সামাজিক কাজে জাতীয় স্বীকৃতি পেলেন চবি শিক্ষার্থী সানু
Published: 28th, July 2025 GMT
জেসিআই বাংলাদেশ উইমেন অব ইন্সপাইরেসন অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ এর ‘আনসাং উইমেন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী।
রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ পুরস্কার প্রদান করে তরুণদের আন্তর্জাতিক সংগঠন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) বাংলাদেশ।
সানু আক্তার নদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরের শালবন গ্রামে।
আরো পড়ুন:
চবির শাটল থেকে পাথরসহ ১৯ শিশু-কিশোর আটক
শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে চাইলে চবিতে যান: ছাত্রদল সম্পাদক
জেসিআই বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, ‘আনসাং উইমেন’ ক্যাটাগরি তাদের জন্য, যারা প্রচারের আলোয় নয়, বরং সমাজের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চবি থেকে প্রতিনিধিত্ব করা সানু আক্তার নদী তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এ বছর এ ক্যাটাগরিতে সারাদেশ থেকে নির্বাচিত তিনজন নারী নেতাদের মধ্যে সানু অন্যতম।
অনুভূতি জানিয়ে সানু আক্তার নদী বলেন, “জেসিআই বাংলাদেশে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মাঝে আমিই একমাত্র ছাত্রী ছিলাম, যে সমাজে বিশেষ করে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখার জন্য ‘আনসাং উইমেন’ বিভাগে চবির প্রতিনিধিত্ব করে গর্বের সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছি। এটা আমার প্রথম জাতীয় পুরস্কার, যা এখনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়।”
তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি কেবল একটি পুরস্কারের চেয়েও বেশি কিছু। এটি খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দুর্গম পাহাড় থেকেও স্বপ্ন দেখার সাহস পেলে কী সম্ভব, তার প্রতীক।”
তিনি আরো বলেন, “আমি এই পুরস্কারটি সেই সব মেয়েদের উৎসর্গ করছি, যারা নীরবে লড়াই করে, প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে এবং প্রমাণ করে। তুমি কোথা থেকে এসেছো তা নির্ধারণ করে না, বরং তুমি কতদূর যেতে পারো তা জানিয়ে দেয়।”
তার অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড.
তিনি বলেন, “দেশ ও সমাজের জন্য নীরবে কাজ করে তার এ অসামান্য অবদানে তাকে উষ্ণ অভিনন্দন। ভবিষ্যতে তার এ প্রচেষ্টা আরো বেগবান হোক।”
সানু আক্তার নদীর সবচেয়ে বড় অবদান শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে। তিনি ‘এক টাকায় শিক্ষা’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে অবহেলিত শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক, খাতা-কলম ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করে বিতরণ করেন।
এছাড়া তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছেন। ফলে নারী ক্ষমতায়ন ও তরুণ নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তিনি।
জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল-জেসিআই ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের একটি সংগঠন। ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির সেন্ট লুইসে অবস্থিত। জেসিআইয়ের ১২০টির বেশি দেশে কার্যক্রম রয়েছে। সারা বিশ্বে এর সদস্য সংখ্যা ২ লাখের বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে জেসিআইর ৪৪টি লোকাল চ্যাপ্টার কাজ করছে। তরুণদের দক্ষতা, জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এ সংগঠন।
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ক র র জন য ক জ কর জ স আই উইম ন অবদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
নীতি সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ, কী প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে
অবশেষে সুদের হার কমিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের পর এই প্রথম সুদহার কমাল ফেডারেল রিজার্ভ। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে দুর্বলতার লক্ষণ, আফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে উচ্চ বেকারত্ব, কর্মঘণ্টা কমে যাওয়া ও নতুন চাকরি সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় ফেড এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার ২৫ ভিত্তি পয়েন্ট কমিয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়ার পর ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল বলেন, অক্টোবর ও ডিসেম্বর মাসে সুদহার আরও কমতে পারে। তিনি বলেন, শ্রমবাজারের ক্রমবর্ধমান দুর্বলতা এখন তাঁর ও সহকর্মী নীতিনির্ধারকদের প্রধান উদ্বেগ। খবর রয়টার্স
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অনেক দিন ধরেই ব্যাপক হারে সুদ কমানোর দাবি তুলছিলেন। তাঁর বক্তব্য, এতে অর্থনীতি চাঙা হবে। তবে ফেডের এ সিদ্ধান্ত তাঁর প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ফেডের পর্ষদে নতুন গভর্নর স্টিফেন মিরান ছিলেন একমাত্র ভিন্নমতাবলম্বী। তিনি ৫০ ভিত্তি পয়েন্ট হারে সুদহার কমানোর পক্ষে ছিলেন। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বড় কাটছাঁটের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
সুদের হার নির্ধারণে রাজনৈতিক প্রভাবের প্রশ্ন সব সময়ই তোলা হয়। ট্রাম্প সম্প্রতি ফেডের এক গভর্নর লিসা কুককে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। যদিও কুক আদালতের লড়াইয়ে আপাতত নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন এবং বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের প্রধান মিরানকে ফেডের পর্ষদে বসান।
শ্রমবাজারে দুর্বলতাপাওয়েল বলেন, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্ব বাড়ছে, তরুণেরা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ছেন। সামগ্রিকভাবে চাকরি সৃষ্টির গতি খুবই কম। শ্রমবাজারকে আর দুর্বল হতে দেওয়া যাবে না।
পাওয়েল আরও সতর্ক করেন, নতুন চাকরির সংখ্যা এখন বেকারত্বের হার স্থিতিশীল রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সামান্য ছাঁটাইও বেকারত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে।
মূল্যস্ফীতি বনাম কর্মসংস্থানমূল্যস্ফীতি এখনো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। আশঙ্কা করা হচ্ছে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশে উঠবে, যেখানে ফেডের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ শতাংশ। কিন্তু ফেড মনে করছে, কর্মসংস্থানের ঝুঁকি এখন বেশি গুরুত্ব পাওয়ার মতো বিষয়।
ফেডের নতুন পূর্বাভাসে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বাড়িয়ে ১ দশমিক ৬ শতাংশ করা হতে পারে বলা হয়েছে। বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ৫ শতাংশেই স্থির থাকবে বলে তারা অনুমান করছে।
রাজনৈতিক টানাপোড়েনএ সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক নাটকও কম ছিল না। ট্রাম্পের হস্তক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা থাকলেও ফেডের পর্ষদের অন্য দুই ট্রাম্প-মনোনীত গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হয়েছেন। ওয়ালার বরাবরই শ্রমবাজারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলে আসছেন।
পাওয়েল অবশ্য পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির মূল বিষয় হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত। আজকের বৈঠকে সুদহার ব্যাপক হারে কমানোর বিষয়ে বিপুল সমর্থন ছিল না।’
বাজারের প্রতিক্রিয়াসুদহার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে প্রথমে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে ওঠানামা করে। শেষমেশ মিশ্র পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন শেষ হয়। ডলার কিছুটা শক্তিশালী হয়েছে ঠিক, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের সুদ প্রায় অপরিবর্তিত। বাজার এখন প্রায় নিশ্চিত, অক্টোবরের বৈঠকেও সুদ কমানো হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডের সাম্প্রতিক নীতি পরিবর্তনের মানে হলো তারা এখন ধীরে ধীরে ‘নিরপক্ষে’ অবস্থানের দিকে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি সাময়িকভাবে কিছুটা বাড়লেও ২০২৬ সালের মধ্যে স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নীতিসুদ কীকেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে এটি পরিচিত। অর্থনীতিতে নগদ তারল্যের জোগান দিতে বা অন্যভাবে বলতে গেলে ব্যাংকগুলোর জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সরবরাহ করতে মুদ্রানীতির এ হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। বিশ্বের সব দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ হাতিয়ার ব্যবহার করে।
কোভিডের পর রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। তখন ফেডারেল রিজার্ভ বাজারে মুদ্রার চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করতে দফায় দফায় নীতি সুদহার বৃদ্ধি করে। ফলে নীতি সুদহার গত দুই দশকের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ২৫ থেকে ৫ দশমিক ৫০ শতাংশে উঠে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সুদহারের প্রভাববিশ্ব অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতিসুদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে। ফেডের নীতিসুদের হার বাড়লে ট্রেজারি বন্ডের দাম কমে এবং সুদহার কমলে ট্রেজারি বন্ডের দাম বাড়ে। এর কারণ হলো বাজারে নতুন ও অধিক সুদের বন্ড আসার পর পুরোনো বন্ডের কুপন (সুদ) কম মনে হয়, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম কমে যায়। আবার যখন সুদের হার কমে, তখন নতুন বন্ডের কুপন কম হওয়ায় পুরোনো বন্ডের উচ্চ কুপনযুক্ত সুদ বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, ফলে পুরোনো বন্ডের দাম বেড়ে যায়।
নীতিসুদ কমলেও একই প্রক্রিয়া ঘটে, তবে বিপরীতভাবে। সুদের হার কমলে নতুন বন্ডের কুপনও কমে যায়। এতে আগের উচ্চ সুদের কুপনযুক্ত বন্ডগুলো বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বিনিয়োগকারীরা এই পুরোনো বন্ডগুলো কিনতে আগ্রহী হন, ফলে সেগুলোর দাম বেড়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা তখন তুলনামূলক ঝুঁকিপূর্ণ বাজারেও বিনিয়োগ আগ্রহী হন। এতে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগপ্রবাহ বাড়ে এবং ডলারের চাপ কিছুটা কমে।
সে কারণে বাজার নীতি সুদহারের দিকে তাকিয়ে থাকে, সুদ কমলে উন্নয়নশীল দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়।