নেত্রকোনায় শিয়ালের কামড়ে নারী-শিশুসহ ১৭ জন আহত
Published: 24th, July 2025 GMT
নেত্রকোনার মদনে শিয়ালের কামড়ে নারী-শিশুসহ অন্তত ১৭ জন আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে উপজেলার চানগাঁও গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিরা সবাই চানগাঁও গ্রামের বাসিন্দা।
আহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিফা আক্তার (২৯), সালমা আক্তার (২৪), তন্না আক্তার (১০), মোরসালিন (১৭), জেসমিন আক্তার (৪৫), এরশাদ মিয়া (৩৫), শামীম মিয়া (৩৮), আঙ্গুর মিয়া (৫০), তাইজুল ইসলাম (৬), আসব আলী (৭৫), মারিয়া আক্তার (৩), লিজা আক্তার (৯), আবির মিয়া (২) ও কাইয়ুম মিয়া (৪০) মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা রাতের খাবার খেয়ে গরমের কারণে ঘরের বাইরে বসে গল্প করছিলেন। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি শিয়াল আক্রমণ করে তাঁদের হাত-পায়ে কামড় দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এভাবে প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যে শিশুসহ অন্তত ১৭ জনকে কামড় দেয় শিয়ালটি। এ ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে শিয়ালের আতঙ্ক দেখা দেয়।
আহত কাইয়ুম মিয়া বলেন, ‘আমি প্রতিদিনের মতো রাতের খাওয়া শেষে ঘরের বারান্দায় বসেছিলাম। হঠাৎ একটা শিয়াল দৌড়ে এসে আমাকে কামড়ে দেয়। পরে আমাদের বাড়ির আরও চারজনকে কামড় দিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যায়। এর পর থেকে আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি।’
মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আব্বাস আলী বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিয়ালের কামড়ে আহত রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। আহত ১৫ জনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে মদন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদ করিম সিদ্দিকী বলেন, শিয়াল সাধারণত দুটি কারণে আক্রমণ করে। প্রথমত কেউ প্রাণীগুলোকে আঘাত করলে সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণে যায়। আরেকটি হলো খাদ্যসংকট। এখন শিয়ালের খাবারের খুব অভাব। ক্ষুধার্ত হয়ে লোকালয়ে গিয়ে লোকজনের ওপর আক্রমণ করে। মনে হচ্ছে, ক্ষুধার্ত শিয়ালই আক্রমণ করেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে এবং আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা নিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক
চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।
সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।
গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।
গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।
ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।