গাজা অভিমুখী ত্রাণবাহী জাহাজ ‘হান্দালা’ আটক করেছে ইসরায়েল
Published: 27th, July 2025 GMT
গাজার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল মানবিক সহায়তাবাহী জাহাজ ‘হানদালা’। ছিলেন ২১ জন সাহসী আরোহী। এরপরই শনিবার রাতে গন্তব্যের প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে ‘ইসরায়েলি’ বাহিনী আটক করে জাহাজটিকে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এক ইউটিউব লাইভ স্ট্রিমে দেখা যায়, সশস্ত্র ‘ইসরায়েলি’ সেনারা জাহাজে উঠে পড়ছে। ওই সময় জাহাজের ডেকে থাকা সবাই লাইফ জ্যাকেট পরে দুহাত উঁচু করে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল। এর মধ্যে সেনাদের একজন ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দেয় এবং কিছুক্ষণ পরেই লাইভ সম্প্রচারটি বন্ধ হয়ে যায়।
লাইভ স্ট্রিম বন্ধ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই এই মিশনের আয়োজক ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন (এফএফসি) এক বিবৃতিতে জানায়, গাজায় সহায়তা পাঠানোর প্রচেষ্টায় থাকা হানডালা নৌযানটিকে ইসরাইলি বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় জোরপূর্বক আটক করেছে। প্যালেস্টাইনের জলসীমার বাইরে ইসরায়েলি বাহিনী এই অভিযানটি চালিয়েছে, যা আন্তর্জাতিক আইন ও নিয়মের বিরুদ্ধ।
আরো পড়ুন:
ক্ষুধায় কঙ্কালসার গাজার মানুষ ঢলে পড়ছে রাস্তায়
কয়েকদিন ধরে না খেয়ে আছে গাজার এক তৃতীয়াংশ মানুষ: ডব্লিউএফপি
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘হান্দালা’ নামের জাহাজটিতে শিশুখাদ্য, ডায়াপার, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ছিল, যা গাজার অবরুদ্ধ মানুষের জীবন বাঁচাতে পাঠানো হচ্ছিল। তাদের ভাষ্য, ইসরায়েলি বাহিনী শুধু ত্রাণসামগ্রী জব্দ করেই থামেনি, বরং জাহাজে থাকা আরোহীদেরও তুলে নিয়ে গেছে। জাহাজটিতে ১০টি দেশের ২১ জন আরোহী ছিলেন, যাদের মধ্যে ১৯ জন আন্তর্জাতিক অধিকারকর্মী এবং ২ জন আল–জাজিরার সাংবাদিক।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে জানায়, ইসরায়েলি নৌবাহিনী অবৈধভাবে গাজার উপকূলীয় জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। জাহাজটিকে নিরাপদে ইসরায়েলের উপকূলে আনা হচ্ছে। সব যাত্রী নিরাপদে রয়েছেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। এক বিবৃতিতে তারা এটিকে ‘জলদস্যুতা’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এর নিন্দা জানাতে আহ্বান জানিয়েছে। হামাস বলেছে, এই ধরনের হামলার জন্য আমরা নেতানিয়াহু সরকারকে সম্পূর্ণ দায়ী করছি। গাজায় অবরোধ না ওঠা পর্যন্ত ত্রাণবাহী জাহাজের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
অধিকারকর্মীদের সাহসিকতার প্রশংসা করে হামাস বলেছে, ইহুদিবাদীদের হুমকির মধ্যেও তাদের বার্তা গাজাবাসী ও সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে গেছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জাতিসংঘ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বিশ্বের নানা দেশের সরকার গাজায় ইসরায়েলের কারণে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় ক্ষুধার কারণে মৃত্যুর সাড়ি বেড়েই চলেছে। ত্রাণ সংগ্রহ করার সময় এখন পর্যন্ত ১,০০০-এর বেশি মানুষ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও মার্কিন ভাড়াটে বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছেন।
এদিকে রবিবার গাজার উত্তরাঞ্চলে স্বল্প পরিমাণে ত্রাণ বিমান থেকে ফেলে লোক দেখানো সহায়তা প্রদর্শনের চেষ্টা করেছে ইসরায়েল। এসময় ত্রাণের ব্যাগের আঘাতে ১১ জন আহত হয়েছেন। এটি ইসরায়েলের পরিকল্পিত হামলা বলেও মনে করা হচ্ছে। এই ধরনের ত্রাণ বিতরণকে অকার্যকর ও ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য প্রাণঘাতী বলে মন্তব্য করেছে জাতিসংঘ।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল জ হ জট ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।