ভারতীয় সিনেমার দাপুটে অভিনেতা, রাজনীতিবিদ রবি কিষাণ। তেত্রিশ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য দর্শকপ্রিয়, ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন। যশ-খ্যাতি যেমন কুড়িয়েছেন, তেমনি অঢেল অর্থেরও মালিক হয়েছেন। কিন্তু আজকের এই অবস্থান সহজে তৈরি হয়নি। লড়াই করেছেন পরিবার ও ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বাস্তবতার সঙ্গে। কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে রবি জানান, তার বাবা শ্যাম নারায়ণ শুক্লা তাকে প্রতিদিনই মারতেন।

রাজ শামানির পডকাস্টে অতিথি হিসেবে হাজির হয়েছিলেন রবি কিষাণ। এ আলাপচারিতায় তিনি বলেন, “আমি আমার বাবার কাছে প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলাম, আমি ভালোবাসার যোগ্য। বাবা আমাকে মূল্যহীন মনে করতেন। আমি প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম আমি তা নই। আমার বাবা পুরোহিত ছিলেন। আমি একবার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম—আপনি এত পূজা করেন কেন? আপনার গায়ে কোনো কাপড় নেই, পরনে ছেঁড়া কাপড়, সাইকেলটাও ভাঙাচোরা। তারপর রেগে গিয়ে আমাকে খুব মেরেছিলেন।”

মায়ের শাড়ি পরে নাটকে অভিনয় করতেন রবি। এতে ক্ষুব্ধ হতেন তার বাবা। এ তথ্য জানিয়ে রবি কিষাণ বলেন, “আমি গ্রামে নাটকে অভিনয় করতাম। দেবী সীতার ভূমিকায় অভিনয় করার কারণে প্রায়শই মায়ের শাড়ি পরতাম। এতে বাবা ক্ষুব্ধ হতেন, রাগে পাগল হয়ে যেতেন। বাবা আমাকে বলতেন, ‘তুমি কি পাগল হয়ে গেছো, তুমি কি নাচনি হতে চাও?”

একদিন রবি কিষাণকে তার বাবা প্রচন্ড মারধর করেছিলেন। সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “বাবা একদিন আমাকে এত মারধর করেন যে, আমাকে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে হয়। সেদিন আমার মা আমাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বলেছিলেন, ‘যাও, না হলে আজ ও তোমাকে মেরে ফেলবে’।”

ভাগ্য পরীক্ষার জন্য মুম্বাই পাড়ি জমান রবি কিষাণ। তা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমি ভাগ্য পরীক্ষা করতে মুম্বাই এসেছিলাম। ছোট ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া যেত। কিন্তু প্রযোজকরা টাকা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। পারিশ্রমিক চাইলে বলতেন, ‘স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দেব। ১০ বছর বলিউডে স্ট্রাগল করার পর ভোজপুরি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখি।”

রবি কিষাণ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পর বাবা-মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসার কথা স্মরণ করে বলেন, “আমি যখন প্রচুর অর্থ উপার্জন করতে শুরু করি, তখন আমার বাবা আমাকে সম্মান করতে শুরু করেন। তখন আমি তাদের আমার কাছে আসার জন্য প্লেনের টিকিট দিই। আমি তাদের সুন্দর জামাকাপড়, একটি গাড়ি এবং একটি বাংলো কিনে দিয়েছি।”

রবি কিষাণের কাছে কাঁদতে থাকেন তার বাবা। সেই ঘটনা বর্ণনা করে রবি কিষাণ বলেন, “বাবা কাঁদতে কাঁদেতে বলেন, ‘আমি দুঃখিত। আমি সবসময় তোমাকে ভুল বুঝতাম।’ আমি তার পায়ে পড়ে বললাম, ‘প্লিজ, এটা করো না। আমি তোমাদের মধ্যে ঈশ্বরকে দেখেছি।’ আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে এত মেরেছ কেন? বাবা জানান, ভুল কিছু করে ফেলি সেই ভয়ে বাবা আমাকে মারধর করতেন।” 

১৯৬৯ সালের ১৭ জুলাই মহারাষ্ট্রের বম্বেতে জন্মগ্রহণ করেন রবি কৃষাণ। অভিনয় করেছেন হিন্দি,  ভোজপুরি, তামিল, তেলেগু, গুজরাটিসহ ভারতের বিভিন্ন ভাষার সিনেমায়। অংশ নিয়েছেন ‘বিগ বস’, ‘বিগ ব্রাদার’সহ বিভিন্ন রিয়েলিটি শোতে। অভিনয় ছাড়াও রাজনীতিতে সক্রিয় তিনি। বর্তমানে ভারতের সংসদ সদস্য।  

১৯৯২ সালে হিন্দি ভাষার ‘পীতাম্বর’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্র অভিষেক ঘটে রবি কিষাণের। এরপর রবি কৃষাণকে দেখা গেছে—‘তেরে নাম’, ‘আন: মেন অ্যাট ওয়ার্ক’, ‘হেরা ফেরি’, ‘ফির হেরা ফিরি’, ‘কিক টু’, ‘বাটলা হাউজ’, ‘মিশন রানীগঞ্জ’, ‘১৯৭১’, ‘রাবণ’, ‘সন অব সরদার টু’ প্রভৃতি।

ঢাকা/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে

অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।

সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।

শ্রমবাজারে দুর্বলতা

পাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।

পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।

মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থান

মূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।

ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।

রাজনৈতিক টানাপোড়েন

এ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।

পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’

বাজারের প্রতিক্রিয়া

সুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নীতিসুদ কী

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।

কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাব

বিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।

নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।

সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ