার জন্য মুম্বাই পাড়ি জমান রবি কিষাণ। তা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমি ভাগ্য পরীক্ষা করতে মুম্বাই এসেছিলাম। ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া যেত। কিন্তু প্রযোজকরা টাকা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। পারিশ্রমিক চাইলে বলতেন, ‘স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দেব। ১০ বছর বলিউডে স্ট্রাগল করার পর ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখি।”
রবি কিষাণ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পর বাবা-মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসার কথা স্মরণ করে বলেন, “আমি যখন প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে শুরু করি, তখন আমার বাবা আমাকে সম্মান করতে শুরু করেন। তখন আমি তাদের আমার কাছে আসার জন্য প্লেনের টিকিট দিই। আমি তাদের সুন্দর জামাকাপড়, একটি গাড়ি এবং একটি বাংলো কিনে দিয়েছি।”
রবি কিষাণের কাছে কাঁদতে থাকেন তার বাবা। সেই ঘটনা বর্ণনা করে রবি কিষাণ বলেন, “বাবা কাঁদতে কাঁদেতে বলেন, ‘আমি দুঃখিত। আমি সবসময় তোমাকে ভুল বুঝতাম।’ আমি তার পায়ে পড়ে বললাম, ‘প্লিজ, এটা করো না। আমি তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরকে দেখেছি।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে এত মেরেছ কেন? বাবা জানান, ভুল কিছু করে ফেলি সেই ভয়ে বাবা আমাকে মারধর করতেন।”
১৯৬৯ সালের ১৭ জুলাই মহারাষ্ট্রের বম্বেতে জন্মগ্রহণ করেন রবি কৃষাণ। অভিনয় করেছেন হিন্দি, ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু, গুজরাটিসহ ভারতের বিভিন্ন ভাষার সিনেমায়। অংশ নিয়েছেন ‘বিগ বস’, ‘বিগ ব্রাদার’সহ বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে। অভিনয় ছাড়াও রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। বর্তমানে ভারতের সংসদ সদস্য।
১৯৯২ সালে হিন্দি ভাষার ‘পীতাম্বর’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র অভিষেক ঘটে রবি কিষাণের। এরপর রবি কৃষাণকে দেখা গেছে—‘তেরে নাম’, ‘আন: মেন অ্যাট ওয়ার্ক’, ‘হেরা ফেরি’, ‘ফির হেরা ফিরি’, ‘কিক টু’, ‘বাটলা হাউজ’, ‘মিশন রানীগঞ্জ’, ‘১৯৭১’, ‘রাবণ’, ‘সন অব সরদার টু’ প্রভৃতি।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
জুলাই সনদের দাবিতে ঢাকার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছেন জুলাই যোদ্ধারা।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে শাহবাগ মোড়ে শুরু হওয়া অবস্থান কর্মসূচিতে ধাপে ধাপে জড়ো হয়েছেন শতাধিক আন্দোলনকারী। ফলে শাহবাগ মোড়ের উভয়মুখেই যান চলাচল বন্ধ রয়েছে, আশপাশের রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
জুলাই যোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের সমন্বয়ক মাজহারুল ইসলাম আপন। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ও শাহবাগ থানার মুখে, এমনকি আশপাশের মোড়গুলোতেও আন্দোলনকারীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে।
রেজমিনে দেখা যায়, শাহবাগ মোড়ের একাংশ জুড়ে ব্যানার, পোস্টার ও জাতীয় পতাকা নিয়ে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। পাশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে।
আন্দোলনকারীরা ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি প্রস্তাবিত ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছেন, যেখানে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থনে নিহতদের ‘জুলাই শহীদ (জাতীয় বীর)’ এবং আহতদের ‘জুলাই যোদ্ধা (বীর)’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে তাদের জন্য আজীবন সম্মান, চিকিৎসা, শিক্ষা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান এবং সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করার দাবি রয়েছে।
এর দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে, শহীদ পরিবার ও আহতদের কল্যাণ রাষ্ট্রের ‘অবিচ্ছেদ্য কর্তব্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এদের প্রতি অবহেলা বা অধিকার হরণকে রাষ্ট্রদ্রোহ বা বিশেষ অপরাধ হিসেবে গণ্য করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও তোলা হয়েছে।
জুলাই যোদ্ধাদের ভাষ্য, এখনো জুলাই সনদ না হওয়ায় আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা বাধ্য হয়েই আন্দোলনে নেমেছেন। বারবার এই দাবি জানানো হলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি।
তারা বলছেন, জুলাই সনদ আমাদের দাবি নয়, এটি আমাদের অধিকার। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। জুলাই সনদ নিয়ে আশ্বাস পূরণ না হলে শাহবাগে অস্থায়ী মঞ্চ তেরি করে অবস্থান করবেন বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।
ঢাকা/রায়হান/ইভা