ম্যানচেস্টারে বেড়ে ওঠা মার্কাস রাশফোর্ডের। সেখানকার ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সমর্থক তিনি শৈশব থেকেই। প্রতিভার বলে ক্লাবটির একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন ৭ বছর বয়সে। বাকিটা সবার জানা। একসময় এই ইউনাইটেডই ছিল রাশফোর্ডের ঘরবাড়ি। কিন্তু সেই রাশফোর্ডই গতকাল বললেন, বার্সেলোনাকে নিজের ‘ঘর’ মনে হচ্ছে তাঁর।
আরও পড়ুনরাশফোর্ডকে কেন ‘লুকিয়ে রেখেছে’ বার্সেলোনা১৪ ঘণ্টা আগেনিশ্চয়ই আন্দাজ করে নিয়েছেন, রাশফোর্ড বার্সায় যোগ দিয়েছেন। ইংল্যান্ড ও স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলো আগেই অবশ্য এ খবর জানিয়েছিল। গতকাল সেটারই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন রাশফোর্ড। এক মৌসুমের জন্য ধারে যোগ দিয়েছেন কাতালান ক্লাবটিতে। পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট করতে পারলে থাকছে ক্যাম্প ন্যুতে স্থায়ী হওয়ার সুযোগও। বার্সার জন্য আগামী বছর তাঁকে ৩ কোটি ৫০ লাখ ইউরোয় স্থায়ীভাবে কিনে নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে চুক্তিপত্রে।
ইংল্যান্ডের ২৭ বছর বয়সী এ স্ট্রাইকারকে ধারে দলভুক্ত করার বিষয়ে বার্ষার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মার্কাস রাশফোর্ডের ধারচুক্তির বিষয়ে একমত হয়েছে বার্সেলোনা ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড।’
১৯৮৬ সালে গ্যারি লিনেকারের পর প্রথম ইংলিশ খেলোয়াড় হিসেবে বার্সায় যোগ দিলেন রাশফোর্ড। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইউনাইটেডে রাশফোর্ড সপ্তাহে যে বেতন (৩ লাখ ২৫ হাজার পাউন্ড) পান, তার ৭৫ শতাংশ অর্থ পারিশ্রমিক হিসেবে দেবে বার্সা। বেতনের বাকিটা ছাড় দিয়েছেন রাশফোর্ড।
আরও পড়ুনমেসির পছন্দের গোলের শিল্পকর্ম নিলামে ২২ কোটি টাকায় বিক্রি১৫ ঘণ্টা আগেগত বছর ডিসেম্বরের পর থেকে ইউনাইটেডে কোচ রুবেন আমোরিমের দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েন রাশফোর্ড। গত মৌসুমের অর্ধেক সময় ধারে খেলেছেন অ্যাস্টন ভিলায়। বিবিসি জানিয়েছে, যে পাঁচজন খেলোয়াড় এ মাসে ইউনাইটেডকে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন, রাশফোর্ড তাঁদের একজন। বার্সাকে নতুন ঠিকানা বানানোর পর ক্লাবটির ইউটিউব চ্যানেলে রাশফোর্ড বলেছেন, ‘এটা এমন একটি ক্লাব যেখানে স্বপ্নপূরণ হয়। কারণ, তারা বড় ট্রফি জেতে। মনে হচ্ছে আমি ঘরেই আছি। এটা বেছে নেওয়ার একটা বড় কারণ হলো জায়গাটা পরিবারের মতোই এবং খেলোয়াড়দের দক্ষতা দেখানোর জন্যও এটা ভালো জায়গা.
বার্সার ১৪ নম্বর জার্সি পরে খেলবেন রাশফোর্ড। গত মঙ্গলবার বার্সায় নতুন সতীর্থদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অনুশীলন করেন। রাশফোর্ডকে বার্সার কাছে তুলে দিয়ে আগামী ১২ মাসে পারিশ্রমিকের খাতে ১ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড বাঁচাতে পারবে ইউনাইটেড।
ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো প্রিমিয়ার লিগ ছেড়ে যাওয়ার আগে ইউনাইটেডের হয়ে ৪২৬ ম্যাচে ১৩৮ গোল করেছেন রাশফোর্ড। লিগ জিততে না পারলেও পাঁচটি শিরোপা জিতেছেন ক্লাবটির হয়ে।
গত বছর ১৫ ডিসেম্বর ম্যানচেস্টার ডার্বিতে রাশফোর্ডকে স্কোয়াড থেকে বাদ দেন ইউনাইটেড কোচ আমোরিম। তখন থেকে রাশফোর্ড আর ইউনাইটেডের হয়ে মাঠে নামতে পারেননি। এর কারণ হিসেবে তখন আমোরিম বলেছিলেন, প্রয়োজন হলে তিনি নিজের ৬৩ বছর বয়সী গোলকিপিং কোচকে মাঠে নামাবেন, তবু ‘যে প্রতিদিন নিজের শতভাগ দেয় না’ তাঁকে খেলাবেন না। এরপর গত জানুয়ারিতে ধারে ভিলায় যোগ দিয়ে ১৭ ম্যাচ খেলেন রাশফোর্ড।
দারুণ ৩০ গোলের মৌসুম শেষ করে ২০২৩ সালে ইউনাইটেডের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেছিলেন রাশফোর্ড। কিন্তু এর পর থেকেই তাঁর ফর্ম পড়ে যায়। ২০২৩–২৪ মৌসুমে কোচ এরিক টেন হাগের অধীন ৪৩ ম্যাচে মাত্র ৮ গোল করেন, আর শৃঙ্খলাভাঙার জন্য শাস্তি পেয়েছেন তিনবার।
তবে বার্সায় যোগ দিয়ে ইউনাইটেডের প্রতি কোনো ক্ষোভ প্রকাশ করেননি রাশফোর্ড, ‘আমার খারাপ কিছুই বলার নেই, কারণ এটা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড) শুধু আমার ক্যারিয়ারই নয়, জীবনেরও অংশ। তাদের জন্য শুভকামনা, ভবিষ্যতে তারা যেন সফল হতে পারে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূরে থাকা মহাকাশযানের ক্যামেরা যেভাবে মেরামত করেছে নাসা
২০২৩ সালে বৃহস্পতি গ্রহকে প্রদক্ষিণ করার সময় বিকিরণের কারণে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয় নাসার জুনো মহাকাশযান। সে সময় বিভিন্ন যন্ত্রাংশের পাশাপাশি মহাকাশযানটিতে থাকা ‘জুনোক্যাম’ ক্যামেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে আইও চাঁদের নিম্নমানের ছবি পাঠাতে থাকে ক্যামেরাটি। সমস্যা সমাধানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবী থেকেই ৩৭ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত ক্যামেরাটি মেরামত করে নাসা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত এনএসআরইসি সম্মেলনে পৃথিবী থেকে ক্যামেরাটির মেরামতপদ্ধতি প্রকাশ করেছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটি।
নাসার তথ্যমতে, অ্যানিলিং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে জুনোক্যাম ক্যামেরা মেরামত করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ক্যামেরাটিকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উত্তপ্ত করে মাইক্রোস্কোপিক ত্রুটি মেরামত করা হয়। মেরামতের পরে বৃহস্পতির চাঁদের উন্নতমানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছে ক্যামেরাটি। ফলে বৃহস্পতির চাঁদে সালফার ডাই–অক্সাইড, তুষারপাত ও আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমের জুনোক্যাম ইমেজিং ইঞ্জিনিয়ার জ্যাকব শ্যাফনার জানান, ‘অ্যানিলিং প্রক্রিয়ায় সিলিকনের মতো উপাদানকে মাইক্রোস্কোপিক স্তরে পরিবর্তন করা যায়। আমরা জানতাম না যে এ প্রক্রিয়ায় ক্ষতি মেরামত হতে পারে। আমরা একটি হিটারের মাধ্যমে জুনোক্যাম ক্যামেরার তাপমাত্রা ৭৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলাম। এই তাপমাত্রা জুনোক্যামের জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ।’
অ্যানিলিং একটি তাপীয় প্রক্রিয়া যা মূলত ধাতুবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয়। কোনো পদার্থের ভৌত ও কখনো কখনো রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করার জন্য এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। তবে পুরো সমস্যা সম্পর্কে জানা এবং পৃথিবী থেকে ৩৭ কোটি মাইল দূর থেকে ক্যামেরা মেরামত করা চ্যালেঞ্জিং ছিল।
ম্যালিন স্পেস সায়েন্স সিস্টেমের জুনোক্যামের যন্ত্র বিভাগের প্রধান মাইকেল র্যাভিন জানান, ‘বৃহস্পতি গ্রহে ৫৫তম বার প্রদক্ষিণের পরেই বিভিন্ন ছবিতে রেখা দেখা যায়। আমরা ছবির মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াকরণের চেষ্টা করলেও কিছুই কাজ করেনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আইও চাঁদের মুখোমুখি হবে দেখে আমরা অ্যানিলিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করি।’
সূত্র: এনডিটিভি