রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে ৯৪ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ শিকার শুরু হয়েছে। ফলে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। জেলেরা জানিয়েছেন, হ্রদে পানির পরিমাণ বেশি থাকায় ছোট আকারের চাপিলা মাছ বেশি ধরা পড়ছে। বড় মাছ জালে ধরা পড়ছে না।

কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি এবং অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতিবছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ বন্ধ থাকে। হ্রদে পানি থাকায় গত কয়েক বছরের মধ্যে এবারই তিন মাস পর নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হত।

রবিবার (৩ আগস্ট) ভোর থেকেই আহরণকৃত মাছ নিয়ে রাঙামাটির জেলার সর্ববৃহৎ অবতরণ কেন্দ্র ফিসারি ঘাটে ফিরতে শুরু করেন জেলেরা। এসময় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের হাঁকডাকে মুখর হয়ে ওঠে পল্টুন।

আরো পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু ২ আগস্ট মধ্যরাতে 

নদীতে বড়শিতে ধরা পড়ল ১১ কেজির পাঙ্গাশ

মাছ আহরণ নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় থেকে কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় মাছের আকার বড় হওয়ার আশাবাদ থাকলেও প্রথমদিনের মাছের আকারে হতাশ জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, প্রথমদিন প্রত্যাশিত কাচকি মাছ পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র চাপিলা পাওয়া গেলেও সেগুলো সাইজে অনেক ছোট। কার্প জাতীয় অন্যান্য মাছ তেমন একটা জালে ধরা পড়েনি।

জেলে রহিম মিয়া বলেন, “হ্রদে প্রচুর পানি। স্রোত থাকায় জাল টানা যাচ্ছে না। পানি স্থির না হওয়া পর্যন্ত জালে মাছ আসবে কম। তবুও দীর্ঘ দিন পর জাল নিয়ে হ্রদে নামতে পারায় আমরা সবাই খুশি।” 

তিনি আরো বলেন, “মাছ ধরা বন্ধ থাকা দিনগুলোতে আমরা বেকার সময় কাটিয়েছি। পরিবার নিয়ে কষ্টে ছিলাম। আশা করছি, জালে মাছ আসবে। আমাদের কষ্ট দূর হবে।”

অপর জেলে সালাউদ্দিন বলেন, “হ্রদের কয়েক জায়গায় জাল ফেলেছি। ৩০০ কেজির মতো মাছ পেয়েছি। সবগুলো চাপিলা পোনা। কাচকি ও বড় মাছ খুব একটা পাইনি।”

কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো.

আব্দুর শুক্কুর বলেন, “মাছের কালেকশন ভালো, তবে সাইজে ছোট। মাছ আহরণ বন্ধের শুরু থেকে হ্রদে বৃষ্টি থাকায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পায়নি। একটু রোদ পড়লেই মাছ বড় হয়ে যাবে। আশা করছি এবছর ভালো ব্যবসা হবে।”

কাপ্তাই হ্রদ বৃহত্তর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কবির আহমেদ বলেন, “যা মাছ এসেছে, সব চাপিলা ছোট মাছ। এগুলো ঢাকাতে দাম পাই না। এছাড়া চাপিলাতে প্রতি কেজি রাজস্ব দিতে হয় ২১.৫০ টাকা। ঢাকা পৌঁছাতে আরো খরচ হয় কেজি প্রতি ৬০ টাকা। অর্থাৎ ঢাকা যখন পৌঁছায় তখন এর খরচ পড়ে ৮০ টাকা। এখন কত টাকা বিক্রি করবো, আর জেলেদের কত টাকা দিবো? সরকার যদি চাপিলাতে রাজস্ব কমিয়ে ১০ টাকা করে, তবে জেলেরা কিছু টাকা পেতো। প্রয়োজনে কাচকিতে ২ টাকা বাড়তি রাজস্ব নিক।”

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেন, “গত বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে সাত হাজার মেট্রিক টন। আমরা ৯ হাজার মেট্রিক টন মাছ আহরণ করেছি। এবছর আশা করছি, গত বছরের ন্যায় মাছ পাব। প্রথম দিন মাছের সাইজ একটু ছোট হলেও আশা করছি, সময় গেলে সমস্যা আর থাকবে না।”

ঢাকা/শংকর/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ছ আহরণ ব যবস য় মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে

তিন মাস দুই দিন পর কাপ্তাই হ্রদে শুরু হচ্ছে মৎস্য আহরণ। শনিবার (২ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা। 

কাপ্তাই হ্রদে পর্যাপ্ত পানি থাকায় কয়েক বছরের মধ্যে এবার নির্দিষ্ট সময়ে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে জেলা প্রশাসন। অন্যান্য বছর ২-৩ দফা সময় বাড়িয়ে প্রায় চার মাস পর মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতো। কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, প্রজনন এবং অবমুক্ত করা মাছের বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর তিন মাস কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দেয় জেলা প্রশাসন।

এদিকে, মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর শুধু জেলে পাড়া নয়, কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে জেলার সবচেয়ে বড় মৎস্য অবতরণকেন্দ্র বিএফডিসি ঘাট। মাছ পরিবহন ও সংরক্ষণের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে ড্রাম, বরফ ভাঙার মেশিন। দীর্ঘ ৯২ দিনের কর্মহীন জীবনের অবসান ঘটাতে প্রহর গুনছেন জেলেরা। ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সেরে রেখেছেন ব্যবসায়ী ও বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)। 

বিএফডিসি সূত্র বলছে, কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য ১ মে থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। এ সময়ে হ্রদে প্রায় ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন প্রায় ২৬ হাজার জেলে। 

রাঙামাটির শহরের পুরান পাড়া জেলা পল্লীর বাসিন্দা নেপাল দাশ জানিয়েছেন, মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞাকালে যে সরকারি সহায়তা পাওয়া যায়, তাতে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। দীর্ঘ তিন মাস পর মাছ ধরতে নামতে পারব, এতে খুশি আমরা। 

নতুন পাড়ার জেলে অমর কান্তি দাশ বলেছেন, হ্রদে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় মাছগুলো বড় হওয়ার সুযোগ পাবে। তবে, পানিতে ঢেউ থাকায় শুরুতে বেশি মাছ পাওয়া যাবে না। পানি কিছু কমে আসলে ও স্থির হলে ভালো মাছ পাব, আশা করি। হ্রদে নামার জন্য যা যা প্রস্তুতি, সবকিছু শেষ করেছি। জাল ও নৌকা মেরামত করা হয়েছে। এখন শুধু লেকে নামার অপেক্ষা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি উদয়ন বড়ুয়া বলেছেন, এবার নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টির ফলে কাপ্তাই হ্রদে যথেষ্ট পানি থাকায় মাছ প্রথম থেকেই প্রজনন এবং বড় হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। আশা করছি, এবার পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা সব প্রস্ততি নিয়েছেন। রবিবার সকাল থেকে বিএফডিসি ঘাটে মাছ আসবে।

বিএফডিসির রাঙামাটি অঞ্চলের ব্যবস্থাপক কমান্ডার মো. ফয়েজ আল করিম বলেছেন, নিষেধাজ্ঞাকালীন আমাদের উপকেন্দ্রগুলোর যেসব অবকাঠামো সংস্কারের প্রয়োজন ছিল, সেসব আমরা শেষ করেছি। অন্যান্য যেসব প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, সেসবও শেষ হয়েছে। আশা করছি, গত বছরের মতো এবছরও ভালো মাছ পাওয়া যাবে।

ঢাকা/শংকর/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণ শুরু হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে