ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, এবার পাকিস্তানের কাছে হার
Published: 1st, August 2025 GMT
প্রতিপক্ষ বদলাল, ভেন্যু বদলাল, বদলাল দেশও; কিন্তু ভাগ্য বদলাল না। সম্প্রতি নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টেস্ট ও টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা ৮ ম্যাচ হারা ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবার যুক্তরাষ্ট্রে হারল পাকিস্তানের কাছে।
ফ্লোরিডার লডারহিলে তিন ম্যাচ টি–টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে আজ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান। সেন্ট্রাল ব্রোয়ার্ড রিজিওনাল পার্ক স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৭৮ রান করেছিল আগা সালমানের দল। জবাবে ক্যারিবীয়রা ৭ উইকেটে ১৬৪ রান করতে পেরেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হেরে যাওয়া পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দলে ফিরিয়েছে অভিজ্ঞ দুই পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফকে। আফ্রিদি ৪ ওভারে ২৭ রানে ১ উইকেট নিলেও রউফ ছিলেন খরুচে। ৪ ওভারে ৪১ রান দিয়ে থেকেছেন উইকেটশূন্য।
ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দী ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই ম্যাচ থেকে প্রাপ্তি বলতে যদি কিছু থেকে থাকে, সেটা টসে জয়! এর আগে ক্যারিবীয় অধিনায়কেরা টানা ৯ ম্যাচে টসে হেরেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের পাঁচ ম্যাচেই ‘মুদ্রা ভাগ্য’ শাই হোপের বিপক্ষে গেছে। সব ম্যাচেই তাঁর দলকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক মিচেল মার্শ।
অবশেষে শাই হোপ আজ টসে জিতে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠান পাকিস্তানকে। তবে তাঁর সিদ্ধান্তকে সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি বোলাররা। পাওয়ারপ্লেতে শুধু সাহিবজাদা ফারহানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলতে পেরেছেন শামার জোসেফ। এরপর অভিজ্ঞ ফখর জামানের সঙ্গে ৫১ বলে ৮১ রানের জুটি গড়েছেন আরেক ওপেনার সাইম আইয়ুব। শেষ দিকে ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ হারিসেরও ‘ক্যামিও’তে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় পাকিস্তান।
আইয়ুব পেয়েছেন টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ফিফটির। পরে বোলিংয়েও ঝলক দেখিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ম্যাচসেরার পুরস্কারটাও উঠেছে তাঁর হাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোরপাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৭৮/৬ (আইয়ুব ৫৭, ফখর ২৮, হাসান ২৪, ফাহিম ১৬*; শামার ৩/৩০, শেফার্ড ১/২৯, আকিল ১/৩১, হোল্ডার ১/৩৬)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৬৪/৭ (অ্যান্ড্রু ৩৫, চার্লস, হোল্ডার ৩০*, শামার ২১*; নেওয়াজ ৩/২৩, আইয়ুব ২/২০, মুকিম ১/২০, আফ্রিদি ১/২৭)।
ফল: পাকিস্তান রানে ১৪ জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: সাইম আইয়ুব।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।