গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পার হতে গেলেও এখনো জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়নি। রাজসাক্ষীর নামে অপরাধীদের ক্ষমা করা হবে শহীদদের প্রতি অবমাননার শামিল। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রণয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘৩৬ জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের সম্মানে স্মরণসভায়’ জুলাই শহীদদের স্বজনেরা এসব কথা বলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে ‘জুলাই-২৪ শহীদ পরিবার সোসাইটি’ ও ‘ন্যাশনাল ইয়ুথ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ’।

বেলা তিনটার পর কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপরই শহীদদের স্মরণে দোয়া এবং জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়।

স্মরণসভায় স্বাগত বক্তব্য দেন শহীদ আবু সাঈদের ভাই মো.

আবু হোসেন। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদদের আশা ছিল একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ দেখা। দেশ এখনো বৈষম্যহীন হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার শহীদদের রক্তের ওপর ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকাকালীন সরকারকে খুনিদের বিচার দৃশ্যমান করতে হবে। পাশাপাশি শহীদ পরিবার এবং আহতদের দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।

স্বাগত বক্তব্যের পর স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এ সময় শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন বলেন, সাবেক আইজিপিকে (পুলিশ মহাপরিদর্শক) রাজসাক্ষী হিসেবে দাঁড় করানো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে তাঁকে ক্ষমাও করে দেওয়া হবে। শহীদদের হত্যার জন্য দায়ীদের ক্ষমা করে দেওয়া মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, তাঁর সন্তান ইয়ামিনকে হত্যার জন্য দায়ী পুলিশ। আবার পুলিশকেই সেই হত্যার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

শহীদ মাহফুজের বাবা মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের হত্যার বিচার করা হচ্ছে না। বিচার না হওয়া পর্যন্ত দেশে কোনো নির্বাচন দেখতে চাই না।’ এ সময় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র দেওয়ার দাবি জানান তিনি। শহীদ সায়েমের মা শিউলি বেগম বলেন, এখনো তিনি সন্তান হত্যার বিচার পাননি। জুলাই সনদ নিয়ে কেন এখনো টালবাহানা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।

শহীদ মিরাজ হোসেনের বাবা মো. আবদুর রব বলেন, দ্রুত জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে হবে। না হলে শহীদ পরিবারের সদস্যরা মাথায় সাদা কাপড় বেঁধে রাজপথে আবারও জীবন দেবেন। শহীদদের হত্যাকারীদের আইনের আওতায় এনে সঠিক বিচার দাবি করেন শহীদ মো. রোহান আহমেদের ভাই রাহাত আহমেদ। শহীদ মাসুদ রানার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, যে শহীদদের নিয়ে এত আয়োজন, তাঁদের প্রাপ্য সম্মান এখনো দেওয়া হয়নি।

‘৩৬ জুলাই বিপ্লবের বীর শহীদদের সম্মানে স্মরণসভায়’ অংশ নেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র, আগারগাঁও ২৬ জুলাই

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হত য র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ