আইপিএলের কারণেই কি ভারতের বোলিংয়ে এই দশা
Published: 27th, July 2025 GMT
এ যেন অন্য এক যশপ্রীত বুমরা। ওভারের পর ওভার বোলিং করছেন, কিন্তু সবই যেন ধারহীন। ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে খেলা ভারতের অন্য তিন পেসারও নিষ্প্রভ। সে কারণেই প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড রান করেছে ৬৬৯।
বেন স্টোকসের দলের প্রথম ইনিংসের লিড ছিল ৩১১ রানের। চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত ২ উইকেটে ১৭৪ রান তোলার পরও এখনো পিছিয়ে ১৩৭ রানে।
এমন বোলিং পারফরম্যান্সের পর ভারতের পেস বোলিং লাইনআপ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দুই মাসব্যাপী আইপিএল খেলার পর চতুর্থ টেস্টে এসে ভারতীয় পেসাররা ক্লান্ত হয়ে গেছেন কি না, সেই আলোচনা হচ্ছে জোরেশোরে।
ম্যানচেস্টার টেস্টে ভারত তাদের পূর্ণশক্তির পেস আক্রমণ পায়নি। আকাশ দীপ ও নীতীশ কুমার রেড্ডি চোটের কারণে বাইরে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকজন ভারতীয় পেসার বিসিসিআইয়ের পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুমরা, সিরাজরাও অনেক ক্লান্ত। বুমরা প্রথম ইনিংসে ৩৩ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছেন ১১৫, উইকেট পেয়েছেন মাত্র দুটি। টেস্ট ক্যারিয়ারে বুমরা এবারই প্রথম কোনো ইনিংসে ১০০ বা এর চেয়ে বেশি রান দিয়েছেন।
সিরাজ তো ৩০ ওভারে রান দিয়েছেন ১৪০, তিনি উইকেট পেয়েছেন একটি।
আমি মনে করি, বুমরা সামনে হয়তো টেস্ট খেলবে না, এমনকি অবসরও নিতে পারে। মোহাম্মদ কাইফপেসারদের বাজে পারফরম্যান্সের জন্য আইপিএল দায়ী কি না—এমন একটি প্রশ্ন তৃতীয় দিন শেষে ভারতীয় বোলিং কোচ মরনে মরকেলের সামনে উঠেছিল। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘এটা কঠিন একটা পরীক্ষা। আমরা সাধারণত ২-৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলি। এবার অনেক দিন পর ৫ ম্যাচের একটি সিরিজ খেলতে হয়েছে। এটা কোনো অজুহাত নয়, কিন্তু আইপিএলের পরপর এত বড় সিরিজ খেলা একটা কারণ হতে পারে।’
আরও পড়ুন২০২৬ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিশ্চিত হলো কোন কোন দেশের১২ জুলাই ২০২৫মরকেল আরও বলেছেন, ‘বিশ্রাম ও বোলিংয়ের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখতে হবে। এ জন্য ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ৫-৬ জনের একটি পেসার ইউনিট গড়ে তোলা দরকার, যাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো যাবে। এখন আমাদের দলে অভিজ্ঞ পেসার বেশি নেই। সিরাজ আছে, বুমরাও কয়েকটা টেস্ট খেলেছে, আবেশ খান কিছু খেলেছে কিন্তু সেও চোটে। নতুন যারা আসছে, তারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে তৈরি করছে। কাজটা সহজ নয়, কিন্তু এই সময়টা পার করতে হবে, যাতে আগামী ৪-৫ টেস্টে তারা ফিট ও শক্তিশালী হতে পারে।’
ভারতের পেসার যশপ্রীত বুমরা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ধোনি কেন আইপিএল ছাড়তে পারছেন না: পেছনে হাজার কোটি টাকার খেলা
বয়স ৪৪, শরীরও আর আগের মতো চলছে না। তবু মহেন্দ্র সিং ধোনি আইপিএল ছাড়েননি। সর্বশেষ মৌসুমে খেলেছেন, শোনা যাচ্ছে, পরের মৌসুমেও খেলবেন। অথচ তাঁর মাঠের পারফরম্যান্স বলছে, সময় ফুরিয়েছে। তবু তিনি খেলে যাচ্ছেন কেন? ক্রিকেট ছাড়তে পারছেন না তাই? নাকি খ্যাতির মোহ? সত্যিটা এসবের চেয়েও বড়—ধোনি এখন শুধুই একজন ক্রিকেটার নন, তিনি একটি বিশাল অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেমের মূল স্তম্ভ, যাঁর বিদায় মানে অনেক কিছুর ধস।
চলুন দেখা যাক, কীভাবে ধোনির একটুখানি মাঠে থাকা বদলে দেয় বিশাল অঙ্কের হিসাব।২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ব্র্যান্ড ভ্যালু ২০২৫ আইপিএল ছিল চেন্নাই সুপার কিংসের (সিএসকে) জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজিটির ইতিহাসেই সবচেয়ে বাজে মৌসুম। পয়েন্ট তালিকায় একেবারে তলানিতে থেকে মৌসুম শেষ করেছে তারা। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো ব্যাপার, এর কোনো প্রভাবই পড়েনি সিএসকের ব্র্যান্ড ভ্যালুতে; বরং সামান্য বেড়েছে!
হুলিহ্যান লোকির ‘আইপিএল ব্র্যান্ড ভ্যালুয়েশন স্টাডি ২০২৫’ প্রতিবেদন বলছে, ২০২৫ সালে সিএসকের ব্র্যান্ড ভ্যালু বেড়ে হয়েছে ২৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা ২০২৪ সালে ছিল ২৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। যদিও আইপিএলের সবচেয়ে দামি ফ্র্যাঞ্চাইজির র্যাঙ্কিংয়ে চেন্নাই ১ নম্বর থেকে তিনে নেমে গেছে, কিন্তু সেটা পুরোপুরি মাঠের পারফরম্যান্সের কারণে নয়।
তুলনা করে দেখা যাক—রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি) প্রথমবার আইপিএল জেতায় তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৯০ লাখ ডলারে, উঠে এসেছে ১ নম্বরে। অথচ সিএসকে কিছু না করেই সেরা তিনে আছে শুধু একজনের জন্য—ঠিক ধরেছেন, এম এস ধোনি!
২০২৩ আইপিএলের একটি মুহূর্তই বলে দেয়, ধোনির উপস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের বিপক্ষে মাত্র ৩ বল খেলেছিলেন ধোনি, করেছিলেন ১২ রান। তাতেই ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ভিউয়ারশিপ পৌঁছায় ১ কোটি ৭০ লাখে, যা ছিল সে মৌসুমের সর্বোচ্চ। এমনকি টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচের ১ কোটি ৬০ লাখ ভিউয়ারকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল ধোনির সেই ৩ বল স্থায়ী ইনিংসটা!
টিএএম মিডিয়া রিসার্চ বলছে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পরও ধোনি দিনে গড়ে বিভিন্ন প্লাটফর্মে ১৪ ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম ধরে রেখেছেন। ২০২৪ সালে তিনি ৪২টি ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন করেছেন, যা অমিতাভ বচ্চন (৪১) ও শাহরুখ খানের (৩৪) চেয়েও বেশি।