জেসিআই বাংলাদেশ উইমেন অব ইন্সপাইরেসন অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ এর ‘আনসাং উইমেন’ ক্যাটাগরিতে পুরস্কৃত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী সানু আক্তার নদী।

রবিবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর একটি কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এ পুরস্কার প্রদান করে তরুণদের আন্তর্জাতিক সংগঠন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) বাংলাদেশ।

সানু আক্তার নদী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদরের শালবন গ্রামে।

আরো পড়ুন:

চবির শাটল থেকে পাথরসহ ১৯ শিশু-কিশোর আটক

শিবিরের সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখতে চাইলে চবিতে যান: ছাত্রদল সম্পাদক

জেসিআই বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, ‘আনসাং উইমেন’ ক্যাটাগরি তাদের জন্য, যারা প্রচারের আলোয় নয়, বরং সমাজের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। চবি থেকে প্রতিনিধিত্ব করা সানু আক্তার নদী তারই একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। এ বছর এ ক্যাটাগরিতে সারাদেশ থেকে নির্বাচিত তিনজন নারী নেতাদের মধ্যে সানু অন্যতম।

অনুভূতি জানিয়ে সানু আক্তার নদী বলেন, “জেসিআই বাংলাদেশে পুরস্কারপ্রাপ্তদের মাঝে আমিই একমাত্র ছাত্রী ছিলাম, যে সমাজে বিশেষ করে শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখার জন্য ‘আনসাং উইমেন’ বিভাগে চবির প্রতিনিধিত্ব করে গর্বের সঙ্গে পুরস্কৃত হয়েছি। এটা আমার প্রথম জাতীয় পুরস্কার, যা এখনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়।”

তিনি বলেন, “এই স্বীকৃতি কেবল একটি পুরস্কারের চেয়েও বেশি কিছু। এটি খাগড়াছড়ির সবচেয়ে দুর্গম পাহাড় থেকেও স্বপ্ন দেখার সাহস পেলে কী সম্ভব, তার প্রতীক।”

তিনি আরো বলেন, “আমি এই পুরস্কারটি সেই সব মেয়েদের উৎসর্গ করছি, যারা নীরবে লড়াই করে, প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে এবং প্রমাণ করে। তুমি কোথা থেকে এসেছো তা নির্ধারণ করে না, বরং তুমি কতদূর যেতে পারো তা জানিয়ে দেয়।”

তার অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা ড.

আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী জাতীয় পর্যায়ে পুরস্কার বয়ে এনেছেন, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। পাহাড়ের গহীন থেকে উঠে আসা এই ছাত্রী দেখিয়েছে- চাইলে যে কোনো জায়গা থেকে দেশের জন্য প্রতিনিধিত্ব করা যায়।”

তিনি বলেন, “দেশ ও সমাজের জন্য নীরবে কাজ করে তার এ অসামান্য অবদানে তাকে উষ্ণ অভিনন্দন। ভবিষ্যতে তার এ প্রচেষ্টা আরো বেগবান হোক।”

সানু আক্তার নদীর সবচেয়ে বড় অবদান শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে। তিনি ‘এক টাকায় শিক্ষা’ প্লাটফর্মের মাধ্যমে অবহেলিত শিশুদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি পাঠ্যপুস্তক, খাতা-কলম ও অন্যান্য উপকরণ সংগ্রহ করে বিতরণ করেন।

এছাড়া তিনি একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ করছেন। অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করছেন। ফলে নারী ক্ষমতায়ন ও তরুণ নেতৃত্বের এক উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তিনি।

জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল-জেসিআই ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সীদের একটি সংগঠন। ১৯১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির সেন্ট লুইসে অবস্থিত। জেসিআইয়ের ১২০টির বেশি দেশে কার্যক্রম রয়েছে। সারা বিশ্বে এর সদস্য সংখ্যা ২ লাখের বেশি। বাংলাদেশে বর্তমানে জেসিআইর ৪৪টি লোকাল চ্যাপ্টার কাজ করছে। তরুণদের দক্ষতা, জ্ঞান ও বুদ্ধির বিকাশের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে এ সংগঠন।

ঢাকা/মিজান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রস ক র র জন য ক জ কর জ স আই উইম ন অবদ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ